পাকিস্তানে হামলায় যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত
Published: 7th, May 2025 GMT
ভারত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রত কাশ্মীর জুড়ে সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ভারতীয় বিমান, নৌ এবং স্থলভিত্তিক তিন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বালোকোট অভিযানের পর এটি ভারতের দ্বারা পরিচালিত সবচেয়ে বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত নির্ভুল হামলা।
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ভারতীয় বাহিনী ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৭০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করার দাবি করেছে।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানে ৭০ জনকে হত্যার দাবি ভারতের
ভারত সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: অমিত শাহ
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত
এনডিটিভ জানিয়েছে, ভারত এই অভিযানে উচ্চ-নির্ভুলতা, দূরপাল্লার স্ট্রাইক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ছিল ‘স্ক্যাল্প’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, নির্ভুল বোমা ‘হামার’ এবং লোটারিং যুদ্ধাস্ত্র।
* স্ক্যাল্প (স্টর্ম শ্যাডো): স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রটি স্টর্ম শ্যাডো নামেও পরিচিত। এটি দূরপাল্লার, আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং গভীর-আক্রমণ ক্ষমতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
* হ্যামার (হাইলি এজাইল মডুলার মিনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ): হ্যামার স্মার্ট বোমাটি লস্কর এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত সুরক্ষিত বাঙ্কার এবং বহুতল ভবনের মতো সুরক্ষিত অবকাঠামো আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। হ্যামার হলো একটি নির্ভুল-নির্দেশিত, স্ট্যান্ডঅব যুদ্ধাস্ত্র যা উৎক্ষেপণের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার পরিসরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
* কামিকাজে ড্রোন: মূলত নজরদারি চালানোর কাজে ব্য়বহৃত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে, ততক্ষণ উড়ে বেড়ায় এই ড্রোন। এই ড্রোনকে কামিকাজে ড্রোন বা আত্মঘাতী ড্রোনও বলা হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবেও উড়তে পারে এই ড্রোন, আবার রিমোটের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি, এই ড্রোনে বিস্ফোরক বা পেলোডও বসানো যায়। ড্রোনের মাধ্যমেই আঘাত হানা যায় লক্ষ্যে।
পাকিস্তানে যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ভারত
ভারত তাদের ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাঁচটি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বরং নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
* মারকাজ সুবহানআল্লাহ, বাহাওয়ালপুর: জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। এখানে সিনিয়র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
* মারকাজ তাইবা, মুরিদকে: লস্কর-ই-তৈয়বার শিক্ষা, রসদ ও পরিকল্পনার জন্য ব্যবহৃত ২০০ একর জমির একটি কম্পাউন্ড। এটি অভিযানে আঘাত করা সবচেয়ে সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
* মারকাজ আব্বাস, কোটলি: এই ক্যাম্পটি জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদস্যদের আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
* সৈয়দনা বিলাল ও শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প, মুজাফ্ফরাবাদ: জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যদের অনুপ্রবেশ পয়েন্ট এবং স্লিপার সেলগুলোর প্রশিক্ষণ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।
* মারকাজ আহলে হাদিস, বার্নালা: লস্কর-ই-তৈয়বার একটি সহায়তা কেন্দ্র এবং আঞ্চলিক সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
* সরজাল, তেহরা কালান: জৈশ-ই-মোহাম্মদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যদের শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
* মেহমুনা জোয়া, শিয়ালকোট: হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কাশ্মীর উপত্যকায় এই গোষ্ঠীর উপস্থিতি হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও এখনও সক্রিয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ শ ই ম হ ম মদ এই ড র ন র সদস য ব যবহ ত পর চ ত লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সঠিক সরকারি পরিসংখ্যান বা তথ্য–উপাত্ত না থাকায় অধিকাংশ সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। দেশের বড় অর্থনীতিবিদেরাই এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছেন। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করা ছাড়া আর কোনো কিছু করে নয়।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামাল, কাজী ফার্মসের এমডি কাজী জাহেদুল হাসান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এসিআই লিজিস্টিকসের (স্বপ্ন) এমডি সাব্বির হাসান নাসির, কোয়ালিটি ফিডসের গ্রুপ করপোরেট ও লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক শাফির রহমান, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আকতার হোসেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যানগুলোকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করি। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলো খুবই বিভ্রান্তিকর। এগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। সরকারি পরিসংখ্যান ঠিক করা খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
বিগত সময়ে সরকারগুলো ব্যয়ের মহোৎসব করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের সংরক্ষণের জন্য সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নত করা ও এ খাতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা কীভাবে করবে। কারণ, সরকার তো আগে ব্যয়ের মহোৎসব করেছে এবং এর মাধ্যমে নাগরিকদের ওপর চূড়ান্ত দায় তৈরি করেছে।
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ‘সরকারি ক্রয় কমিটিতে বিভিন্ন ধরনের (অতীতের) প্রকল্পের রেফারেন্স দেখি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ব্যয়ের ফিরিস্তি দেখি। তাতে মনে হয়েছে, (অতীতে) যেকোনো একটা খাত সৃষ্টি করে খরচ করতে পারাটাই একধরনের কৃতিত্ব মনে করা হয়েছিল একসময়। এটাই যোগ্যতার নিয়ামক ছিল যে কে কত খরচ করতে পারে। কতভাবে দায় তৈরি করা যায় দেশের ওপর, নাগরিকদের ওপর সেটি করা হয়েছে।’
দেশে খাদ্যনিরাপত্তাভিত্তিক একটি জাতীয় নীতি তৈরির পরামর্শ দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বণ্টন ও মজুতব্যবস্থার জন্য দেশব্যাপী একটা ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। এটি রাজনৈতিক সরকারের সহায়তা ছাড়া রাতারাতি করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি পরিমাপের (পণ্যের) বাস্কেট বেশ বড়। আমি মনে করি, ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আলাদা একটি ইনফ্লেশন ইনডেক্স থাকা উচিত।’