ডিম্বাশয় ক্যানসার: প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে বেঁচে থাকার হার ৮৮ শতাংশ
Published: 6th, May 2025 GMT
কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলেই ডিম্বাশয়ে ক্যানসার সৃষ্টি হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যেই এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প বয়সী নারীদেরও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হতে পারে। এই ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে রোগীর বেঁচে থাকার হার ৮৮ শতাংশ।
ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এসকেএফ অনকোলজির নিয়মিত আয়োজন ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠানটি গতকাল সোমবার সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় এ আলোচনায় অতিথি ছিলেন মেডিনোভা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড অনকোলজি সেন্টার, বগুড়ার ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা.
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থাপক জানান, ‘বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ ক্যানসার হলো ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসার। আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রাই মূলত এর প্রধান কারণ। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ৮৭ জন নারীর মধ্যে ১ জনের ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এর হার ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শনাক্ত করা গেলে এই ক্যানসারে বেঁচে থাকার হার ৮৮ শতাংশ।
এরপর তিনি অতিথির কাছে জানতে চান, ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি কাদের সবচেয়ে বেশি?
উত্তরে ডা. শাকেরা সুলতানা বলেন, ‘নারীদের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ হলো ডিম্বাশয়। এই ডিম্বাশয় থেকেই ডিম্বাণু তৈরি হয়। এ ছাড়া এখান থেকে বিভিন্ন হরমোন নিঃসৃত হয়। এখানে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলেই ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সৃষ্টি হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যেই মূলত এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প বয়সী নারীদেরও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে যাঁদের বাচ্চা হতে দেরি হয় বা বাচ্চা হয় না, তাঁদের ডিম্বাশয়ে সমস্যা হয়ে থাকে। পাশাপাশি যাঁদের পরিবারে কারও ওভারি, ব্রেস্ট কিংবা কোলন ক্যানসার রয়েছে, তাঁদেরও ডিম্বাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।’
ওভারিয়ান ক্যানসারের উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডা. শাকেরা সুলতানা বলেন, ‘ডিম্বাশয় ক্যানসারের খুব বেশি উপসর্গ প্রকাশ পায় না বললেই চলে। যার কারণে এই ক্যানসারের শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়। তবে অনিয়মিত মাসিক, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, দুর্বলতা, তলপেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।’
ক্যানসারের স্ক্রিনিং ও ডায়াগনসিসের মধ্যে পার্থক্য কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. শাকেরা সুলতানা বলেন, ‘স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসারের লক্ষণ আছে কি না, তা জানা যায় আর ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে যায় এবং সেই লক্ষণগুলো দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়।’
ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে যেমন সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন করা যায়, ডিম্বাশয় ক্যানসারের ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু রয়েছে কি না? এ প্রসঙ্গে ডা. শাকেরা সুলতানা বলেন, ‘ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন প্রক্রিয়া থাকলেও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়া নেই। ডিম্বাশয় ক্যানসারের ক্ষেত্রে ব্লাড টেস্ট ও আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়। কারও পরিবারে মা, বোন বা ফুফু—এমন কারও ক্যানসার থাকলে ৩০ বছরের পর থেকেই স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশে ডিম্বাশয় ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ডায়াগনসিস, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. শাকেরা সুলতানা (ডানে)উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শার্ট ও ক্যাপ পরিয়ে বান্ধবীকে হলে নিয়ে রাত্রিযাপন রাবি ছাত্রের
শার্ট ও ক্যাপ পরিয়ে বান্ধবীকে হলে নিয়ে রাত্রিযাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিববুর রহমান হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী।
গত ৪ জুন হলের ১৫৩ নম্বর কক্ষে বান্ধবীকে নিয়ে রাত কাটান মো. নাজমুল ইসলাম। ঘটনাটি নিয়ে কয়েকদিন কানাঘোষা হচ্ছিল। হল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি আলোচনা উঠে এসেছে।
আরো পড়ুন:
নতুন বাজারে সড়ক অবরোধ করে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গোবিপ্রবির হলে হলে ফ্যান, খুশি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম; তার বাড়ি মাদারীপুর।
নাজমুলের বান্ধবীও একই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী দুজন ছাত্রের ভাষ্য, তারা ৪ জুন ভোরে বাড়ি ফেরার জন্য সবকিছু গুছিয়ে হলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ছেলে সাইকেল চালিয়ে তাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তার সাইকেলের পেছনে একটি মেয়ে বসা ছিল, মেয়েটির গায়ে স্কুলের শার্ট আর মাথায় ক্যাপ ছিল।
তারা বলেন, বিষয়টি তাদের চোখে অস্বাভাবিক ঠেকায় তারা তাকে ধরার চেষ্টা করেন কিন্তু সাইকেলের গতি এত বেশি ছিল যে পিছু নিলেও ধরতে পারেননি। এমনকি দারোয়ানও তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম নারী শিক্ষার্থীকে হলের রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “গত তিন তারিখে (৩ জুন) আমার জন্মদিন ছিল। সেদিন কেক কেটে রাত হয়ে যায়। এদিকে ওর (সাদিয়া) মেস থেকে তিন তারিখের মধ্যে চলে যেতে বলে। ও মেসে যেতে পারবে না বলে আমাকে অনুরোধ করে রাখার জন্য। পরে আমি ওকে রাতে হলে নিয়ে আসি।”
“মূলত আমি ওকে শেল্টার দেওয়ার জন্য রাখি। পরে সকালে চলে যায়। তখন কেউ হয়তো আমাদের দেখে। এ বিষয়ে প্রোভোস্ট স্যার আমাকে ডেকেছিল। আমি তাকে বিষয়টি খুলে বলি। তিনি আমাকে হল থেকে বহিষ্কার করেন। বিষয়টি জানাজানি হবে না বলে আমাকে জানান প্রক্টর স্যার,” যোগ করেন নাজমুল।
নাজমুল ইসলাম।
হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছন, হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দৃষ্টিতে এটি একটি ভয়াবহ অপরাধ, এত বড় সাহস হয় কীভাবে?
তারা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এবং ওই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে হলের শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষ, গেটম্যান ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি রেখে বলেছেন, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন গর্হিত কাজ কীভাবে ঘটল, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।
হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. মোতাহার হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে আমি অবগত আছি এবং ঘটনাটিও সত্য। হল প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তার সিট বাতিল করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি তার বিরুদ্ধে বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, “এটা অবশ্যই সাংঘাতিক একটি ঘটনা। এমন ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে, সেটা অনেক বড় অপরাধ। আমরা খোঁজ নিব, বিষয়টি সত্যি হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/রাসেল