দেশের খাদ্যবাজার মূলত কৃষি উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ খাতে অবকাঠমোয় ও বিনিয়োগে দুর্বলতা রয়েছে; আছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও। সে জন্য খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা উন্নত করতে এ খাতে সুবিধা বাড়ানো ও ব্যবসায়ের ব্যয় কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্যানেল আলোচক ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামাল; কাজী ফার্মসের এমডি কাজী জাহেদুল হাসান; মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান; এসিআই লজিস্টিকসের (স্বপ্ন) এমডি সাব্বির হাসান নাসির; কোয়ালিটি ফিডসের পরিচালক এম সাফির রহমান; স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

অনুষ্ঠানে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে বা অন্য সংকট হলে ব্যবসায়ীদের চাপাচাপি না করার অনুরোধ জানান মেঘনা গ্রুপের (এমজিআই) চেয়ারম্যান ও এমডি মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সরকার অনেক সময় অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই অনেক সিদ্ধান্ত নেয়। এটা আমাদের একটা দুর্ভাগ্য। সরকারের উচিত সব পক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি।’

মোস্তফা কামাল আরও বলেন, এখনো সরকারের অনেক দপ্তরের কাজে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এসব সমস্যা কাটেনি। ব্যবসা সহজ না করলে, উদ্যোক্তাদের সহায়তা না দিলে সরবরাহশৃঙ্খল উন্নত হবে না; বাজারেও স্থিতিশীলতা আসবে না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের খাদ্যবাজার মূলত কৃষি উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে খাদ্যমূল্যের অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংকট। এসব ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করতে পারে। তবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর পক্ষে এখন কৃষি খাতে চাহিদামতো ঋণ দেওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হিমাগার নির্মাণ করার কথা জানিয়েছে। আমরা চাই, এ কথা শুধু মুখে না থেকে যেন বাস্তবায়িত হয়।’ এ ছাড়া কৃষক যেন পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, সেটিও নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এসিআই লজিস্টিকসের (স্বপ্ন) এমডি সাব্বির হাসান নাসির বলেন, সরবরাহশৃঙ্খলের অটোমেশন, স্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ সবচেয়ে জরুরি। কারণ, বিশৃঙ্খল খাতে পণ্যের মজুতদারি ও দামে অস্থিরতা বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে ন্যাশনাল বাফার পলিসি তৈরির মাধ্যমে একটা ভালো সমাধান হতে পারে। সাব্বির হাসান জানান, বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন-পরবর্তী অপচয় হয় ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। অথচ চীনে এটি ৫ শতাংশের কম আর ভিয়েতনামে ৫-৬ শতাংশ। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন ও সংগ্রহ করে এ অপচয় কমানো সম্ভব।

কোয়ালিটি ফিডসের পরিচালক এম সাফির রহমান বলেন, পণ্যের দামের পাশাপাশি পুষ্টিনিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অবৈধ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কাঁচামাল যেন খাদ্য উপকরণ (ফিড) তৈরিতে ব্যবহৃত না হয়, সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশের খাদ্যবাজার মূলত কৃষি উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে খাদ্যমূল্যের অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংকট। এসব ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করতে পারেসৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এমডি, এমটিবি

‘পোলট্রি খাতে সিন্ডিকেট নেই’

পোলট্রি খাতে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে দাবি করেন কাজী ফার্মসের এমডি কাজী জাহেদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে এ খাতে ব্যবসা করছি, কিন্তু সিন্ডিকেট আছে, এমন কোনো কিছুর অস্তিত্ব আমরা কখনো দেখিনি, শুনিনি। এ বিষয়ে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। যদিও মানুষ এটি নিয়ে সাধারণত বিপরীত ধারণাই পোষণ করেন।’

কাজী জাহেদুল হাসান আরও বলেন, ‘সরকার এর আগে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ওই দাম নির্ধারণের পর ডিম ও মুরগি উৎপাদকদের উৎসাহ অনেক কমে যায়, নতুন বিনিয়োগও অনেক কম হয়। এখন আলোচনা হচ্ছে, পোলট্রির যে অন্য দুই খাত—খাদ্য (ফিড) ও মুরগির বাচ্চার দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে বলতে চাই, দাম নির্ধারণের এমন নীতি এ খাতের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। বরং দাম বাজারের ওপরে ছেড়ে দিলে সরবরাহ বাড়বে এবং দামেও স্থিতিশীলতা অবস্থায় আসবে।’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সিওও পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, সরবরাহশৃঙ্খলে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের আরও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের কারণে বারবার হাত বদলে পণ্যের দাম বাড়ে। এতে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পান না, আবার ভোক্তাদেরও বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎপাদন এলাকায় ছোট ছোট হিমাগার তৈরি করা গেলে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

সরকারি তথ্য ফ্যাসাদ তৈরি করছে

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সঠিক সরকারি পরিসংখ্যান বা তথ্য-উপাত্ত না থাকায় অধিকাংশ সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদই এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছেন। তবে এসব পরিসংখ্যান একমাত্র মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করা ছাড়া আর কোনো কিছু করে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যানগুলোকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করি। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলো খুবই বিভ্রান্তিকর হয়। এগুলোর সংস্কার করা প্রয়োজন। সরকারি পরিসংখ্যানের শুদ্ধি অসম্ভব প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি।’

বিগত সময়ের সরকারগুলো ব্যয়ের মহোৎসব করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য সরবরাহশৃঙ্খল উন্নত করা ও এ খাতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা কীভাবে করবে। কারণ, সরকার তো পূর্বে ব্যয়ের মহোৎসব করেছে। এর মাধ্যমে তারা নাগরিকদের ওপর চূড়ান্ত দায় তৈরি করে গেছে।

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ‘সরকারি ক্রয় কমিটিতে বিভিন্ন ধরনের (অতীতের) প্রকল্পের রেফারেন্স দেখি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ব্যয়ের ফিরিস্তি দেখি। তাতে মনে হয়েছে (অতীতে) যে কোনো একটা খাত সৃষ্টি করে খরচ করতে পারাটাই একধরনের কৃতিত্ব মনে করা হয়েছিল একসময়। এটাই যোগ্যতার নিয়ামক ছিল যে কে কত খরচ করতে পারে। কতভাবে দায় তৈরি করা যায় দেশের ওপরে, নাগরিকদের ওপরে, সেটিই করা হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স খ য ন র রহম ন ব যবস থ ব যবস য় সরবর হ ন বল ন র জন য উৎপ দ সরক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

৭০ শতাংশ নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন সামগ্রীর ৭০ শতাংশ কেনাকাটা এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

সিনিয়র সচিব জানান, মার্কিং সিল, গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, হেসিয়ান ব্যাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামগ্রী এরইমধ্যে ইসির গুদামে পৌঁছেছে। চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট সামগ্রী সরবরাহ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”

তিনি বলেন, “প্রায় ৭০ শতাংশ কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে অবশিষ্ট কেনাকাটাও শেষ হবে। চাহিদা অনুযায়ী সব সামগ্রী সময়মতো পৌঁছে যাবে।”

তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী— স্ট্যাম্প প্যাড ও অমোচনীয় কালি সরবরাহ করা হবে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই সামগ্রী হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউএনডিপি। এর একটি অংশ চলতি মাসেই আসবে এবং বাকিটা আগামী মাসে।

তিনি বলেন, “স্থানীয় বাজার থেকে আট ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, হেসিয়ান বড় ব্যাগ, হেসিয়ান ছোট ব্যাগ ও গানি ব্যাগ।

সচিব আশ্বস্ত করে বলেন, “নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলাম, সেই সময়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ে সব নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে।”

ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে থাকবে- ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিল, কালি ও ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ।

সচিব বলেন, “সময়মতো সামগ্রী পৌঁছানো গেলে নির্বাচন পরিচালনায় কোনো ধরনের বাধা তৈরি হবে না। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

ঢাকা/এএএম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৭০ শতাংশ নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন
  • যেসব এলাকায় শুক্রবার রাতে ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’