হলের শতাধিক ডাব পেড়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের পাঁচ আবাসিক শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। ডাব পাড়ার ঘটনাকে হলের ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজ উল্লেখ করে জড়িত শিক্ষার্থীদের ‘আবাসিকতা কেন বাতিল করা হবে না’ তা জানতে চেয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ওই শিক্ষার্থীদের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের আওতাধীন ফলবান গাছগুলো পরিচর্যা ও তদারকির জন্য বর্তমান হল প্রশাসনের উদ্যোগে আবাসিক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি কার্যকর আছে। গাছগুলো পরিচর্যায় বিগত কয়েক মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে। অথচ গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে হলের পূর্ব ব্লকের কয়েকজন আবাসিক ছাত্র কিছুসংখ্যক বহিরাগত নিয়ে হলের কয়েকটি নারিকেল গাছ থেকে প্রায় শতাধিক ডাব পেড়ে নিয়েছে। এটি যেকোনো বিচারে আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত আচরণের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলবান গাছগুলোর ফল-ফলাদি হলের সব আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং হলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার।

এতে আরও বলা হয়, হলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী এই অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। হল প্রশাসনের গত ২৭ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সভার ৩ নম্বর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বহিরাগতদের নিয়ে গভীর রাতে হলের নারিকেল গাছের ডাব পেড়ে অন্যের অধিকার হরণের মতো গর্হিত কাজ করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে হলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে সম্পৃক্ততার জন্য আবাসিকতা বাতিল করা হবে না, তা বৃহস্পতিবারের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে তাদের প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানাতে বলা হচ্ছে।

অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থী বলেন, মজা করে বন্ধুরা মিলে মাত্র একটি গাছ থেকে অল্প কিছু ডাব পেরেছিলাম। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ স্যার যেভাবে শতাধিক ডাব পাড়ার অভিযোগ করেছে, তা ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে সেদিন রাতের ছবি ও ভিডিও আছে। যেহেতু রাতের বেলায় আমরা এ কাজ করেছি, সেজন্য দোষ স্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের ক্ষমা না করে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে আছি।

এ বিষয়ে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে হলের গাছগুলোর পরিচর্যার জন্য হল প্রশাসন থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু হঠাৎ এক দিন আমরা লক্ষ্য করি হলের নারিকেল গাছগুলোতে ডাব নেই। হলের ফল-ফলাদি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সবার অধিকার। বিগত সময়েও এসব ফল চুরির ঘটনা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। পুনরায় যাতে আর কেউ এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল প র

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে দুই দিনের বৈঠকেও ঐকমত্য হয়নি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে গত দুই দিন বৈঠক হলেও মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সরকার মনে করছে, ঐকমত্যে পৌঁছানোর সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আরও আলোচনা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান কত হবে—তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত পূরণের ওপর নির্ভর করছে আইএমএফের চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ পাবে কি না। ঋণের কিস্তি ও শর্তের বিষয়ে সর্বশেষ গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার ভার্চ্যুয়ালি আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিটি চালু থাকবে। কিছু কারিগরি দিক নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। আরও আলোচনার দরকার পড়বে। দেখা যাক।’

আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বাকি ঋণের দুই কিস্তি ও শর্ত নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে প্রায় এক মাস ধরে দর-কষাকষি চলছে।

ইতিমধ্যে পাওয়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনা করতে গত ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফের একটি মিশন ঢাকা ঘুরে গেছে। ওই সময় ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। আলোচনা গড়ায় পরে ওয়াশিংটনেও। সেখানে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকের এক ফাঁকে ঋণের কিস্তি ও শর্তের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হয়। সেখানেও কোনো সমঝোতা হয়নি।

এরপরই বাংলাদেশ ও আইএমএফ গত দুদিন ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে আগের দিনের মতো গতকালও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলোচনার পথ শেষ হয়ে যায়নি। চলতি মাসে আবার আলোচনা হতে পারে।

সোমবারের বৈঠকের হালনাগাদ বিষয়ে জানতে চেয়ে ওই দিন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইএমএফকে ই–মেইল করা হয়। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ই–মেইলের জবাব দেয় আইএমএফ। এতে বলা হয়, ‘ঢাকার মিশন শেষে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের আলোচনা অব্যাহত ছিল। ঋণ কর্মসূচির আওতায় সংস্কারকাজে গতি আনতে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক চলছে।’

দুই দিনের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দিক থেকে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে বিনিময় হার নমনীয়, অর্থাৎ বাজারভিত্তিক হলে মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। তখন বেড়ে যেতে পারে ডলারের দাম, যার প্রভাবে বেড়ে যেতে পারে আমদানি পণ্যের দাম। এ কারণে বেড়ে যেতে পারে আবার সার্বিক মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের বেশি আছে।

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন ঋণ কর্মসূচিটি বজায় থাকা জরুরি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচিটি না থাকলে অর্থনীতি পরিচালনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ