হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্সের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
Published: 7th, May 2025 GMT
আগামী ১০ মে বিকেএমইএর নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ এর মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্স তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায় ‘মিট দ্য প্রেসে’মোহাম্মদ হাতেম ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-
১. আমদানি-রপ্তানি সহজীকরণে কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও বাস্তবধর্মী নীতি প্রণয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক.
খ. এফ ও সি-তে কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সকল প্রকার জটিলতা দূর করা
গ. কম্পোজিট ইউনিটের ক্ষেত্রে আমদানি প্রাপ্যতা ও এর ব্যবহার পদ্ধতি সহজীকরণ করা
ঘ. বন্ডেড প্রতিষ্ঠান থেকে নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ সরবরাহে জটিলতা দূর করা
. বন্ড কমিশনারেটে চলমান নানা জটিলতা দূর করণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা
চ. নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স করতে বাধ্য করা এবং এ কারণে রপ্তানির বাধা দূর করা
২. বর্তমানে শতভাগ রপ্তানি খাতের কারখানার জন্য ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। কিন্তু রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে নানাভাবে ভ্যাট নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আইন করে রাখা মুসকের নানারকম ফরমের ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। তদুপরি এই সকল ফরমের ব্যবহার না করায় রাস্তাঘাটে রপ্তানিমুখী শিল্পের মালামাল পরিবহনে নানা জটিলতা তৈরী করে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. বর্তমানে ট্যাক্সেশন পদ্ধতিটি কোনভাবেই বিনিয়োগ ও ব্যাবসা বান্ধব নয় এবং ট্যাক্সেশনের মূল চেতনা ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। এ পদ্ধতির সংস্কারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি সহজ করা ও ট্যাক্সের হার দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থীর রাখার জন্য এনবিআর -এর সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. গতিশীল উৎপাদন ব্যবস্থা ও লিড টাইম নিশ্চিত করণে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় সুতা আমদানি চালু করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌক্তিক আলোচনার পরিবেশ তৈরী করবো।
৫. ব্যংকিং খাতের নানা প্রকার জটিলতা দূর করণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং রপ্তানিবান্ধব নীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখা।
৬. ইউরোপ-আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমাতে বিশ্বের অপ্রচলিত বাজারে সম্ভবনা অনুসন্ধান ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাজার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিপননে গতিশীলতা আনয়নে চুক্তি সাক্ষর করা।
৭. বৈচিত্র্যময় ও উচ্চ মূল্যের পোশাক প্রস্তুত করতে সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রাখা।
৮. আধুনিকায়নের মাধ্যমে কারখানাগুলোকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে আরএসসি'র প্রণীত জটিল নীতিমালাগুলো সহজ করতে সরকার ও আরএসসি বোর্ডের সাথে দর কষাকষির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
৯. ক্রেতা কর্তৃক অনৈতিক বায়িং প্রাকটিস তথা পণ্যের কম দাম দেওয়া, পণ্য বুঝে নিয়ে মূল্য পরিশোধ না করা, দামে ছাড় দিতে বাধ্য করা, বায়িং হাউস/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার/শিপিং লাইনের যোগসাজসে মূল্য পরিশোধ না করে মাল ছাড়িয়ে নেওয়া এবং ক্রয়াদেশ বাতিল করার মতো ঘটনা যেন বায়াররা ঘটাতে না পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে সর্বমহলে অবহিত করার ব্যবস্থা করা।
১০. বৈদেশিক শুল্কব্যবস্থা, পরিবেশ বিপর্যয়, মহামারী, যুদ্ধাবস্থার মতো বিষয়গুলো প্রায়শই আমদের রপ্তানি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে যেকোনো বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানিখাতকে প্রস্তুত রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ রাখা।
১১. বিকেএমইএ'র বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অসন্তোষ থেকে রক্ষা পেয়েছে নীটওয়্যার খাত। এ ধরনের সফলতাগুলো বহির্বিশ্বে প্রচারের মাধ্যমে খাতসংশ্লিষ্ট ভাবমূর্তি উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়া।
শ্রমিক কর্মচারী মালিক সরকার সকলে মিলে শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। শ্রমিকদের যেকোন ন্যায্য দাবির প্রতি বিকেএমইএ'র পূর্ণ সমর্থন এবং একইসাথে অন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা।
১২. শিল্পখাতে জ্বালানী সংকট নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৩. ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের বিকাশে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি, প্রশিক্ষণ ও বিপননে সরকারি নীতি নির্ধারণীতে কার্যকর ভূমিকা রাখা।
১৪. দেশের রপ্তানিখাতকে বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে বিদেশে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে পোশাক শিল্প পরিবার তথা দেশের বস্ত্রখাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আমরা বিকেএমইএ সরকারের সাথে সহযোগীর ভূমিকা পালন করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।
১৫. ঢাকাতে বিকেএমইএ'র একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব ক এমইএ ইশত হ র প রণয়ন দ র কর সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন: প্রধান উপদেষ্টা
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংকট নিরসনে সাত দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
তিনি বলেন, “অর্থায়ন কমে আসছে। একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।”
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, “গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই। আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতিতে ভুগছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং সমাধানও সেখানেই নিহিত।”
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এটাই সংকটের একমাত্র সমাধান। মিয়ানমারের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা বরাবরই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চেয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ সংকটের শিকার। আমাদের সামাজিক, পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে বিপুল চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ—যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য—বিবেচনায় দেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।”
টেকসই সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাত দফা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেন—
প্রথমত, রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
তৃতীয়ত, রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড় এবং তা পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
ষষ্ঠত, জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
সপ্তম, মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য অপেক্ষায় রাখার সামর্থ্য রাখে না।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
ঢাকা/ইভা