খালেদা জিয়া ফিরছেন সকালে, পতাকা হাতে সড়কে স্বাগত জানাবেন নেতাকর্মীরা
Published: 6th, May 2025 GMT
চিকিৎসা শেষে চার মাস পর দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সোমবার তিনি লন্ডন থেকে রওনা হন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণের কথা রয়েছে।
এর আগে লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে হিথরো বিমানবন্দরে যান। একই গাড়িতে দাদির পেছনে বসা ছিলেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। সেখানে আগে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই পুত্রবধূ ডা.
জোবাইদা রহমান দেশের মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি থাকায় জোবাইদাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। তবে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ এবং ধানমন্ডিতে জোবাইদা রহমানের বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবন’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল ও গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।
যাত্রা শুরুর আগে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, হিথরো বিমানবন্দর থেকে কাতার আমিরের দেওয়া অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমরা রওনা হচ্ছি। দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি আছে। খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে কেমন আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, তিনি আগের চেয়ে ভালো।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া মানে বাংলাদেশ। তিনি আমাদের মাঝে ফিরছেন। তাঁর সঙ্গে আসছেন ১৭ বছরের নির্বাসিত ডা. জোবাইদা রহমান, আসছেন সৈয়দা শর্মিলা রহমানও। এটা দেশের মানুষের জন্য বাড়তি আনন্দ।
নেতাকর্মীকে সড়কে না দাঁড়ানোর নির্দেশ
নেতাকর্মীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষা আছে। যেহেতু শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কাকলী হয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় যাবেন, তাই সবাইকে অনুরোধ করব, রাস্তার ওপর যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন, তারা ফুটপাতে থাকবেন। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা রাস্তায় যেন কাউকে দাঁড়াতে না দেন।
‘ফিরোজা’ প্রস্তুত
খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের ভাড়া বাসায় যাবেন। গুলশানের ৮০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ির নাম ‘ফিরোজা’। গতকাল সোমবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে দেয়াল ঘেরা, সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য কক্ষ। পর্যায়ক্রমে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। বাসার সব কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা– সবই করা হয়েছে।
প্রস্তুত ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’
দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন ডা. জোবাইদা রহমান। দেশে ফিরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাবার বাসা মাহবুব ভবনে উঠবেন। সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় কারাবন্দি থাকা অবস্থায় নির্যাতনে তারেক রহমান গুরুতর আহত হন। পরে নানা মহলের চাপে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। সঙ্গে যান স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমান। এরপর থেকে লন্ডনে নির্বাসিত তারা।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ডা. জোবাইদার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির চারপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকবেন সিএসএফ সদস্য, সঙ্গে থাকবেন পুলিশ সদস্যরাও।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার গত ৩০ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই চিঠিতে গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় আর্চওয়ে ও পুলিশ পাহারার দাবি জানানো হয়। এর পরপরই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা মাহবুব ভবন পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেন। এখন ওই ভবনে বাস করছেন জোবাইদার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, বড় বোন শাহীনা জামান ও তাঁর পরিবার।
ডিএমপির নির্দেশনা
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান না করে ফুটপাতে দাঁড়াতে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সময় ব্যাগ ও লাঠি বহন করা যাবে না। দলীয় নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করে এ বিষয়ে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট গতিসীমা ও লেন মেনে মোটরসাইকেল চলতে পারবে। টঙ্গী ও তেজগাঁও স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ২ মিনিট করে থামবে। কমলাপুর-টঙ্গী রুটে চলবে অতিরিক্ত শাটল ট্রেন। হজযাত্রী, বিদেশগামী যাত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হালকা যানবাহনের জন্য জিয়া কলোনি-জাহাঙ্গীর গেট-সৈনিক ক্লাব-স্টাফ রোড খোলা থাকবে।
কামারপাড়া-ধউর ব্রিজ-পঞ্চবটী-মিরপুর বেড়িবাঁধ-গাবতলী রুট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হাউজ বিল্ডিং-জমজম টাওয়ার-মেট্রোরেল উত্তর স্টেশন-মিরপুর ডিওএইচএস, গুলশান-১/পুলিশ প্লাজা-মহাখালী র্যাম্প হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে, মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ/টাঙ্গাইলগামী যানবাহনের জন্য গাবতলী রুট, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য বনানী-কাকলী র্যাম্পের বদলে মহাখালী/এফডিসি র্যাম্প ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডন যান। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ দিন চিকিৎসার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে ২৫ জানুয়ারি তাঁকে তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ অন র ধ জ ন ন ত র ক রহম ন ন ত কর ম রহম ন র ব এনপ র র সদস য র জন য ধ নমন
এছাড়াও পড়ুন:
কাঙ্ক্ষিত লুকে দেখা দিলেন শাহরুখ
মেট গালার ব্লু কার্পেটে অভিষেকের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত লুকে দেখা দিলেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। গতকাল (৫ মে) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে অনুষ্ঠিত মেট গালার গালিচায় রাজকীয় রূপে হাজির হন ‘পাঠান’ তারকা।
ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির তৈরি পোশাক পরে দেখা দেন শাহরুখ। এ ডিজাইনার শাহরুখের বেশ কিছু ছবি নিজের ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যায়, কালো রঙের লম্বা কোট পরে, হাতে লাঠি নিয়ে আইকনিক পোজ দেন এই তারকা। এ লুকে প্রিয় তারকাকে দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা।
শাহরুখ খানের পোশাকের বিস্তারিত জানিয়েছেন সব্যসাচী মুখার্জি। তিনি জানান, শাহরুখ খান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কালো রঙের লম্বা কোট পরেছিলেন। এটি তাসমানিয়ার চমৎকার ওল দিয়ে তৈরি। তাতে মনোগ্রাম করা এবং জাপানিজ বাটন ব্যবহার করা হয়েছে। পোশাকটি হাতে তৈরি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মেট গালার লাল গালিচায় হাঁটবেন শাহরুখ, উড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অভিনেতাদের তালিকায় শাহরুখ
পোশাকটির বুকের অংশে ভি-কাট, পিক কলার এবং প্রশস্ত ল্যাপেল রয়েছে। ক্রেপ ডি চীন সিল্ক শার্ট এবং চমৎকার ওলের তৈরি ট্রাউজার দর্জি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। একটি প্লিটেড সাটিন কোমরবান্ধা শাহরুখের বিশেষ লুকটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। তাছাড়া এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮ ক্যারেটের সোনা ও হীরা।
মেট গালার গালিচায় হাজির হয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমে শাহরুখ খান বলেন, “আমি ইতিহাস তৈরির কথা জানি না, তবে অত্যন্ত নার্ভাস এবং উচ্ছ্বসিত। আমার ডিজাইনার সব্যসাচী আমাকে এখানে আসতে রাজি করিয়েছেন। আমি খুব বেশি লাল গালিচায় হাঁটিনি, আমি খুব লাজুক। আমার জন্য এটি প্রথম, তবে অসাধারণ!”
সব্যসাচীকে উদ্দেশ্য করে শাহরুখ খান বলেন, “সব্যকে বলেছিলাম, আমি কেবল কালো এবং সাদা রঙের পোশাক পরি। কিন্তু তিনি আমার জন্য যা ডিজাইন করেছেন, যে পোশাকে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার মনে হয়, এমনই হওয়া উচিত।”
মেট গালায় যোগ দিতে শাহরুখকে উৎসাহিত করে তার সন্তানেরা। এ তথ্য উল্লেখ করে ‘জওয়ান’ তারকা বলেন, “আমার ছোট বাচ্চারা মেট গালা নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। আমি জানি না, এখানে আসতাম কিনা। কিন্তু সব্য যখন এতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল, তখন তারা (বাচ্চারা) বলেছিল, ‘বাহ!”
ঢাকা/শান্ত