সাভারে চিত্র সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ
Published: 17th, May 2025 GMT
সাভারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার জেরে ৭১ টিভির চিত্র সাংবাদিক মো. উজ্জ্বল হোসেনকে (৪২) পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন এলাকাবাসী।
শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের উত্তর চাপাইন এলাকার একটি মসজিদের সামনে ঘটনাটি ঘটে।
আহত সাংবাদিক উজ্জ্বল হোসেন উত্তর চাপাইনের লালটেক এলাকার মো.
আরো পড়ুন:
জবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিতুমীর কলেজে বিক্ষোভ
শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ
অভিযুক্তরা হলেন- একই এলাকার ওহাব হাজী (৬০), তার ছেলে সাদ্দাম (৩৫), অতনু (২৫), হৃদয় (২০), মৃত মোস্তফার ছেলে ইমন (২৫), রবির ছেলে মিনহাজ (২২), জাহিদের ছেলে অন্তর (২১), আরোত আলীর ছেলে সাইমন (২০), সাব্বির (২২), জনি (২০) ও মুসা (২০)।
ভুক্তভোগী উজ্জ্বল হোসেনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন অভিযুক্তরা। এসব কাজে বাধা দেওয়ার কারণে তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হয়। আজ সকাল ১১টার দিকে সংবাদ সংগ্রহে বের হলে তার ওপর হামলা চালায় অভিযুক্তরা।
তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের সময় থেকে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এলাকায়। সরকার পরিবর্তন হলেও তারা কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। আমি কেবল তাদের সতর্ক করেছিলাম। এ জন্যই আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।”
সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক নয়। বিষয়টি তদন্তাধীন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দিঘির ঘাটে চাচির সঙ্গে শৈশবের গল্প
রাজিয়া সিরাজ, বয়স প্রায় ৭৬। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছোট চাচি। দেখা হতেই চাচির সঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে উঠলেন ড. ইউনূস– ‘অ চাচি অনে গম আছন নি, আঁরে দোয়া গইত্য লাইগ্গন নে?’ (চাচি, আপনি ভালো আছেন? আমাকে দোয়া করছেন তো!) আদরের ইউনূসকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হলেন রাজিয়া, বললেন– ‘আঁই গম আছি অ–বা, তোঁয়ারে আঁই নোয়াজ পরি পরি দোয়া গরি’ (আমি ভালো আছি বাবা, তোমাকে নামাজ পড়ে পড়ে দোয়া করি।’
এরপর চাচিকে নিয়ে নজু মিয়া সওদাগর দিঘির ঘাটে গিয়ে বসলেন ড. ইউনূস। পাশেই ছিলেন রাজিয়ার সন্তান, ড. ইউনূসের দুই চাচাতো ভাই ব্যবসায়ী শওকত ইকবাল দুলাল ও কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ সিটি করপোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, ছিলেন আরেক চাচি বুলবুল খালেদাও (৭৮)। ছোট্ট পুকুর ঘাট, সেই ঘাটে বসে পালাক্রমে সবাই ছবি তুললেন নোবেলজয়ীর সঙ্গে, গল্প করলেন। ড. ইউনূস নিজেই কাছে ডেকে নিলেন নাতি জুনাইনা সালিন, রুদসী ইকবাল, রুদ্দাত আবেদীনকে। সবাই মিলে আড্ডা দিলেন, রুদসী, রুদ্দাতদের কাছে এ যেন এক স্বর্গীয় সময়।
প্রায় আট বছর পর প্রিয় গ্রাম হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে এলেন অধ্যাপক ড. ইউনূস, সেখানে হারানো শৈশবকে খুঁজে ফিরলেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নিতে এসে নিজের গ্রাম ঘুরে গেলেন দেশের কাণ্ডারি। বিকেল ৩টার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেন তিনি, প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। ঘুরে দেখেন তার জন্মভিটা। তাকে কাছে পেয়ে অন্যরকম আনন্দে মেতে উঠেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী।
বাড়ি গিয়ে দাদা-দাদির কবর জেয়ারত শেষে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিলিত হন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ছড়া, শ্লোক বলে উপস্থিত গ্রামবাসীকে বিমোহিত করেন। তার মুখে পুরোনো দিনের ঠাটের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হন সবাই।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনে যেন ঈদের আনন্দ আসে বাথুয়ার নজু মিয়া সওদাগর বাড়িতে। চাচাতো ভাই কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ সিটি করপোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনসহ পরিবারের সদস্যরা সাদামাটা আয়োজনে ড. ইউনূসকে বরণ করে নেন। বাড়িতে গিয়ে দাদা-দাদিসহ মুরব্বিদের কবর জেয়ারত করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় মোনাজাত পরিচালনা করেন মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ।
আপনারা যখন দিঘির পাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তখন কী কথা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ড. ইউনূস তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়েছেন। আমাদের সঙ্গে আড্ডায় শৈশবের অনেক কথা বলেছেন তিনি– বাড়ির দিঘিতে কীভাবে গোসল করতেন, দূর থেকে দৌড়ে এসে ঝাঁপ দিতেন, সাঁতার কাটতেন– আরও কত কী! অনেক সময় দিঘিতে কলার ভেলা তৈরি করে চড়তেন।’
অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, ‘ড. ইউনূস ছোটবেলার একটা কথা বলে আমাদের বেশ হাসিয়েছেন, সেটা হলো উনার মা-বাবা চাইতেন না তিনি দুপুরে দিঘিতে নামুক। তাই তাকে যক্ষের ভয় দেখানো হতো, বলা হতো– যক্ষের অনেক লম্বা চুল থাকে, দুপুরে নির্জন সময় যক্ষ দিঘির পাড়ে তার লম্বা চুল শুকাতে দেয়। ওই সময় পুকুর পাড়ে গেলে যক্ষ বাচ্চাদের টেনে দিঘির পানিতে নিয়ে যায়। ছোটবেলায় যক্ষকে খুব ভয় পেতেন– এ কথা বলে একচোট হাসেন ড. ইউনূস।’
ড. ইউনূসের আরেক চাচাতো ভাই শওকত ইকবাল আড্ডার আরও কিছু কথা তুলে ধরেন– ‘ছোটবেলায় সুপারি গাছের ঢাল দিয়ে
গাড়িতে চড়ার কথা ভুলেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি আমাদের কাছে সেই গল্প করেছেন দীঘির ঘাটে বসে। পাড়ায় তিনি নাটক করতেন। মহরম উপলক্ষে হতো সেই নাটক। উনার ভাইরাও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’ কী দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করেছেন–এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস তো এই বাড়ির ছেলে, তার জন্য এলাহী আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাইনি। যেহেতু তিনি সরকার–প্রধান, তার খাবারের সাথে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত, ডাক্তারি পরীক্ষাসহ আরও নানা বিষয় আছে। বাড়িতে তিনি এক গ্লাস পানিও খাননি।’
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাবর্তনের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য কোন খাবারের আয়োজন ছিল না বলে জানিয়েছেন উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘স্যার অনুষ্ঠানে শেষে উনার অর্থনীতি বিভাগে গিয়েছিলেন। স্মৃতিচারণ করেছেন। উনার জন্য আমরা কোন খাবারের আয়োজন করিনি, নিষেধ ছিল।’
রুদ্দাত আবেদীন পড়ে অষ্টম শ্রেণীতে, ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সে ড. ইউনূসের চাচাত ভাই অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনের ছেলে। নোবেলজয়ীর সঙ্গে দেখা হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে রুদ্দাত বলে, ‘এই নোবেলজয়ী কিন্তু আমার বড় আব্বু। বছর পাঁচেক আগে বড় আব্বুর সঙ্গে তার পাঁচলাইশের বাড়ি নিরিবিলিতে দেখা হয়েছিল। তবে এবারের সাক্ষাতের বিশেষত্ব রয়েছে, কারণ আমার বড় আব্বু এখন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, দেশের কাণ্ডারী।’
বড় আব্বুর সঙ্গে কী কথা হয়েছে? জানতে চাইলে রুদ্দাতের বোন জুনাইনা সালিন বলে, ‘বড় আব্বুকে সালাম দিতেই তিনি আমার নাম ধরে ডাকলেন, এত বড় মানুষ, এত ব্যস্ত মানুষ তিনি, কিন্তু আমার নাম মনে রেখেছেন, কী যে ভালো লেগেছে তখন! এরপর তিনি আমাকে ভালো করে পড়াশোনা করার কথা বলেছেন, বলেছেন–দেশকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে।’
শওকত ইকবালের মেয়ে রুদসী ইকবাল জেঠা ড. ইউনূসের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। সে প্রেসিডেন্সি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ লেবেলের শিক্ষার্থী। বড় আব্বুর সঙ্গে কী কথা হয়েছে? জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমি কোথায় পড়ি, কোন সাবজেক্টে পড়ি এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন। আমার পড়াশোনার খবর শুনে তিনি খুশি হয়েছেন।’ পরে রুদসী, রুদ্দাত ও জুনাইনা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বিশ্বজয়ী বই ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’তে অটোগ্রাফ নিয়েছে।
বিদায় বেলায় হঠাৎ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চোখ পড়ে সমবয়সী ও বন্ধু মোহাম্মদ শফির দিকে। তিনি শফিকে মঞ্চে ডাকলেন, বুকে জড়িয়ে ধরলেন। একসময় সবাইকে বিদায় জানিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাথুয়ার মাটি ও মানুষের সন্তান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাজার হাজার মানুষ তার বিদায়–যাত্রা দেখছেন, দেখছেন অশতিপর বৃদ্ধ মোহাম্মদ শফিও, চোখটা তার ভেজা। আবার হবে তো দেখা...!