হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ সোমবার দুপুরে টিসিবির পণ্য বিতরণ করছিলেন স্থানীয় একজন ডিলার। এ সময় নানু মিয়া নামে কার্ডধারী একজন ক্রেতা চাল দুর্গন্ধযুক্ত, পুরোনো ও ভাঙা চাল দেখে চেঁচিয়ে ওঠেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এ চাল নেবেন না। তাল মিলিয়ে আশপাশে থাকা আরও কয়েকজন ক্রেতা একই অভিযোগ করেন চাল নিয়ে।

শুধু একটি বিক্রয়কেন্দ্রেই নয়, হবিগঞ্জ শহরের সব কটি টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে সরেজমিন গিয়ে এমন দুর্গন্ধযুক্ত, পুরোনো ও ভাঙা চাল পাওয়া গেছে। তবে চাল ছাড়া টিসিবির অন্য পণ্যসামগ্রী নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ নেই।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.

ফরিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতাদের অভিযোগ পেয়ে সদর উপজেলার সরকারি ধান-চাল সংগ্রহশালায় আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ভেজাল চালের সন্ধান পেয়েছেন তিনি। এ সংগ্রহশালা থেকেই পুরো জেলায় টিসিবির চাল সরবরাহ করা হয়।

যদিও জেলা প্রশাসকের অভিযানের দুই দিন পার হতে চললেও এই দুর্গন্ধযুক্ত চাল আজও বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির চালের এ মান যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে সদর উপজেলা খাদ্য অফিসের ধান-চাল সংগ্রহশালার নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আজ দুপুরে ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রে চাল দেখতে চাইলে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা এ প্রতিবেদককে গুদামে ঢুকতে দেননি।

হবিগঞ্জ টিসিবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভর্তুকি মূল্যে চাল, তেল, ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর আওতায় হবিগঞ্জ শহরের ২৬টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। ৬ হাজার ১৬০ জন কার্ডধারীর বিপরীতে ৩০ হাজার ৮০০ কেজি চাল সংগ্রহ করেন টিসিবির ডিলাররা। সদর উপজেলার সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে খাদ্য অফিসের ডিলারের মাধ্যমে এ চাল সরবরাহ করা হয় টিসিবির ডিলারদের কাছে।

ক্রেতারা সরাসরি এ চাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এসব চাল দুর্গন্ধযুক্ত ও অতি পুরোনো ও অর্ধেকের বেশি ভাঙা। ৩০ টাকা কেজিতে এ চাল কেনা লোকসান। ক্রেতাদের প্রশ্ন, এ বাজে চাল টিসিবিতে এল কীভাবে। শহরের সব কটি টিসিবির ডিলার চাল নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

টিসিবির হবিগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা সংস্থার উপপরিচালক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ চাল সরাসরি সংগ্রহ করিনি। খাদ্য অফিসের নিজস্ব ডিলাররা আমাদের (টিসিবি) ডিলারদের সরবরাহ করেছেন। এর দায় তাঁদের। আমরা আমাদের ডিলারদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি, ভেজাল জিনিস কোনোভাবে জনগণকে দেওয়া যাবে না।’

হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান-চাল ক্রয় করে থাকে। এর আওতায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রটি হবিগঞ্জ শহরের গরুরবাজার এলাকায় অবস্থিত। দুর্গন্ধযুক্ত চালগুলো তারাই টিসিবিকে দিয়েছে।

ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় চাল কলমালিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিবছর সরকার কয়েক কোটি টাকার চাল সংগ্রহ থাকে। জনগণের অর্থ লুটপাটটা মূলত এখান থেকেই হয়।

অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনধন চন্দ্র দাস বলেন, তিনি এ গুদামের দায়িত্ব নিয়েছেন দুই মাস আগে। তাঁর আগের কর্মকর্তা যে চাল সংগ্রহ করে গেছেন, তিনি সে চাল টিসিবির কাছে সরবরাহ করেছেন। জেলা প্রশাসক তদন্তে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁকে আমরা বলেছি, মানহীন চালগুলো সরিয়ে আমরা ভালো চাল সরবরাহ করব।’ ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করেই তাঁরা এ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে থাকেন। এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে এর দায় পূর্বের কর্মকর্তাদের।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ কেন্দ্রের গোডাউন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল কর মকর ত র সরক র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কোমরে ব্যথা হয় যে ৫ বদভ্যাসে

বর্তমানে পিঠে বা কোমরে ব্যথা প্রচলিত সমস্যা। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, ডেস্কটপে বসে কাজ করা কোমর ব্যথা বাড়িয়ে দেওয়ার একটি বড় কারণ। এ ছাড়া পিঠ বা কোমর ব্যথা বাড়ানোর রয়েছে আরও অনেক কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বসার ভুলভঙ্গির কারণে কোমরে বা পিঠে ব্যথা হয়। পাশাপাশি ভুলভঙ্গিতে বসার কারণে শ্বাসকষ্ট, বদহজম, সারকুলেটরি সিস্টেম এবং শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়। 
দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি বদভ্যাসের কারণে কোমরে ব্যথা হয়। যেমন– পেছনের হিপ পকেটে মানিব্যাগ ব্যবহার করা: পেছনের পকেটে মানিব্যাগ ব্যবহার করলে পেলভিস টুইস্ট হয়। এতে পাইরিফরমিস মাসেলের ওপর চাপ পড়ে। ফলে সায়াটিকা, পাইরিফরমিস সিনড্রোম এবং কোমর ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করা: আজকাল অনেকেই কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করেন। ব্যাগে ওয়ালেট, মোবাইল ফোন, নোট বুক, আইপেড, মেকআপ বক্স, ল্যাপটপসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও ভারী স্কুলব্যাগ বহনের কারণে পিঠের ব্যথায় ভোগে। গবেষকরা বলছেন, শিশুরা তার ওজনের ১৫ শতাংশের অধিক ওজন কাঁধে বহন করবে না । এতে তাদের মধ্যে টেনশন হেডেক, কাঁধে ব্যথা, ফরোয়ার্ড হেড পোশ্চার ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সঠিক জুতা ব্যবহার না করা: বর্তমানে অনেক নারীই উঁচু হিল পরেন। এতে ওয়াকিং গেট অর্থাৎ হাঁটার ভঙ্গি পরিবর্তন হয়। সঠিক ভঙ্গিতে না হাঁটার ফলে কোমর, হিপ, হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে কোমর, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা: গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা বসে থাকি। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক তাঁর জীবনের ৫০-৭০ শতাংশ সময় বসে কাটান। দীর্ঘ সময় বসার ফলে কোমরের অর্থাৎ লামবারের লোরডোটিক কার্ভ কমে যায়, মেরুদণ্ডে সেন্টার অব গ্রাভিটি পরিবর্তনের ফলে স্পাইনের ওপর চাপ পড়ে। স্পাইনের ওপর চাপ পড়ার কারণে ডিক্সে চাপ পড়ে এবং কোমর ব্যথা হয়।
ঠিকভাবে এক্সারসাইজ না করা: অনেকেই না জেনে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করেন। অথচ অনেকেই জানেন না কোন ধরনের এক্সারসাইজ কার জন্য ঠিক, কার জন্য ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে কোনো এক্সারসাইজ করার আগে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।v 

[মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ]
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোমরে ব্যথা হয় যে ৫ বদভ্যাসে
  • নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন
  • গৃহকর্মী সরবরাহ করে হ্যালো টাস্কের বছরে আয় এখন ১ কোটি টাকা
  • ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় সিন্ধু পানিচুক্তি
  • ‘যাই আর ঘুইরা আহি, ঔষধও পাই না চিকিৎসাও পাই না’
  • যুদ্ধের আবহে এক সপ্তাহে পাকিস্তানের শেয়ার সূচক কমেছে ৬,৯৩৯ পয়েন্ট
  • পুতিনের প্রতি ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান ইউরোপের নেতাদের
  • ন্যায্য মূল্য পান না পেঁয়াজচাষি, মজুতদারদের পোয়াবারো
  • চালের দাম আরও কমেছে ডিম-সবজির বাজার চড়া