মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায় না ইসলামী আন্দোলন
Published: 7th, May 2025 GMT
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায় না চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া দলটির যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বলছে ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে’। কীসের ভিত্তিতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে? ন্যূনতম বা যেনতেন নয়, মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন হতে হবে। অবশ্যই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। ভবিষ্যতেও নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে হবে স্থায়ী নির্বাচন।
বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের পর তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, এসব বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের অধিকাংশে একমত ইসলামী আন্দোলন।
নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়া বেঞ্চ থাকবে: দলটি নতুন করে কমিশনে শরিয়া আদালতের প্রস্তাব করেছে বলে জানান আতাউর রহমান। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে শরিয়া আইনে বিচার হয়। ইসলামী আন্দোলন প্রস্তাব করেছে, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়া বেঞ্চ থাকবে। বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষ একমত হলে, বিচারের জন্য শরিয়া আদালতে যেতে পারবেন।
শরিয়া আইন কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়নি জানিয়ে আতাউর রহমান বলেছেন, ‘ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেমন সাধারণ এবং শরিয়া পদ্ধতি রয়েছে। গ্রাহক যে পদ্ধতি পছন্দ করেন, সে পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করেন। শরিয়া আদালতও তেমন ঐচ্ছিক হবে। উভয়পক্ষ রাজি থাকলে, শরিয়া আদালতে যেতে পারবে। যারা চাইবেন না, তারা বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় যাবেন।’ অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে শরিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে ইসলামী আন্দোলন।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টায়র বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ড.
সংবিধানের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস পুনর্বহালের’ প্রস্তাব: ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ নয়, আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস পুনর্বহালের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে একমত। তবে উভয় কক্ষ ভোটের অনুপাতে পদ্ধতিতে গঠিত হবে।
নির্বাচনে নারী-পুরুষের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তাব: নারীর জন্য কোটা অসম্মানজনক। তাই সকল পর্যায়ের নির্বাচনে নারী-পুরুষকে সমান সুযোগ দিয়ে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তাব করেছে চরমোনাই পীরের দল। এছাড়া কমিশন সুপারিশ করেছেন, নিম্নকক্ষের নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতেই হবে। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে ঠিক তত শতাংশ আসন পাবে। উভয়কক্ষ আনুপাতিক হলে দ্বিকক্ষের সংসদের প্রয়োজন কী প্রশ্নে আতাউর রহমান সংলাপ পরবর্তী ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আনুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া দেশের সমাধান সম্ভব নয়। কর্তৃত্ববাদ থেকে বেরিয়ে আসতে উচ্চকক্ষ গঠন করতে হবে।
সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব: কমিশন সুপারিশ করেছিল, উচ্চকক্ষের ৫০ শতাংশ এমপি হবে অরাজনৈতিক। এতে একমত হয়নি ইসলামী আন্দোলন। আতাউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলই ঠিক করবে, কারা প্রার্থী হবেন। ইসলামী আন্দোলন সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করা, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাব করেছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব: বিএনপি আগে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও সংলাপে ইসলামী আন্দোলন নেতারা বলেন, অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হবে। সদস্য কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান, মেয়র নির্বাচনের পক্ষে নয় ইসলামী আন্দোলন। বিদ্যমান পদ্ধতিতে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। জেলা পরিষদ বিলুপ্ত নয়, শক্তিশালী করতে হবে। পরিষদের চেয়ারম্যান পদ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে।
বাদীর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতা বাতিলের প্রস্তাব: বাদীর অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ক্ষমতা বাতিল, ধর্ম অবমাননায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন। বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের সুপারিশে একমত দলটি প্রস্তাব করেছে, জেলা প্রশাসকের কারছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকবে না। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ ক্ষমতা ভোগ করবেন। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ বাতিল করতে হবে।
ঐকমত্য কমিশন পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও মত দিয়েছে জানিয়ে আতাউর রহমান বলেছেন, নতুন করে ৯টি প্রস্তাব করা হয়েছে স্বাধীন পুলিশ বাহিনী নিশ্চিতে।
নারী বিষয়ক সংস্কার প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে সংলাপে কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন নেতারা। তবে ঐকমত্য কমিশন জানিয়ে দেয়, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তাদের আওতাধীন নয়। এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে পারে ইসলামী আন্দোলন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র র ষ ট রপত বল ছ ন ইসল ম ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শরিয়াহ আইন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের একটি মন্তব্য নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত সোমবার মামুনুল হকের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
‘আফগানিস্তানে যেতে আইনি বাধা নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশে মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ শাসন চেয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে জরিপ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, সেখানে শরিয়াহ আইন বা শরিয়াহ শাসনসংক্রান্ত কোনো প্রশ্নই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে উক্ত জরিপ থেকে এ ধরনের মতামত বা ফলাফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে এ বিষয়ে মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, ২০১৭ সালে ‘রিজলভ নেটওয়ার্ক’ পরিচালিত একটি জরিপকে তিনি অসতর্কতাবশত ঐকমত্য কমিশনের জরিপ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড শরিয়াহ ইন বাংলাদেশ: সার্ভেয়িং সাপোর্ট’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সৈয়দা সেলিনা আজিজ। ওই জরিপে ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫