ইউটিউব প্রিমিয়াম এবার কম খরচে ব্যবহার করা যাবে, কীভাবে
Published: 7th, May 2025 GMT
ইউটিউব ভিডিওতে দিন দিন বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমনকি আকারে বড় ভিডিওতে একাধিকবার দীর্ঘ বিজ্ঞাপনও দেখতে হয় ব্যবহারকারীদের। আর তাই অর্থের বিনিময়ে ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবায় নিবন্ধন করে বিজ্ঞাপন ছাড়াই ভিডিও দেখেন অনেকে। তবে প্রতি মাসে অর্থ খরচ হওয়ায় চাইলেও সবার পক্ষে ইউটিউব প্রিমিয়ামের সুবিধা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে ইউটিউব প্রিমিয়ামের নতুন প্যাকেজ চালু করেছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। নতুন এ প্যাকেজে একসঙ্গে দুজন সদস্য যৌথভাবে অর্থ পরিশোধ করে ইউটিউবের প্রিমিয়ামের সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।
ইউটিউব জানিয়েছে, বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত আয়ই কনটেন্ট নির্মাতাদের আয়ের প্রধান উৎস। তবে অনেক ব্যবহারকারী প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন দেখার কারণে বিরক্ত হন। এ জন্যই ইউটিউব প্রিমিয়াম চালুর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনমুক্ত অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রিমিয়াম সংস্করণে ব্যবহারকারীরা ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ডে চালিয়ে রাখা, ইউটিউব মিউজিকের পূর্ণ সংগ্রহে প্রবেশাধিকারসহ বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। নতুন প্যাকেজের মাধ্যমে একজনের খরচে দুজন ব্যক্তি ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
আরও পড়ুনভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এক বছরে ইউটিউবের আয় কত০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নতুন এই প্যাকেজের তথ্য এরই মধ্যে ইউটিউব প্রিমিয়ামের সাবস্ক্রিপশন পেজে যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও শিক্ষার্থী প্যাকেজের পাশাপাশি দুই সদস্যের প্যাকেজের তথ্য দেখা যাচ্ছে। আগ্রহীরা চাইলে প্রথম এক মাস বিনা মূল্যে প্যাকেজটি ব্যবহার করতে পারবেন।
আরও পড়ুননতুন রূপে আসছে ইউটিউব, যে সুবিধা পাওয়া যাবে২৮ এপ্রিল ২০২৫ইউটিউবের তথ্যমতে, ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবায় নিবন্ধনের সময় আরও একজন ব্যক্তিকে যুক্ত করে প্যাকেজটি চালু করা যাবে। তবে দুজন ব্যক্তিরই বয়স কমপক্ষে ১৩ বছর হতে হবে এবং তাদের একটি বৈধ গুগল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, তারা উভয়ই একই ঠিকানায় বসবাস করছে। এর পাশাপাশি সদস্য যুক্ত করার জন্য দুজনকেই গুগলের ‘ফ্যামিলি গ্রুপ’–এ অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। প্রাথমিকভাবে নতুন প্যাকেজটি নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে ব্যবহার করা যাবে।
সূত্র: নিউজ১৮
আরও পড়ুনইউটিউব চ্যানেলে যে ধরনের ভিডিও প্রকাশ করলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হবে০৬ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
৭ বছরের দীর্ঘ নীরবতা শেষে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ক্যাম্পাস। ৩২ একরের সবুজ চত্বরে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনের চতুর্থ কার্যনির্বাহী পরিষদের ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটারদের মন জয় করার প্রচারে। প্রার্থী-সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ, লিফলেট ছড়াচ্ছে, স্লোগান ভেসে আসছে চারদিক থেকে। শিক্ষার্থীরা কেউ সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছে, কেউবা চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে প্রার্থীদের কর্মযজ্ঞ।
আরো পড়ুন:
ইবিতে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু বৈদ্যুতিক শাটলের
পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি হল সংসদ নেতাসহ ৬ শিক্ষার্থী
এই কোলাহলের ভিড়েই ব্যতিক্রম মো. জাহিদ হাসান। তিনি সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু প্রচারে তার ভিন্ন সুর, ভিন্ন আয়োজন। অন্যদের মতো কেবল লিফলেট বিলি বা মতবিনিময় নয়; তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ছোট ছোট বীজ। তিনি সবার নজর কেড়েছেন পরিবেশবান্ধব প্রচারণার এই অভিনব কৌশল দিয়ে।
প্রথমে অনেকে অবাক হয়েছেন। লিফলেট খুলতেই ভেতরে জড়িয়ে আছে কচি সবুজ বীজ। সঙ্গে লেখা এক টুকরো বার্তা, “এই লিফলেটে বীজ আছে, দয়া করে ভিজে মাটিতে ফেলবেন। আমি এজিএস হই আর না হই, এই বীজ থেকে অন্তত একটা গাছ হোক। যেটা ছায়া দেবে, অক্সিজেন দেবে, আর বলবে একজন শিক্ষার্থী একদিন স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের।”
কথাগুলো পড়ে চুপ হয়ে গেছেন অনেকেই। সাধারণত হ্যান্ডবিল পড়ে শেষ হলে তা ছুড়ে ফেলা হয় মাটিতে। ময়লায় ভরে যায় ক্যাম্পাস। কিন্তু বীজসংবলিত এই লিফলেট তো আর বর্জ্য নয়, এটা ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনা। এতে শুধু ভোটারদের মনোযোগই আকৃষ্ট হচ্ছে না, ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও। ফলে তার প্রচারণা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
জাহিদ বলেন, “সাধারণ প্রচারপত্র পড়ার পর তা বর্জ্যে পরিণত হয়। কিন্তু বীজযুক্ত প্রচারপত্র ফেলে না দিয়ে শিক্ষার্থীরা তা রোপণ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে ফলপ্রসূ হবে। পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি চাই, আমার প্রচারণা শুধু ভোটের জন্য না হয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনায় নতুন দিশা আনুক। পরিবর্তনের শুরুটা হোক এক টুকরো সবুজ থেকে।”
তার কথা শোনার পর অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এই তরুণের স্বপ্ন হয়তো সত্যিই একদিন বড় পরিবর্তন ডেকে আনবে। যেখানে অন্যরা স্লোগানে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সেখানে তিনি দিচ্ছেন এক খণ্ড সবুজের আশ্বাস। অনেকে বলছেন, ‘স্মার্ট ক্যাম্পেইন’।
শুধু বীজ বিলি করেই থেমে থাকেননি জাহিদ। তার মুখে শোনা যায় দৃঢ় উচ্চারণ—“আমি নির্বাচিত হলে ছাত্র সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে। আর যদি সেটা না পারি, তবে আমি নিজেই পদত্যাগ করব।”
ক্যাম্পাসজুড়ে তার এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে ঝড়ের মতো। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লিখছেন, “এমন প্রার্থীই জিতে যাক।”
জাহিদের এই প্রচারণা যেন নির্বাচনী উত্তেজনার ভিড়ে একটুকরো নির্মল বাতাস। যেখানে অন্য প্রার্থীরা লিফলেট আর শোডাউনে ব্যস্ত, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বীজ।
অনেকেই বলছেন, জাহিদ হাসানের উদ্যোগকে অনেকেই ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য এক ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। কারণ, রাজনৈতিক প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব চিন্তার এমন প্রয়োগ দেশে খুব একটা দেখা যায় না। তার এই ছোট উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মনে এক বড় পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়েছে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। প্রচারের শব্দ আরো তীব্র হচ্ছে। কিন্তু এর মাঝেও শিক্ষার্থীরা যখন সেই বীজ হাতে মাটিতে ফেলছেন, তখন যেন ভেতরে ভেতরে বুনছেন আরেক রকম স্বপ্ন।
হয়তো জাহিদ জয়ী হবেন, হয়তো হবেন না। কিন্তু তার হাত থেকে ছড়িয়ে পড়া এই বীজগুলো একদিন অঙ্কুরিত হবে, বেড়ে উঠবে। আর প্রতিটি গাছ সাক্ষী হয়ে থাকবে—একজন শিক্ষার্থী একসময় স্বপ্ন দেখেছিল, পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে একটুখানি সবুজ থেকেই।
ঢাকা/মেহেদী