জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর এবং কোষাধ্যক্ষ ওয়াকার আহমেদের অপসারণ দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে শহীদ সায়েমের মা শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জীবন নিয়েছে যে স্বৈরাচার, ওই স্বৈরাচারের লোকজন এখানে কীভাবে থাকবে? তাহলে আমাদের ছেলেদের হত্যার বিচার আমরা কোথায় পাব, কীভাবে পাব? আমাদের দুঃখ তো ওই স্বৈরাচারের লোকজন বুঝবে না। শহীদ ফ্যামিলিই শহীদদের যন্ত্রণা বুঝবে। বাইরে থেকে আসা ওই লোক শহীদের যন্ত্রণাটা বুঝবে না। একটা মায়ের মনের ভেতরে যে দুঃখ, কষ্ট, হাহাকার, এটা শহীদ ফ্যামিলিই বুঝবে।’

শিউলি আক্তার আরও বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, ওনাকে (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) আমরা এখানে দেখতে চাই না। আমাদের শহীদ পরিবারের মধ্যে অনেকে যোগ্য আছেন, তাঁদের এখানে বসানো হোক। তাঁদের যদি বসানো না হয়, তাহলে জুলাই ফাউন্ডেশন কিসের, জুলাই ফাউন্ডেশন তো শহীদদের ও আহতদের জন্য। তাহলে কেন স্বৈরাচারের লোকজন এখানে বসবে। ওনার কোনো অধিকার নাই এখানে বসার। আমাদের ছেলেরা রক্ত দিচ্ছে দেশের জন্য, স্বৈরাচারের লোকজন বসার জন্য নয়।’

শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এটা আমাদের সরকার। আমরা আমাদের সন্তানদের বিচার দেখে যেতে পারব; কিন্তু না হচ্ছে গ্রেপ্তার, না হচ্ছে বিচার। সব জায়গায় স্বজনপ্রীতি এবং টাকার সাথে সমঝোতা চলছে।’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শহীদ পরিবারদের দুর্বল ভাববেন না, আপনারা যদি দ্রুত বিচারের অগ্রগতি না করেন, তাহলে আমরা অচিরেই রাজপথে নামব এবং সচিবালয় ঘেরাও করব।’

উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আপনারা বিলাসী জীবন বাদ দিন, আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচারের দিকে নজর দিন। আজ জুলাই শহীদ পরিবার রাস্তায় মানববন্ধন করছে, আপনাদের লজ্জা থাকা উচিত।’

রাজধানীর উত্তরায় নিহত ছয় বছরের শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা (৮ মে) ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা থেকে যখন বের হচ্ছিলাম, তখন জুলাই ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকার আহমেদ শহীদ ইয়ামিনের বাবার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছেন। তিনি শহীদ ইয়ামিনের বাবাসহ শহীদদের পিতাদের “পাগল” এবং “ননসেন্স” এ ধরনের শব্দ উচ্চারণ করেছেন। ওনার এই আচরণ আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না, আমরা তার পদত্যাগ চাই।’

মানববন্ধনে শহীদ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলুল মাখমিন বলেন, যাঁদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা পদ পেয়েছেন, আজ তাঁরাই তাঁদের অবমূল্যায়ন করছেন। ফাউন্ডেশনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে শহীদ পরিবার থেকেই নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

৮ মে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান শহীদ মীর মাহমুদুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। একই সঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামালের নাম ঘোষণা করা হয়।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন শহীদ নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা আবুল হাসান, শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল ভূঁইয়া, শহীদ রমিজ উদ্দিন আহমেদের বাবা রকিবুল ইসলামসহ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব র চ র র ল কজন পর ব র র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন

নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান ও ধামুইরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলার মঙ্গলকোঠা আবাসিক এলাকায় ধামুইরহাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মঙ্গলকোঠা এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুই নারীকে মারধর করেন।

গৃহবধূ সামিরন খাতুন বলেন, ‘পৌরসভার লোকজন গাড়িতে করে আমাদের এলাকায় ময়লা ফেলতে এলে এলাকার সবাই মিলে বাধা দিই। বসতবাড়ির আশপাশে ময়লা ফেললে সমস্যা হবে বলে ইউএনওকে ময়লা না ফেলতে এলাকাবাসী অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউএনও আমাদের কথা না শুনে আমাকেসহ মিতুকে (অন্তঃসত্ত্বা নারী) নিজেই লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমরা ইউএনওর অপসারণসহ তাঁর কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

মানববন্ধনে স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ইউএনও আমার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে তুলেছে সবার সামনে। একজন ইউএনওর আচরণ এমন হলে আমরা বিচার কার কাছে পাব?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা একটি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ওই এলাকায় গেলে এলাকার কিছু লোক তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কয়েকজন অবৈধ দখলদার নারী-পুরুষ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আনসারদের গায়ে হাত তোলেন। নারীদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘সেখানে কারও গায়ে হাত তোলা হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, আজ মানববন্ধন করে কিছু লোক ইউএনওর বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যবসায়ীর উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণার দাবিতে ব্লকেড, মানববন্ধন
  • কুমিল্লায় ড্যাবের এক নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার অনুসারীদের মানববন্ধন
  • গণঅভ্যুত্থানে হত্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বিক
  • অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন
  • খুবির অধীনে মৎস্য বীজ খামার অন্তর্ভুক্তির দাবি
  • খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ ও প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
  • শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস