Samakal:
2025-05-08@12:21:15 GMT

ফলেন পরিচয়েৎ

Published: 8th, May 2025 GMT

ফলেন পরিচয়েৎ

অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়নের যেই উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে, আমরা উহাকে স্বাগত জানাই। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানাইয়াছে, নানা আলোচনা-পর্যালোচনার পর অধ্যাদেশটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়াছে উপদেষ্টা পরিষদ।

ইহাতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল করা হইয়াছে, তবে মতপ্রকাশের সহিত সম্পর্কিত দুইটি অপরাধ রহিয়া গিয়াছে। অপরাধ দুইটি হইল– নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক আধেয় প্রকাশ ও হুমকি এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য বা আধেয়ের মাধ্যমে সহিংসতায় উস্কানি প্রদান। খসড়ায় এই প্রথম আন্তর্জাল সেবাকে নাগরিক অধিকাররূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হইয়াছে। উপরন্তু, নিষিদ্ধ হইয়াছে অনলাইন জুয়া।

মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করিয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাইয়াছেন আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তাঁহার ভাষ্য অনুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি যাচাইয়ের পর অধ্যাদেশটি জারি এবং চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কার্যকর হইবে। আইন উপদেষ্টার মতে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেই ৯টি ধারা বাতিল হইয়াছে, উক্ত আইনে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত ৯৫ শতাংশ মামলাই ছিল এই সকল ধারার। ফলে নূতন আইন কার্যকর হইবার পর ঐ মামলাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হইয়া যাইবে। ইতোপূর্বে সাইবার নিরাপত্তা আইনের অন্য সকল ধারায় দায়েরকৃত মামলাগুলিও বাতিল হইয়া যাইবে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। কারণ এই সকল মামলা প্রধানত হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের হইয়াছিল। বিশেষত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সরকারের সামলোচক সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধই ছিল মামলাগুলির উদ্দেশ্য। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, বিগত সরকার ২০১৮ সালে বিভিন্ন সাইবার অপরাধ হইতে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, যাহা বাস্তবে ছিল ভয়ংকর নিবর্তনমূলক। সেই সময় এক গবেষণায় দেখা গিয়াছিল, উক্ত আইনে দায়েরকৃত মামলার মাত্র ২ শতাংশ আদালতে টিকিয়াছিল। তথাপি সরকার মাসের পর মাস আইনটি চালাইয়া যায়। এক পর্যায়ে জনপরিসরে সৃষ্ট ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের স্থলে ২০২৩ সালে বাতিল হইবার প্রক্রিয়ায় থাকা সাইবার নিরাপত্তা আইনটি চালু করে। কিন্তু উহাও ছিল শুভঙ্করের ফাঁকিতে পূর্ণ। স্বীকার করিতে হইবে, সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা অবসানের নিরীহ আন্দোলনটি যে গত বৎসর জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপ গ্রহণ করিয়াছিল, তাহার নেপথ্যে অন্য কিছু গুরুতর অপকর্মের সহিত আইন দুইটির মাধ্যমে গণহয়রানির বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখিয়াছে। সেই দিক হইতে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম আশু কর্তব্য।

কিন্তু গৃহদগ্ধ গরু যদ্রূপ সিঁদুরবর্ণ মেঘ দর্শনেই ভীত হয়, তদ্রূপ আমাদেরও মনে নূতন আইন দেখিয়া কিছু শঙ্কা জাগিতে পারে। বিশেষত প্রস্তাবিত আইনে যেই দুইটি বিষয়ে মতপ্রকাশ করিতে গিয়া অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হইয়াছে, সেইগুলি বরাবরের ন্যায় এখনও স্পর্শকাতর। আইনের খসড়া না দেখিয়া বলা যায় না, উক্ত অপরাধের সংজ্ঞা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা হইয়াছে কিনা। দ্বিতীয়ত, উক্ত ক্ষেত্রে পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণে কী প্রতিষেধক রাখা হইয়াছে, তাহাও আপাতত স্পষ্ট নহে। এহেন অপরাধের ক্ষেত্রে কতিপয় রক্ষাকবচের কথা বলিয়া আইন উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করিতে চাহিয়াছেন, সত্য। বাস্তবে উহার রূপ কী ধারণ করিবে, তাহা এখনই বলা দুরূহ।

অধ্যাদেশের খসড়া করিতে গিয়া নাগরিক সমাজের সমালোচকদের সহিত বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করা হইয়াছে বলিয়া আইন উপদেষ্টার বক্তব্যটি অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রাখার বিধানও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইনটি লইয়া আপাতত শেষ কথা হইল– ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচয়েৎ।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট অপর ধ হইয় ছ আইন র সরক র ত আইন

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠাতে বিধিমালা হচ্ছে

সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে এক কর্মস্থলে কেউ আর দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। এতে মাঠের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা-উপজেলা প্রশাসনে বদলি করা যাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব ওঠে। পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার ‘জনপ্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য গত ৩০ এপ্রিল আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বর্তমানে ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪। এই বিধিমালা অনুযায়ী, সচিবালয়ের কর্মচারীরা পদোন্নতির মাধ্যমে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) হতে পারেন। 
আর ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (দশম গ্রেড) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভিন্ন বিধিমালা হলে একই নিয়মে হবে পদোন্নতি।

এ বিষয়ে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নিয়োগ বিধিমালা-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগির কমিটি বৈঠকে বসবে। আলোচনার পর বোঝা যাবে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। কেন এই বিধিমালা প্রয়োজন, সেটিও পর্যালোচনা করা হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকেও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটা করার। কারণ উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের ধরন একই। তাই এটিকে ভালো উদ্যোগ বলা যায়। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত হলে বদলিসংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানা যাবে। 

এক পক্ষের সমালোচনা, আরেক পক্ষের স্বাগত
সচিবালয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় ১৩ হাজার জন। নন-ক্যাডাররা (প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা এও এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও) পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব হতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের পদ দেওয়া হয় না। এজন্য ৫ আগস্টের পর আন্দোলনও করেন কর্মচারীরা। পরে কয়েক দফায় সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি হয় তাদের। এখন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী সচিব ৩৫৬ জন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ৭৮ জন ও উপসচিব পদে ৯ জন কর্মরত। আরও বেশি পদ সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন চলছে। 
ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এও পদ আছে ৮৩১টি। এর মধ্যে কর্মরত ৪৭৫ জন। বাকি পদে পদোন্নতি ও নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনে ব্রিটিশ আমল থেকে এও পদ থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২০১৯ সালে সংখ্যা বাড়ানো হয়। মাঠ পর্যায়ে সব মিলে এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন অন্তত ১৫ হাজার।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলন করেন কর্মচারীরা। সমস্যার সমাধান হলে কেউ আন্দোলন করবেন না। তিনি বলেন, ‘নন-ক্যাডারদের বান্দরবানে পোস্টিংয়ের ভয় দেখানোর জন্য এ উদ্যোগ। আন্দোলন বন্ধের কৌশল হিসেবে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা কেউ মানবে না। সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে।’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় এবং মাঠ প্রশাসন এক করলে সমস্যা তৈরি হবে। এজন্য সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠে বদলি করা হয় না। সচিবালয়ে এটা করা হলে অন্যান্য দপ্তরে জটিলতা বাড়বে।
বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম জাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন। অথচ আমাদের দশম গ্রেডের পর পদোন্নতির সুযোগ নেই। এটা বৈষম্য। আমরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি। সবার সুযোগ-সুবিধা সমান হওয়া উচিত।’

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণদের নীতি প্রণয়নে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচি, প্রথম সেমিনার চট
  • হাতেমের নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নীট এলায়েন্সের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
  • ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ সুপারিশ
  • অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা না করার অনুরোধ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের
  • ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আহছানিয়া মিশনের ৯ সুপারিশ
  • সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠাতে বিধিমালা হচ্ছে