ভারতীয় পর্যটকদের কাছে ১৩তম জনপ্রিয় শহর ঢাকা
Published: 16th, May 2025 GMT
করোনার আগের তুলনায় বর্তমানে ভারত থেকে ঢাকায় ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৩১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে ঢাকা ১৩তম জনপ্রিয় শহরে পরিণত হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার ভ্রমণকারীদের জন্যও ঢাকা একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ‘ট্রাভেল ট্রেন্ডস ২০২৫’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভ্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ গন্তব্যের মধ্যে আটটিই এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ।
অর্থনীতিতে ভ্রমণের অবদান ও পর্যটকদের ব্যয়ের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের আগ্রহ, রুচি ও উদ্দেশ্যনির্ভর চিন্তাভাবনাই এখন পর্যটনের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি।
শীর্ষে জাপান
২০২৫ সালের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) টোকিও ও ওসাকা যথাক্রমে বিশ্বের ১ ও ২ নম্বর শীর্ষ ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। জাপানের এই দুটি শহরের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপানের রাজধানী টোকিও ২০২৪ সালে এসে ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে শীর্ষে জায়গা করে নেয়।
২০২৪ সালে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক পর্যটক বাজার হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ছাড়া ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে।
মাস্টারকার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পর্যটকেরা ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছেন। ভারতীয় পর্যটকেরা ভ্রমণের জন্য এখন বেছে নিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় সব গন্তব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন আবুধাবি, হ্যানয় আর বালিতে। চীন ও ভারত মিলেই বৈশ্বিক ভ্রমণের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্পোর্টস ট্যুরিজম বা খেলাধুলাভিত্তিক পর্যটনের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিস টুর্নামেন্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজের মতো বড় আসরে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যান বলেন, বিশ্ব ভ্রমণে এখনো এগিয়ে আছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। টোকিও, সাংহাই, সিউল ও সিঙ্গাপুরের মতো গন্তব্যগুলো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।
২০২৪ সালের বেশির ভাগ সময়জুড়ে জাপানি ইয়েন দুর্বল থাকায় দেশটিতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কম খরচে ঘোরার সুযোগ থাকায় জাপান ভ্রমণকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল জনপ র য় ভ রমণ র র আগ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষ ২৪ লাখ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা টানা চার বছর ধরে বেড়েছে। দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মূলত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদন-২০২৫-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লাখ। এর আগের বছর (২০২৩ সালে) দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। ওই বছরও বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ বেড়ে ২৪ লাখ হয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় এটা দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে বন্যায় এবং ২০২০ সালে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এর চেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিলেন।
দুর্যোগ ছাড়াও দেশে গত বছর সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ২ হাজার ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে আইডিএমসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইডিএমসি বলেছে, গত বছরের বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শুধু জুন মাসেই ৭ লাখ ২৩ হাজার জনকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির ওপরের অংশের পানি শোষণ করার মতো পর্যাপ্ত অবস্থা না থাকা এবং নালা ও খালে পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার তীব্রতা বাড়িয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণেও বন্যার তীব্রতা বেড়েছিল। একই সময়ে বর্ষা শুরু হলে কয়েকটি নদী দিয়ে একসঙ্গে এত পানি নামার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নিয়ে কাজ করছেন সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুতি হচ্ছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে। যখন জলবায়ুর সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুতি হচ্ছে, তখন এটা মোকাবিলায় একটা দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা রয়েছে। তিনি বলেন, সামনে এমন দুর্যোগ ও বাস্তুচ্যুতি আরও বাড়বে, শুধু রাষ্ট্র এটা মোকাবিলা করতে পারবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার। সেটা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে হওয়া উচিত।
আইডিএমসি এবার দশম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা নজিরবিহীন। এক দশক আগে প্রথম প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সংখ্যার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের (২০২৩) চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। আর দুর্যোগের কারণে ৯৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে (২০২৩) ২৯ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফিলিপাইনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার জন। ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ ৩১ হাজার জন বাস্তুচ্যুত হন। চতুর্থ স্থানে থাকা চীনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৯ লাখ ২৬ হাজার জন।
গত বছর সংঘাত-সহিংসতার কারণে সবচেয়ে বেশি ৯১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সুদানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলি হামলায় শুধু গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লেবাননে।
আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক এক বিবৃতিতে বলেন, সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায় মানুষ।