নদীভাঙনে দেবে গেছে সেতু, ভেঙে গেছে রাস্তা, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি
Published: 11th, May 2025 GMT
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। সর্বশেষ গত বুধবার নতুন করে দেবে গেছে একটি সেতু, ভেঙে পড়েছে রাস্তা। নদীভাঙনের কারণে হুমকিতে আছে আরও ৮ থেকে ১০টি বসতভিটা। নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিস্তীর্ণ জনপদসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় লোকজন জানান, এক যুগ ধরে উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ফাজিলপুর গ্রামের পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ৩ থেকে ৪ বছরে নদীভাঙনের কারণে পৈলনপুর ও ফাজিলপুর গ্রামের অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পৈলনপুর ও ফাজিলপুর গ্রামের মধ্যবর্তী অংশটি নদীভাঙনের কবলে পড়ে। এতে ওই অংশের অন্তত ৩০০ মিটার রাস্তা ভেঙে গেছে এবং সেখানে থাকা একটি সেতু পুরোপুরি দেবে গেছে। ভাঙনের তীব্রতায় ভেঙে পড়া রাস্তার ওই অংশে ৫ থেকে ৮ ফুট গভীর হয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ঠিক পাড় ঘেঁষেই শেরপুর-বালাগঞ্জ রাস্তার অবস্থান। ফাজিলপুর গ্রামের পাশেই রাস্তাটি নদীভাঙনে দেবে গেছে। ভাঙনের শিকার রাস্তার ওই অংশে থাকা সেতুটি নদীর দিকে হেলে পড়েছে। রাস্তা দেবে বিশাল গর্ত তৈরি হওয়ায় শেরপুর ও বালাগঞ্জ অংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন (৩৫) পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। তিনি জানান, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে দুই দফা গাড়ি বদলাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ কারণে বিশেষ করে যাঁরা মালামাল পরিবহন করছেন, তাঁদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় স্থানীয় মানুষজন বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শেরপুর-বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে যাত্রী পরিবহন করে ফাজিলপুর গ্রামের কিশোর সানি মিয়া (১৭)। সে জানায়, সড়ক দিয়ে আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের বাসিন্দা প্রতিদিন চলাচল করেন। এ ছাড়া গড়ে কয়েক শ যানবাহন এ সড়কে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। রাস্তা ভেঙে পড়ায় যানবাহনের চলাচল কমেছে।
এলাকাবাসী জানান, নদীভাঙনে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় শেরপুর থেকে আসা যানবাহন ফাজিলপুর গ্রামের পাশে গিয়ে থামছে। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা একটু দূরে থাকা খেতের জমি দিয়ে খানিকটা হেঁটে পৈলনপুর গ্রামের পাশে যান। পরে সেখানে যাত্রী পরিবহনের কাজে থাকা অন্য যানবাহনে চড়ে বালাগঞ্জ উপজেলা সদরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে যাচ্ছেন। ভাঙনে রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুই দফা যাত্রীদের গাড়ি বদলাতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।
ফাজিলপুর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া (২৯) বলেন, নদীভাঙনের শিকার এলাকা ফাজিলপুর থেকে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া শেরপুর থেকে ফাজিলপুরের দূরত্বও প্রায় ১১ কিলোমিটার। গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নদী থেকে একটি প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করায় ফাজিলপুর এলাকা তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। তবে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বাড়িঘরের সঙ্গে নদীভাঙনে গাছপালাও বিলীন হয়ে গেছে। বহু পরিবার সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
৩ থেকে ৪ বছরে নদীভাঙনের কারণে পৈলনপুর ও ফাজিলপুর গ্রামের অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প লনপ র পর বহন ঘরব ড় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মন্দির ভাঙচুরের অভিযোগে সরকার জানাল: রেলের জমি থেকে মণ্ডপ উচ্ছেদ
রাজধানীর খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরকার জানিয়েছে, রেলের জমিতে নির্মিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ আয়োজকরা সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। মণ্ডপের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের পাঁচ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।
তবে সরকারের এ বক্তব্যকে গ্রহণ না করে শুক্রবার শ্রী শ্রী সার্বজনীন মন্দির ভাঙার অভিযোগে প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোট। মহাজোট নেতারা দাবি করেন, ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরীর জমিতে রেললাইন নির্মাণ হওয়ায় মন্দির নির্মাণের অধিকার রয়েছে হিন্দুদের।
ভারতও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো অবৈধ জমি ব্যবহারের যুক্তিতে ভাঙার অনুমতি দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত হতাশ।
যা ঘটেছে
গত বছরের অক্টোবরে খিলক্ষেত রেল গেইট এলাকায় রেলের জমিতে পূজা মণ্ডপ স্থাপন করে স্থানীয়রা। সম্প্রতি জায়গাটি টিন দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এতে লেখা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক অর্পনা রায় দাস মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা। অর্পনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে।
সাইনবোর্ড লাগানোর পর স্থানীয় শ’খানেক মুসলমান গত মঙ্গলবার রাতে মন্দির স্থাপন না করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। টিনের বেষ্টনী অপসারণে উপস্থিত পুলিশকে চাপ দেয়। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার পর গত বৃহস্পতিবার রেলওয়ে খিলক্ষেত রেল গেইট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো টিনে বেষ্টনী বুলডোজার দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে মাথাবিহীন একটি প্রতিমা পড়ে রয়েছে।
সরকারের জবাব
এতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয়েছে অভিযোগে সমালোচনা হয় সামাজিক মাধ্যমে। আজ রেল উপদেষ্টার বরাতে প্রধান উপদেষ্টার রেল কর্তৃপক্ষের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় কিছু ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই খিলক্ষেতে রেলের জমিতে একটি পূজা মণ্ডপ তৈরি করে। পূজা শেষে মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার শর্তে অনুমতি দেয় রেল। পূজার আয়োজকরা মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পূজা শেষে বারবার বলার পরও তারা মণ্ডপটি সরিয়ে নেয়নি। উল্টো স্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এ প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও পূজার আয়োজকরা কর্ণপাত করেননি। এ পরিস্থিতিতে জনসাধারণের সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমি থেকে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলা হয়।
উপদেষ্টা জানান, প্রায় শতাধিক দোকানপাট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে। অস্থায়ী মন্দিরের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ প্রতিবাদ
গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী আমলে একের পর এক হিন্দু নির্যাতন হয়েছে সরকারি মদতে। কিন্তু সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। এবার দেখেছি পুলিশ নিজে মন্দিরের টিনের বেড়া খুলেছে। সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মন্দির ভেঙেছে, বুলডোজার দিয়ে প্রতিমা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
গোবিন্দ প্রামাণিক প্রশ্ন তুলে বলেন, রেলের জমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো না সরিয়ে হিন্দু মন্দির ধ্বংস কেন? এর মানে সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ও ওপর মহলে মৌলবাদের আখড়া তৈরি হয়েছে। ভাওয়ালের রাজার জমিতে রেললাইন হয়েছে। তাই সেখানে মন্দির অবৈধ নয়। হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন মানববন্ধনে।
আজ শাহবাগে সনাতনী জোটের মানববন্ধন থেকে বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না হলে খিলক্ষেত অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষে প্রদীপ কান্তি দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।