তীব্র রোদ আর প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ নগরীর জনজীবন। বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকাগুলো জনশূন্য হয়ে গেছে। খুব বেশি দরকার না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউই।

তীব্র গরমে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তায় রিকশা-ইজিবাইক নিয়ে যারা বের হয়েছেন তারা ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন। আবার বাইরে লোক না থাকায় ঠিকমতো ভাড়াও পাচ্ছেন না তারা।

আজ শুক্রবার তীব্র গরম পড়ায় রাস্তার পাশে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। মূল নগরীতে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেতে উঁচু ভবনের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই।

দুপুরের দিকে নগরীর শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ মোড়, গাঙ্গিনাপাড়, নতুন বাজার, জেলা স্কুল মোড়, চরপাড়া মোড়, সানকিপাড়া, টাউন হল মোড়, কাচিঝুলি মোড় ও বাইপাস মোড়ে গিয়ে দেখা যায় রাস্তাঘাট একেবারেই জনশূন্য। নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনারপাড়। দুপুর আড়াইটায় এলাকাটিতে দেখা যায়, সড়কজুড়ে নেই চিরাচরিত যানজট।

সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীতে মোট ১২ হাজার লাইসেন্সধারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। তবে এর বাইরেও কয়েক হাজার লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা আছে। ফলে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।

শুক্রবার তীব্র দাবদাহে এসব এলাকা প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। পুরো গাংগিনারপাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ৪-৫টি অটোরিকশা চলাচল করছে। তবে অধিকাংশ রিকশাই ফাকা। এই এলাকায় কোনো গাছপালা না থাকায় কয়েকজন রিকশাচালক ও পথচারী বড় বিল্ডিংয়ের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় চড়পাড়া মোড়ে সারাদিন প্রচণ্ড যানজট থাকে। শুক্রবার দুপুর ৩টায় কথা হয় রিকশাচালক রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরমে হাসফাঁস অবস্থা। রাস্তায় খুব একটা যাত্রী নেই। সকাল ৮টায় বের হয়েছি। এতো গরম না থাকলে প্রতিদিন দুপুরে খাবারের আগে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত ২৩০ টাকা পেয়েছি। রোদ কমলে হয়তো কিছু টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।

নতুন বাজার এলাকায় অটো রিকশাচালক ষাটোর্ধ মোসলেম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন খরচসহ গাড়ির আমদানি দিতে হয় ৮০০ টাকা। গরমের কারণে আজ শহরে যাত্রী নেই। এখন পর্যন্ত ৫০০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। সারাদিনের আরো ১০০০ টাকা ইনকাম করতে না পারলে মালিককে কী দেব আর নিজেই কী নিব? 

জুম্মার নামাজ শেষে বাস সিন্ডিকেট জামে মসজিদের সামনে সমকালের সাথে কথা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদের। নামাজ শেষ করেই তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে যাচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, ভেবেছিলাম শুক্রবার ছুটির দিনে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে একটু বাইরে ঘোরাফেরা করব। কিছু কেনাকাটাও করতে চেয়েছিলাম। এখন দেখি প্রচণ্ড গরমে নিজেই বাইরে টিকতে পারছি না। তাই আজকে আর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে বের হবো না। ঘোরাফেরার প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে আমি নিজেই এখন বাসায় চলে যাচ্ছি। 

হাসপাতাল গেটের সামনে নান্দাইলের মাহির ইবন বলেন, বাসায় অসুস্থ রোগী তাই বাড়ি থেকে ওষুধ কিনতে বের হয়েছি। রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে ১০ মিনিটের জন্য ফার্মেসিতে এসেছি। ওষুধ কেনা শেষ করে দেখি মোটরসাইকেলের ওপর আর বসা যাচ্ছে না।

এদিকে প্রচণ্ড গরমে রাস্তার পাশের ফুটপাতের বিভিন্ন ধরনের জুসের দোকানে হালকা ভিড় দেখা গেছে। পথচারীদের গরমে ক্লান্ত হয়ে আখ ও লেবুর শরবত খেতে দেখা গেছে। শরবতের দোকানদাররা বলছেন, দুপুরের পর থেকে গরম বাড়ছে। বিকেল বেলা বেচাকেনা আর একটু বেশি হবে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না ময়মনসিংহে। সর্বশেষ ৬ মে ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এর আগে ৪ মে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মে মাসে মাত্র দুইদিন অল্প বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরম বেড়েছে বলে জানান তারা।

শুক্রবার দুপুর তিনটায় এ মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসের শুরুতে ১ তারিখে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ মঙ্গলবারের পর আর কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আজ সর্বোচ্চ গরম পড়েছে বলে জানান আবহাওয়া অফিস ময়মনসিংহের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো.

মনিরুজ্জামান। 

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা গরমে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময়ে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, হিটস্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের এ সময় নিরাপদে রাখতে হবে। তাছাড়া যারা কর্মজীবী মানুষ তারা ভর দুপুরে অতিরিক্ত গরমে এড়িয়ে সকালে ও বিকেলে কাজ করতে পারেন। 

তিনি আরও বলেন, এই গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা বাদ দিয়ে নরমাল পানি কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। যেকোনো ধরনের সফট ড্রিংক এবং আইসক্রিম জাতীয় খাবার পরিহার করে ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খেতে হবে। পোলাও মাংস এবং অন্যান্য রিচ ফুড এই গরমে সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে। যারা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হবেন তাদেরকে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ না হলে তাকে স্যালাইন দিতে হবে এবং দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ত পদ হ প রচণ ড গরম শ ক রব র জনশ ন য র গরম নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের টাকায় সচিবের বাড়ির কবরস্থান উন্নয়ন, বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিজ আশাবট। এই গ্রামের একটি কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, উন্নয়ন এবং সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করার নামে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আটটি ছোট প্রকল্প নিয়েছে জেলা পরিষদ। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ২৪ লাখ টাকা।

কাগজে-কলমে কবরস্থানটিকে ‘সামাজিক কবরস্থান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর পারিবারিক কবরস্থান।

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন সরদারের ইচ্ছায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদ সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার সচিবকে সন্তুষ্ট রাখতে কবির হোসেন কাজটি করেছেন। 

এক কবরস্থানের জন্য আট প্রকল্প গ্রহণ, কম্বল বিতরণে অনিয়ম, জেলা পরিষদের প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ মো. কবির হোসেনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৭ অক্টোবর কবির হোসেনকে ময়মনসিংহ থেকে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অবশ্য ২ নভেম্বর নতুন আদেশে কবির হোসেনকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। 

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কখনো কবরস্থানে প্রকল্প দিতে বলিনি। ওখানে জনগণের জন্য পানির ব্যবস্থা ও একটি পাঞ্জেখানা মসজিদের (যে মসজিদে জুমা ছাড়া অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়) জন্য বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘ছোট কাজ করতে বললাম, আর জেলা পরিষদ ভুলভাবে এটা করে বিশ্রী অবস্থা করেছে। আমি এখন এটি বাদ দিতে বলেছি।’ 

সচিব আরও বলেন, বিষয়টি শোনার পরই কবির হোসেনকে বদলি করে দিয়েছেন। শুরুতে পটুয়াখালী বদলি করলেও পরে নেত্রকোনায় করতে হয়। নেত্রকোনাতেও সাংবাদিকেরা আপত্তি করছেন। তাঁকে নতুন জায়গায় বদলি করা হবে। 

নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছিলেন কবির হোসেন সরদার। ইউএনও থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে দুই ভাইয়ের নামে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত একটি পোশাক কারখানার শেয়ার কিনে সেটি দখলের অভিযোগ ওঠে। উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে ১১ মাস বসবাস করেও ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দুই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালে কবির হোসেনকে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল (দুই ধাপ অবনমিত)। 

ছোট কাজ করতে বললাম, আর জেলা পরিষদ ভুলভাবে এটা করে বিশ্রী অবস্থা করেছে। আমি এখন এটি বাদ দিতে বলেছি।স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী৩৭ প্রকল্পের ৯টিই এক গ্রামে

জেলা পরিষদ সংবিধিবদ্ধ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা পরিপত্র দিয়ে পরিচালিত হয়। জেলা পরিষদের নিজস্ব বাজেট রয়েছে। তা দিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট প্রকল্প ও অনুদানমূলক কাজ করে থাকে জেলা পরিষদ। অবশ্য এসব কাজ করার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও প্রভাবশালীদের ইচ্ছাপূরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। 

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ১৮ মে জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জিয়া আহমেদ সুমনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাওয়া ৯০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৭টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয় ফুলপুর উপজেলায়, যার ৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামে। প্রতিটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা। 

এসব প্রকল্পে সুপেয় পানির অবকাঠামোর টাইলস ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির অবকাঠামো নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, নালা নির্মাণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রকল্পের তালিকায় দেখা গেছে, এক নম্বরে রয়েছে নিজ আশাবট গ্রামের হাজি শমসের আলী সাহেবের কবরস্থান উন্নয়ন। শমসের আলী স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর দাদা। ৪ নম্বর প্রকল্প নিজ আশাবট গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে সীমানাপ্রাচীর টাইলসকরণ। তালিকার ৮, ২১, ২৪, ২৫, ২৭ ও ৩২ নম্বর প্রকল্পও একই কবরস্থান ঘিরে। এসব প্রকল্পে সুপেয় পানির অবকাঠামোর টাইলস ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির অবকাঠামো নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, নালা নির্মাণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

নিজ আশাবট গ্রামে গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে গিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলতে দেখা যায়। তখন পর্যন্ত কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীর, মোটর স্থাপন, পানির ট্যাংক বসানো ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার কাজ এগিয়েছিল। সেখানে ‘পারিবারিক কবরস্থান’ লেখা একটি পুরোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়। 

জেলা পরিষদের প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে কবরস্থানটিকে ‘সামাজিক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা গ্রামের সবার জন্য উন্মুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সরকার সচিবের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে উজ্জ্বল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটি পারিবারিক কবরস্থান। কিছুদিন আগে কবরস্থানের সীমানা চিহ্নিত করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। কাজটি সরকারিভাবেই হচ্ছে। 

কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীর, মোটর স্থাপন, পানির ট্যাংক বসানো ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার কাজ এগিয়েছিল। সেখানে ‘পারিবারিক কবরস্থান’ লেখা একটি পুরোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়। কম্বল বিতরণে নয়ছয়

জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কম্বল কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত ২৮ জানুয়ারি কম্বল কেনার একটি কার্যাদেশ দেন কবির হোসেন। জেলার ১৩টি উপজেলার দুস্থ, অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য প্রায় ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার কম্বল সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মেসার্স হাওলাদার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে কম্বল সরবরাহের কথা। 

জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী ও কম্বল ক্রয় কমিটির সদস্য আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো কম্বল বুঝে পাইনি।’ কিন্তু কীভাবে কম্বলের বিল গেল—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আমি জানি না।’ 

জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কম্বল বুঝে পাওয়ার কোনো নথি আমাদের কাছে নেই। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কম্বল বিতরণ হয়েছে মর্মে কিছু কাগজ আমাদের দিয়েছেন।’ 

প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার। তাঁর স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণের কার্যবিবরণী তৈরির অভিযোগ উঠেছে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নজরে আসার পর কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা পরিষদের প্রশাসক তাহমিনা আক্তার। 

নোটিশের যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন কবির হোসেন। স্থানীয় সরকার সচিবের বাড়ির সামনে একই স্থানে আটটি প্রকল্প দেওয়া, কম্বল কেনায় নয়ছয় করার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রকল্প সব তো আমি একা করি না, মাসিক সভায় অনুমোদন করে মন্ত্রণালয় হয়ে আসে। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা অনেক সময় প্রকল্প পরিবর্তন করি।’ 

এদিকে স্থানীয় সরকার সচিবের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন অবৈধ কাজ করানোর জন্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলীসহ অন্য কর্মচারীদের অনবরত চাপ প্রয়োগ করেন কবির হোসেন। তাঁর ‘অত্যাচার’ থেকে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সম্পদ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয় অভিযোগপত্রে। 

জেলা পরিষদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে ঐচ্ছিক কার্যাবলির আওতায় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক তাহমিনা আক্তার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে ইউনিয়ন পরিষদের কাছের ঝোপ থেকে গভীর রাতে ককটেল উদ্ধার
  • উচ্চশিক্ষিত ভারসাম্যহীন নারী তিন দিন পর ম্যানহোল থেকে উদ্ধার
  • একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ
  • ময়মনসিংহে দুষ্কৃতকারীদের আগুনে পুড়ল কাভার্ডভ্যান
  • ময়মনসিংহে তিন প্রজন্ম ধরে মহিষের দুধের বিখ্যাত ‘সেনবাড়ির দই’
  • সরকারের টাকায় সচিবের বাড়ির কবরস্থান উন্নয়ন, বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা