জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও এবং কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি শহীদ পরিবারের সদস্যদের
Published: 12th, May 2025 GMT
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর এবং কোষাধ্যক্ষ ওয়াকার আহমেদের অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে শহীদ সায়েমের মা শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জীবন নিয়েছে যে স্বৈরাচার, ওই স্বৈরাচারের লোকজন এখানে কীভাবে থাকবে? তাহলে আমাদের ছেলেদের হত্যার বিচার আমরা কোথায় পাব, কীভাবে পাব? আমাদের দুঃখ তো ওই স্বৈরাচারের লোকজন বুঝবে না। শহীদ ফ্যামিলিই শহীদদের যন্ত্রণা বুঝবে। বাইরে থেকে আসা ওই লোক শহীদের যন্ত্রণাটা বুঝবে না। একটা মায়ের মনের ভেতরে যে দুঃখ, কষ্ট, হাহাকার, এটা শহীদ ফ্যামিলিই বুঝবে।’
শিউলি আক্তার আরও বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, ওনাকে (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) আমরা এখানে দেখতে চাই না। আমাদের শহীদ পরিবারের মধ্যে অনেকে যোগ্য আছেন, তাঁদের এখানে বসানো হোক। তাঁদের যদি বসানো না হয়, তাহলে জুলাই ফাউন্ডেশন কিসের, জুলাই ফাউন্ডেশন তো শহীদদের ও আহতদের জন্য। তাহলে কেন স্বৈরাচারের লোকজন এখানে বসবে। ওনার কোনো অধিকার নাই এখানে বসার। আমাদের ছেলেরা রক্ত দিচ্ছে দেশের জন্য, স্বৈরাচারের লোকজন বসার জন্য নয়।’
শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এটা আমাদের সরকার। আমরা আমাদের সন্তানদের বিচার দেখে যেতে পারব; কিন্তু না হচ্ছে গ্রেপ্তার, না হচ্ছে বিচার। সব জায়গায় স্বজনপ্রীতি এবং টাকার সাথে সমঝোতা চলছে।’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শহীদ পরিবারদের দুর্বল ভাববেন না, আপনারা যদি দ্রুত বিচারের অগ্রগতি না করেন, তাহলে আমরা অচিরেই রাজপথে নামব এবং সচিবালয় ঘেরাও করব।’
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আপনারা বিলাসী জীবন বাদ দিন, আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচারের দিকে নজর দিন। আজ জুলাই শহীদ পরিবার রাস্তায় মানববন্ধন করছে, আপনাদের লজ্জা থাকা উচিত।’
রাজধানীর উত্তরায় নিহত ছয় বছরের শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা (৮ মে) ড.
মানববন্ধনে শহীদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুল মাখমিন বলেন, যাঁদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা পদ পেয়েছেন, আজ তাঁরাই তাঁদের অবমূল্যায়ন করছেন। ফাউন্ডেশনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে শহীদ পরিবার থেকেই নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
৮ মে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান শহীদ মীর মাহমুদুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। একই সঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামালের নাম ঘোষণা করা হয়।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শহীদ নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা আবুল হাসান, শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল ভূঁইয়া, শহীদ রমিজ উদ্দিন আহমেদের বাবা রকিবুল ইসলামসহ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব র চ র র ল কজন পর ব র র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল
সোনারগাঁয়ে পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে গোপনে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান–সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট স্কুলের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম এবং একাধিক অভিযোগের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ইউনিয়নকে যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে মাসুম ও মনিরুজ্জামান নিজেদের ইচ্ছেমতো সব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়। পরে এলাকাবাসী মালামাল ভর্তি গাড়ি আটক করে। কিন্তু এখন উল্টো ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করে বিক্রি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
স্কুলের মতো পবিত্র জায়গায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী রাতেই মালামাল আটকে দিয়ে প্রমাণ করেছে—এ এলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই প্রশাসন যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
এলাকাবাসীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও পরিচালনা কমিটিতে সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম জানান, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে আমাদের বিতর্কিত করতে বিক্রি করা মালামাল চুরির ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মিটিং করেছি৷
অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, আমরা স্কুলের একটি কমিটি করে বিক্রি করেছি। তবেমাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো অনুমতি নেই নি। বিক্রি করার পর গাড়িতে উঠাতে রাত হয়ে যায়। এখানে কোনো চুরির ঘটনা ঘটে নি।
উল্লেখ্য, গত (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের নির্দেশে রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে পঞ্চমীঘাট স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়। যা স্থানীয় এক ভাঙ্গারীর পিক-আপ ভ্যানে নেয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।