ড্রেসিংরুমে সেরা ফিল্ডারকে ‘মেডেল’ দিয়ে পুরস্কৃত
Published: 5th, May 2025 GMT
ঘটা করে ভারতীয় ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং কোচ টি দিলিপ দলের সেরা ফিল্ডারকে পুরস্কৃত করেন। ড্রেসিংরুমে দলের বৈঠক শেষে আনন্দময় পরিবেশে সব ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে এই পুরস্কার, মেডেল গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়। মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর মূল্যায়ন করে দেওয়া হয় এই মেডেল। আইসিসি ইভেন্টে প্রতি ম্যাচ শেষে এবং দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সিরিজ শেষে এই পুরস্কার দেয় বিসিসিআই।
বাংলাদেশেও এই রীতি চালু করলো ‘এ’ দল। সোমবার (০৫ মে) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ‘এ’ দল নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে। আনঅফিসিয়াল ম্যাচটি জিতেছে ৭ উইকেটে। নিউ জিল্যান্ড আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায়। পরবর্তীতে অতি সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় কাজী নুরুল হাসান সোহানের দল। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে সেরা ফিল্ডারকে বেছে নেন ফিল্ডিং কোচ আশিকুর রহমান।
একটি স্টাম্পিং ও চারটি ক্যাচ নিয়ে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান হয়েছেন ফিল্ডার অব দ্য ডে। তাকে মেডেল পরিয়ে দেন কোচ আশিকুর রহমান। সেরা ফিল্ডারকে পুরস্কৃত করার ভাবনা জানাতে গিয়ে আশিকুর রহমান ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘ফিল্ডিংয়ে আজ আমাদের খুব পজিটিভ বডি লেঙ্গুয়েজ ছিল। মাঠে আমাদের ব্যস্ততা, নড়াচড়া অসাধারণ ছিল। বিশেষ করে পুরো দল একসঙ্গে উইকেট পাওয়ার জন্য যেভাবে আপিল করেছে সেটা দারুণ ছিল। সঠিক জায়গায় আমাদের সঠিক ফিল্ডারকে রাখতে পেরেছি সেটাও আমাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল। বোলার বল করার পরই ফিল্ডারদের দায়িত্ব পরের লড়াইটা করার। প্রত্যেকের আজকের অংশগ্রহণ ভালো ছিল। যেটা একটা দলের প্রয়োজন হয়।’’
আরো পড়ুন:
গলে-কলম্বোয় দুই টেস্ট বাংলাদেশের, এক মাসের সফরসূচি প্রকাশ
আইসিসির মাস সেরার লড়াইয়ে প্রথমবার মিরাজ
সোহানের গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়ার পর পুরো দল একসঙ্গে চিৎকার করে উল্লাসে ফেটে পড়ে।
কোচ আশিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি একজন ফিল্ডার দলের অন্তঃপ্রাণ। বোলার ভালো বল করলো, ফিল্ডার জন্য নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে না পারে তাহলে দলীয় সাফল্য আসবে না। ক্রিকেট এজন্যই গ্রেট গেম। যেখানে সবার সম্পৃক্ততা থাকতে হয়। একজন এখানে নায়ক নন। ফিল্ডারদের উদ্ধুদ্ধ করতে, মাঠে সম্পৃক্ততা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি সামনেও তা অব্যাহত থাকবে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র প রস ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে
রংপুরে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের নিদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন রংপুর নগরের হাজিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মসূচি বানচাল, প্রয়োজনে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হত্যা করাসহ আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। রংপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের উল্লেখিত নেতা–কর্মীরা গত বছরের ২ আগস্ট তাঁর স্বামী ছমেস উদ্দিনকে বাড়ি–সংলগ্ন মুদিদোকাানের সামনে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁকে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে ছমেস উদ্দিনের কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’
মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গতকাল দুপুরে শিক্ষক মাহমুদুল হককে আটক করে মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার পুলিশ। বিকেলে তাঁকে আদালতে তোলা হয় এবং বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি (ছমেস উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন। আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দুজন—একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আমি তাঁদের নাম এখন বলব না। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’
মামলার এজাহারে দেওয়া আমিনা বেগমের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন তাঁর ছেলে আশিকুর রহমান। আশিকুর বলেন, তাঁর বাবা ২ আগস্ট মারা গেছেন। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তবে যতটুকু শুনেছেন, ওই দিন প্রশাসনের কিছু লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু লোক ছিলেন।
আশিকুর বলেন, ‘আব্বু মুদিদোকান করেন। পুলিশ দেখে উনি দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ওখানে আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন, প্রশাসনের লোক ছিলেন, তাঁরা পেছন থেকে ধাওয়া দেন। ওখানেই উনি পড়ে যান। তারপর কী হয়েছে, কী হয় নাই, আমি বলতে পারি না।’ মামলার আসামি মাহমুদুল হককে চেনেন কি না জানতে চাইলে আশিকুর বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী।
রাধাকৃষ্ণপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক আমির নাছির উদ্দিনের বাড়ি রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ায়। বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর বাড়িতে যান সাদাপোশাকের ৯ পুলিশ সদস্য। তিনি তথ্য পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় মুদিদোকানি ছমেস উদ্দিন ভয়ে পালানোর চেষ্টা করেন এবং হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এ সম্পর্কে নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন ২ আগস্ট নয়; ২ জুলাই ছিল। তিনটি মোটরসাইকেলে সাদাপোশাকে ৯ পুলিশ সদস্য আমার বাড়ির দিকে আসেন। আগেভাগে জানতে পেরে আমি বাড়ি ছাড়ি। পরে রাতে জানতে পারি, ছমেস পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। মূলত এটা (মামলা) সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো নাটক। ছমেস উদ্দিন হার্টের রোগী ছিলেন। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে ঢাকায় তাঁর রিং লাগিয়ে আনা হয়েছিল।’
রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরে ছমেস উদ্দিনের কবর। ১৩ জুন তোলা