মব সৃষ্টি করে ‘চর দখলের’ মতো কলেজ দখলের চেষ্টা চলছে
Published: 10th, May 2025 GMT
চর দখলের মতো করে রাজধানীর আবুজর গিফারী কলেজও দখলের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজটির শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, কলেজের অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদ গংরা নানাভাবে কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীকে অসহযোগিতা করছেন। এছাড়া তার নামে নানা ধরনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন বশীর আহম্মদের অনুসারীরা।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। ‘আবুজর গিফারী কলেজের শিক্ষক, ছাত্র–ছাত্রী, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অভিভাবকবৃন্দ’র ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজের প্রভাষক মো.
বশীর আহম্মদ কলেজ গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, হিতৈষী সদস্য এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক নির্বাচনে বিধির বাইরে প্রভাব খাটিয়েছিলেন। নিয়মবহির্ভূত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভোটার করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে সহযোগিতা করেছেন। বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষকদের ভয়ভীতি, হুমকি দেওয়ার নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। এ সম্পর্কিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজও তিনি মুছে ফেলেছেন ডিভাইস থেকে।
লিখিত বক্তব্যে বশীর আহম্মদের সহযোগী হিসেবে কলেজের গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি জুলেখা বেগম, দাতা সদস্য আবুল মনসুরসহ কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপকর্মের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, কয়েকজন ফ্যাসিস্ট অনুসারী পশ্চাদপসরণ মনোভাবের শিক্ষক, ভাগবাঁটোয়ারা, ভোগ ও অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী কিছু বহিরাগত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক এবং অছাত্ররা অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর নামে বিষোদগার করছে। কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক ও কলেজ গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি জুলেখা বেগম ২৯ এপ্রিল কিছু শিক্ষক ও বহিরাগতদের নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে মব সৃষ্টি করেন। মূলত জুলেখা-মনসুর গংদের উদ্দেশ্য হলো- মব তৈরি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করে ‘চর দখলের’ মতো কলেজ দখল করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কলেজের প্রভাষক আমিরুল ইসলাম বিপ্লব, কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি আমিনুল হক আমিন। এছাড়া সেখানে কলেজের গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্যের আনীত অভিযোগ খণ্ডন করেন প্রভাষক মো. মেহেদী হাসান হাওলাদার।
অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদ সমকালকে বলেন, আমাকে অনৈতিকভাবে বর্তমান সভাপতি গত ৯ মার্চ একক সিদ্ধান্তে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। যেসব অভিযোগ এনে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, সবই মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। আমি কলেজে গিয়ে জানতে পারি যে, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলন কাল
এদিকে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে নতুন সভাপতি মনোনয়নের দাবিতে আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে কলেজের আরেকটি পক্ষ। ‘আবুজর গিফারী কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক পরিষদ, কর্মকর্তা–কর্মচারীবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ’র ব্যানারে এর আয়োজন করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শমিত এখন লাল-সবুজের
শমিত সোম। বাংলাদেশের পাসপোর্টের পর লাল-সবুজের হয়ে খেলতে ফিফার অনুমতিও পেয়ে গেলেন। ২৭ বছর বয়সী শমিত কানাডার অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে ৭টি ও অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন ৪টি ম্যাচ। কানাডা জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা এই তরুণের লাল-সবুজের হয়ে ওঠা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
কানাডা জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলা শমিত সোম বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য ফিফার অনুমতি পেয়েছেন। ফলে ১০ জুন ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে বাধা নেই তাঁর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা হামজা চৌধুরীর পর শমিতকে নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন দেশের ফুটবল ভক্তরা। বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি স্মরণ করেছেন ভক্তদের। তিনি ২০১৬ সালে কানাডার অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে ৭টি ও ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন ৪টি ম্যাচ। ২০২০ সালে কানাডার জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেন দুটি ম্যাচ।
বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে
২০২০ সালে শমিত সোম পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে ঘুরে গিয়েছিলেন। তখনও জানতেন না লাল-সবুজের হয়ে ওঠার কথা। ২৭ বছর বয়সী শমিতের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। বাবা মানস সোম ও মা নন্দিতা সোম নব্বইয়ের দশকে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে বেড়ে ওঠা শমিত এখন পেশাদার ফুটবলার, খেলছেন স্থানীয়
ক্যাভালরি ফুটবল ক্লাবে।
ক্যাভালরি কানাডার শীর্ষ পেশাদার ফুটবল লিগের ক্লাব। আলবার্টা
রাজ্যের ক্যালগ্যারিতে অবস্থিত এ
ক্লাবটির নিয়মিত ফুটবলার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শমিত সোম।
একটু পেছনে ফিরে...
প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। এরপর জাতীয় দলে আসেন ফিনল্যান্ডে জন্ম নেওয়া তারিক কাজী। সর্বশেষ গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী, যা অতীতের সব উচ্ছ্বাসই ছাপিয়ে গেছে।
লাল-সবুজে যেভাবে আগ্রহ
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিজিটাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য অমিত হাসান ২০২৪ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শমিতের সঙ্গে বাফুফের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেন। মূলত কানাডার বাংলাদেশি পাড়ার মানুষদের মাধ্যমে পরিচয় হয়ে অমিত হাসান ও শমিত সোমের। এর আগেও কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। হামজা চৌধুরীর দেশে ফেরায় প্রেক্ষাপট বদলে যায়। শমিত বাফুফেকে সম্মতি জানান। এরপর বাফুফে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
হামজা-শমিতকে নিয়ে লাইনআপ
হামজা চৌধুরীর পর শমিতকে পেয়ে বাড়ল হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার রসদ। ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে কানাডায় বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ ফুটবলারকে পাওয়া যাবে। এতে বাংলাদেশের মাঝমাঠ শক্তিশালী হচ্ছে। আক্রমণভাগে ফাহমিদুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি লাল-সবুজদের আরও সমৃদ্ধ করবে। হামজা চৌধুরীর মতো শমিত সোমও মাঝমাঠের খেলোয়াড়। হামজা চৌধুরী এবং শমিত সোমের পাশে মোহাম্মদ হৃদয়কে হয়তো দেখা যাবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে। তাদের সঙ্গী হতে পারেন দুই সোহেল রানার একজন। তবে একাধিক পজিশনে খেলার দক্ষতাসম্পন্ন হামজা চৌধুরীকে মাঝমাঠের কোন পজিশনে খেলাবেন হাভিয়ের ক্যাবরেরা?
ভিডিও বার্তায় যা বললেন...
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় শমিত বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করতে মুখিয়ে আছি। সবাইকে তাদের অসাধারণ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ তাদের, যারা প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করেছেন আর বাংলাদেশের হয়ে খেলা সম্ভব করে তুলেছেন। ধন্যবাদ।’ আগামী ১০ জুন এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শমিতের। একইদিনে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো খেলতে নামবেন হামজা চৌধুরী। লাল-সবুজের গর্জন এবার শোনা যাবে ফুটবল মাঠ থেকে!