বৈষম্য ঘুচিয়ে নারীদের এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে: ফয়েজ আহমদ
Published: 15th, May 2025 GMT
তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম খাতে বৈষম্য ঘুচিয়ে নারী ও গ্রামের মানুষদের এগিয়ে নিতে ইন্টারনেট ও ডিভাইসে পিছিয়ে পড়াদের অ্যাক্সেস বাড়ানো এবং মুঠোফোনেই ব্যক্তি নিজেই যেন সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসিতে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, “এবার আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি একটা নিছক দিবস উদযাপনের বাইরে এসে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসকে ভিন্ন মাত্রায় উদযাপন করার। বিগত সরকারের আমলে এক নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে এই দিবসটি এ ক্যাটাগরি থেকে সি ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘আগে বাজেটে অযথা মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিয়ে মুখরোচক প্রকল্প দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হতো। বর্তমান সরকার সেই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসেছে। এবার বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠান বিটিআরসি কার্যালয়েই সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে—সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য।”
“এবার আয়োজনে আমরা বেশ কিছু ব্যতিক্রম কার্যক্রম রেখেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, গত এক বছরে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা কৃতি সন্তানদের সম্মাননা দেওয়া। পাশাপাশি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে এখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিযোগী তাদের আইডিয়াগুলো উপস্থাপন করেছে।”
বিশেষ সহকারী বলেন, “আজকের বিশ্বে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের যে গতি তা অভাবনীয়। এই গতিতে প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনযাপন কৌশল এবং কর্মসংস্থানের প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে তথ্য প্রযুক্তি অভাবনীয় ভূমিকা রাখছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১০ নম্বর লক্ষ্য অসমতার হ্রাস যা আমাদের এবার বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।তার মধ্যে নারী ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কম। একই সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও নারীদের সংখ্যা কম। অর্থাৎ ডিজিটাল গভর্নমেন্ট এবং রিলেটেড যে ইনডেক্সগুলো রয়েছে সেগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ এবং অ্যাক্সেস টু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং এক্সেস টু ডিজিটাল সার্ভিসেস দুটো ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহণ কম। আমাদের ডিজিটাল ট্রাসফর্মেশন এর যে পলিসিগুলো আছে এই পলিসিগুলো বিস্তারিতভাবে সঙ্গায়িত করতে হবে। আমাদের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, তাই তাদের এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে। আমাদের গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা নিয়ে অংশীজনদের-কাছে পৌঁছাতে হবে,” বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রকল্প বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “মুখোরোচক প্রকল্প না বাড়িয়ে এবং সরকারি ব্যয় কমিয়ে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধার মধ্যে থেকেই জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
আইসিটির বাজেট নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দেওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার বাজেট কম হবে।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ট আরস আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।
নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।
সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসুনির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’
সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য
চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’
চাকসু ভবন