১৯৬৮ সাল। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানায় কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আমার দাদা। সার্কেল অফিসার একদিন দাদাকে বললেন, ‘টিএও সাহেব, ডিসি স্যারের কাছে আমার আর সম্মান থাকল না।’

এ এলাকায় ম্যাট্রিক পাস কোনো বউ পেলাম না, যাঁকে পরিবার পরিকল্পনার ভিজিটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায়। দাদা খুশি মনে বললেন, ‘আমার সেজ ছেলের বউ এসএসসি পাস। বাড়িতে গিয়ে আলাপ করে আপনাকে জানাব।’

কিন্তু সেদিনই নাম পাঠানোর শেষ তারিখ। বাড়িতে আলোচনা ছাড়াই নাম পাঠিয়ে দিতে দাদাকে একরকম বাধ্য করলেন সার্কেল অফিসার।

বাড়িতে এসে বিষয়টি জানালেন দাদা। তাঁর সেজ ছেলের বউ মানে আমার মা তো মহাখুশি। কিন্তু দাদি রেগে গেলেন, গজগজ করে বললেন, ‘পরিবার আবার পরিকল্পনা করে হয় নাকি?’

আমার বাবা মাকে বলেছিলেন, ‘মার্ক টোয়েন নামের একজন মার্কিন লেখক কী বলেছেন জানো? এগিয়ে যাওয়ার রহস্য হচ্ছে শুরু করা।’

মা খুব খুশি হলেন। তিনি যে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, খুশির আনন্দে সেটিও লুকিয়ে রাখলেন। চাকরিটা যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, সেই ভয়ে।

৯ মাসের ট্রেনিংয়ে রাজশাহী এলেন মা। আর ওই যে বাবুটা পেটে ছিল, সে–ও বড় হতে থাকল। অন্য যেসব আন্টিরা মায়ের সঙ্গে ট্রেনিং করছিলেন, তাঁদের যেন কাজ হয়ে দাঁড়াল ভালোবেসে মায়ের বিভিন্ন কাজ করে দেওয়া।

প্রথম মা হচ্ছেন, এই আনন্দ ও আতঙ্কে অস্থির থাকতেন মা। বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছা হতো। নানির কাছে যেতে ইচ্ছা হতো, কিন্তু যেতে না পেরে মন খারাপ হতো। এমনই এক মনখারাপের দিনে হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলেন। এ ঘটনায় তেমন কোনো ক্ষতি অবশ্য হলো না, তবে হতে পারত। সে রাতেই মাথাভর্তি চুল আর সুস্বাস্থ্য নিয়ে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হলো। খবর পেয়ে পরের দিনই ছুটে এলেন বাবা। কোলে নিয়ে তাঁর মনে হলো, এ তো সাক্ষাৎ পরির বাচ্চা, ভুলে পৃথিবীতে চলে এসেছে।

যে দেশে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার, সে দেশে আমার মায়ের চাকরি পাওয়াটা আমার কাছে মনে হয় এ যুগের রূপকথা।

আরও পড়ুনশহরে ফ্ল্যাট আমি ঠিকই নিয়েছি, কিন্তু মা আর কোনো দিন এলেন না১০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে সাবেক এমপি বিপ্লবের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জের শহরে শ্রমিক সজল হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে এই রায় দেওয়া হয়। 

মুন্সীগঞ্জ শহরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে সজল হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবকে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়।

গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মুন্সীগঞ্জ শহরে সজল নামে এক শ্রমিক নিহত হন। 

মঙ্গলবার সকালে আআদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সজীব দে ফয়সাল বিপ্লবকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। রাষ্ট্রের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম আর ফয়সাল বিপ্লবের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন, অ্যাডভোকেট শাহিন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ফয়সাল বিপ্লবকে গত ২২ জুন ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে তাকে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলার আসামি দেখিয়ে ঢাকা আদালতে ওঠানো হয়। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।

গতকাল সোমবার দুপুরে তাকে মুন্সীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। আদালতের নির্দেশে ফয়সাল বিপ্লবকে আবারো মুন্সীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মীরা ফয়সাল বিপ্লবের বিচার চেয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সেপ্রেকটর মো. কামরুল ইসলাম মিয়া বলেন, “মুন্সীগঞ্জে সজল হত্যা মামলায় ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে ফয়সাল বিপ্লবকে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তার ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শুনানি শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে মোহাম্মদ সজলসহ তিনজন নিহত হন এবং দুইজন গুরুতরসহ আহত হন দুই শতাধিক ছাত্র জনতা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঢাকা/রতন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ