করোনার আগের তুলনায় বর্তমানে ভারত থেকে ঢাকায় ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৩১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে ঢাকা ১৩তম জনপ্রিয় শহরে পরিণত হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার ভ্রমণকারীদের জন্যও ঢাকা একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ‘ট্রাভেল ট্রেন্ডস ২০২৫’ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভ্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ গন্তব্যের মধ্যে আটটিই এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ।

অর্থনীতিতে ভ্রমণের অবদান ও পর্যটকদের ব্যয়ের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের আগ্রহ, রুচি ও উদ্দেশ্যনির্ভর চিন্তাভাবনাই এখন পর্যটনের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি।

শীর্ষে জাপান

২০২৫ সালের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) টোকিও ও ওসাকা যথাক্রমে বিশ্বের ১ ও ২ নম্বর শীর্ষ ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। জাপানের এই দুটি শহরের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপানের রাজধানী টোকিও ২০২৪ সালে এসে ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে শীর্ষে জায়গা করে নেয়।

২০২৪ সালে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক পর্যটক বাজার হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ছাড়া ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে।

মাস্টারকার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পর্যটকেরা ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছেন। ভারতীয় পর্যটকেরা ভ্রমণের জন্য এখন বেছে নিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় সব গন্তব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন আবুধাবি, হ্যানয় আর বালিতে। চীন ও ভারত মিলেই বৈশ্বিক ভ্রমণের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্পোর্টস ট্যুরিজম বা খেলাধুলাভিত্তিক পর্যটনের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিস টুর্নামেন্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজের মতো বড় আসরে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড ম্যান বলেন, বিশ্ব ভ্রমণে এখনো এগিয়ে আছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। টোকিও, সাংহাই, সিউল ও সিঙ্গাপুরের মতো গন্তব্যগুলো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।

২০২৪ সালের বেশির ভাগ সময়জুড়ে জাপানি ইয়েন দুর্বল থাকায় দেশটিতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কম খরচে ঘোরার সুযোগ থাকায় জাপান ভ্রমণকারীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল জনপ র য় ভ রমণ র র আগ র

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা

দীর্ঘ নয় মাস পর শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। পরিকল্পনা ছিল, কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও বার-আউলিয়া নামে দুটি জাহাজ পর্যটকদের নিয়ে দ্বীপটিতে যাবে। তবে, শেষ মুহূর্তে মালিকপক্ষ এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘‘ট্যুরিজম বোর্ডের সফটওয়্যার এখনো চালু হয়নি। আবার দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার নিয়মে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এ কারণে ১ নভেম্বর থেকে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাবে না।’’

তিনি জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রায় নয় মাস পর দ্বীপটি উন্মুক্ত হলেও পুরো নভেম্বর মাসে পর্যটকদের দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- বিআইডব্লিউটিএ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌ যানকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের অনুমতি দিতে পারবে না। টিকিট ক্রয় করতে হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড; কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকবে, রাতে থাকা নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত পরিসরে রাত্রিযাপন সম্ভব হবে, আর ফেব্রুয়ারিতে সম্পূর্ণভাবে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকই দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন।

সেন্টমার্টিনের নাজুক পরিবেশ রক্ষায় একাধিক বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়া বনে প্রবেশ বা ফল সংগ্রহ ও বিক্রয়, কাছিম-পাখি-প্রবালসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা অন্য কোনো মোটরচালিত যান চলবে না। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকজাত সামগ্রী- যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের বোতল-বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন বাজার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “সেন্টমার্টিন কক্সবাজার শহর থেকে অনেক দূরে। আসতে-যেতে দিনের পুরো সময়টা চলে যায়। তাই রাত্রিযাপন ছাড়া পর্যটক এখানে আসবে না। বর্তমানে আমরা ক্ষতির মুখে জীবনযাপন করছি।”

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, “দ্বীপের অর্থনীতি এখন প্রায় পঙ্গু। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্রলার, দোকান সবখানেই নেমে এসেছে অচলাবস্থা। স্থানীয় মানুষের জীবিকা পুরোপুরি পর্যটননির্ভর। এখন তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার পক্ষে, তবে জীবিকার দিকটাও যেন সরকার বিবেচনায় নেয় এটাই আমাদের মিনতি।”

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “দ্বীপে মোটরযান নিষিদ্ধ ও পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি থাকবে। দ্বীপে পর্যটক পরিবহনের জন্য নৌযানগুলোকে অনুমতি নিতে হবে। স্থানীয়দের জন্য অনুমতির দরকার নেই। পরিবেশ রক্ষায় এ পদক্ষেপ জরুরি।”

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দিনের পর্যটন মেলায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা