হবিগঞ্জে টিসিবির চালে ভেজাল, তদন্তে বেরিয়ে এল খাদ্য কার্যালয়ের অনিয়ম
Published: 12th, May 2025 GMT
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করছিলেন স্থানীয় একজন ডিলার। এ সময় নানু মিয়া নামে কার্ডধারী একজন ক্রেতা চাল দুর্গন্ধযুক্ত, পুরোনো ও ভাঙা চাল দেখে চেঁচিয়ে ওঠেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এ চাল নেবেন না। তাল মিলিয়ে আশপাশে থাকা আরও কয়েকজন ক্রেতা একই অভিযোগ করেন চাল নিয়ে।
শুধু একটি বিক্রয়কেন্দ্রেই নয়, হবিগঞ্জ শহরের সব কটি টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে এমন দুর্গন্ধযুক্ত, পুরোনো ও ভাঙা চাল পাওয়া গেছে। তবে চাল ছাড়া টিসিবির অন্য পণ্যসামগ্রী নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ নেই।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.
যদিও জেলা প্রশাসকের অভিযানের দুই দিন পার হতে চললেও এই দুর্গন্ধযুক্ত চাল আজও বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির চালের এ মান যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে সদর উপজেলা খাদ্য অফিসের ধান-চাল সংগ্রহশালার নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আজ দুপুরে ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রে চাল দেখতে চাইলে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা এ প্রতিবেদককে গুদামে ঢুকতে দেননি।
হবিগঞ্জ টিসিবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভর্তুকি মূল্যে চাল, তেল, ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর আওতায় হবিগঞ্জ শহরের ২৬টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। ৬ হাজার ১৬০ জন কার্ডধারীর বিপরীতে ৩০ হাজার ৮০০ কেজি চাল সংগ্রহ করেন টিসিবির ডিলাররা। সদর উপজেলার সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে খাদ্য অফিসের ডিলারের মাধ্যমে এ চাল সরবরাহ করা হয় টিসিবির ডিলারদের কাছে।
ক্রেতারা সরাসরি এ চাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এসব চাল দুর্গন্ধযুক্ত ও অতি পুরোনো ও অর্ধেকের বেশি ভাঙা। ৩০ টাকা কেজিতে এ চাল কেনা লোকসান। ক্রেতাদের প্রশ্ন, এ বাজে চাল টিসিবিতে এল কীভাবে। শহরের সব কটি টিসিবির ডিলার চাল নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
টিসিবির হবিগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা সংস্থার উপপরিচালক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ চাল সরাসরি সংগ্রহ করিনি। খাদ্য অফিসের নিজস্ব ডিলাররা আমাদের (টিসিবি) ডিলারদের সরবরাহ করেছেন। এর দায় তাঁদের। আমরা আমাদের ডিলারদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি, ভেজাল জিনিস কোনোভাবে জনগণকে দেওয়া যাবে না।’
হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান-চাল ক্রয় করে থাকে। এর আওতায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রটি হবিগঞ্জ শহরের গরুরবাজার এলাকায় অবস্থিত। দুর্গন্ধযুক্ত চালগুলো তারাই টিসিবিকে দিয়েছে।
ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় চাল কলমালিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিবছর সরকার কয়েক কোটি টাকার চাল সংগ্রহ থাকে। জনগণের অর্থ লুটপাটটা মূলত এখান থেকেই হয়।
অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনধন চন্দ্র দাস বলেন, তিনি এ গুদামের দায়িত্ব নিয়েছেন দুই মাস আগে। তাঁর আগের কর্মকর্তা যে চাল সংগ্রহ করে গেছেন, তিনি সে চাল টিসিবির কাছে সরবরাহ করেছেন। জেলা প্রশাসক তদন্তে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁকে আমরা বলেছি, মানহীন চালগুলো সরিয়ে আমরা ভালো চাল সরবরাহ করব।’ ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করেই তাঁরা এ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে থাকেন। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে এর দায় পূর্বের কর্মকর্তাদের।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের গোডাউনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল কর মকর ত র সরক র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
লালমনিরহাটে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় হেলাল হোসেন (৪৫) নামের এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার তিনি বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে থানায় মামলাটি করেন।
হেলাল হোসেন স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘আলোর মনি’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পূর্বশত্রুতার জেরে উপজেলার মহেন্দ্রনগরের মকড়া ঢঢগাছ গ্রামে তাঁর ওপর হামলা হয়। এ সময় তাঁর মা শামসুন্নাহার বেগমও আহত হন। তাঁরা দুজন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে পুলিশ জুয়ার আসর থেকে স্থানীয় আবদুল আজিজকে আটক করে। পরে মুচলেকা দিয়ে তিনি ছাড়া পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আজিজের পরিবার হেলালকে দায়ী করে হুমকি দিতে থাকে। হেলাল চলতি বছরের ১ মে এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত শনিবার রাতে পেশাগত কাজে শহরে যাওয়ার পথে একই এলাকার মকবুল হোসেন, তাঁর ছেলে সোহরাব ও আবদুল আজিজ এবং তাঁদের স্বজনেরা হেলালকে আটকে লাঠি ও রড দিয়ে মারধর করেন এবং শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালান। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা হয়। চিৎকার শুনে তাঁর মা এগিয়ে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। স্থানীয় লোকজন মা-ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরন্নবী বলেন, মামলার পরই প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেলাল হোসেন বলেন, ‘২০১২ সালেও সংবাদ প্রকাশের জেরে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছিলাম। এবার গ্রামের বাড়ির এলাকায় হামলার শিকার হলাম। আমি দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’