ইউরোপিয়ান ফুটবলে অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। গত মৌসুমে জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার লেভারকুসেন যখন অপরাজিত মৌসুম শেষ করার অপেক্ষায় ছিল, তখন এই রেকর্ড নিয়ে অনেক মাতামাতিও হয়েছে।

তবে এবার লেভারকুসেনের উল্টো চিত্রই উপহার দিচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাব এসকে দিনামো চেস্কে বুদেয়োভিৎসে, যারা এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ৩৫ ম্যাচ খেলে কোনোটিতেই জিততে পারেনি। এখনো মৌসুমে ২ ম্যাচ বাকি আছে তাদের। এই দুই ম্যাচে জিততে না পারার ধারা বদলাতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

চেক ফুটবলের শীর্ষ স্তরের লিগে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার নিচে। ৩৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট মাত্র ৬। পুরো মৌসুমে এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচও জিততে পারেনি তারা। এমনকি ২৬ এপ্রিল ম্লাদা বোলেস্লাভের কাছে ২-১ গোলের হারের পর অবনমনও নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।

এরপরও অবশ্য থামেনি হারের ধারা। এমনকি গত বছরের জুনে সিলোন তাবোরস্কোর বিপক্ষে রেলিগেশন প্লে-অফে জয়ের পর এখন পর্যন্ত কোনো লিগ ম্যাচে জেতেনি চেস্কে বুদেয়োভিৎসে। লিগে ৩৩ ম্যাচে জয়হীন থাকার পাশাপাশি চেক কাপেও ২ ম্যাচ খেলে কোনোটিতে জিততে পারেনি তারা।

আরও পড়ুনআর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের কোচরা কে কত টাকা বেতন পান১৫ মে ২০২৫

এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ফুটবলে জয়হীন ধারার কথা উঠলে চেক প্রজাতন্ত্রের এই ক্লাবের দুর্দশার সঙ্গে তুলনা টানার মতো আর কোনো ক্লাব নেই। একুশ শতকে শীর্ষ স্তরের ফুটবলে আর কোনো দলের এত বেশি ম্যাচ জয়হীন থাকার রেকর্ডও খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় ভুল করেছে তারা?

চেক ফুটবলের ইতিহাসে এই মৌসুম নিঃসন্দেহে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের জন্য অন্যতম ভয়াবহ এক মৌসুম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্লাবটির জয়হীন মৌসুমের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। ট্রান্সফারমার্কেট-এর তথ্যবিশ্লেষক ও চেক ফুটবলবিশেষজ্ঞ আন্তোনিন শ্রায়ের বলেন, ‘গত মৌসুমে দিনামো কোনোমতে অবনমন প্লে-অফ জিতে লিগে টিকে ছিল। আর ট্রান্সফার উইন্ডোতে দলটি তাদের স্কোয়াড অনেকটাই দুর্বল করে ফেলে। তাই মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই তাদের অবনমন হওয়ার একটা আশঙ্কা ছিল। কিন্তু কেউই ভাবেনি যে তারা পুরো মৌসুমে একটা ম্যাচও জিততে পারবে না, এমন কিছু ঘটে যাওয়ার শঙ্কা সামান্যই ছিল।’

অনুশীলনে চেস্কে বুদেয়োভিৎসের খেলোয়াড়রা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ