জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে এই জাতি ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘এটা হতে দেওয়া উচিত না। অন্তত আমরা যারা জুলাই অভ্যুত্থানে বিশ্বাস করি এবং তাদের সম্মান করি, যারা প্রাণ দিয়েছে।’

আজ শনিবার রাজধানীর বনানী ডিওএইচএস কমিউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাশেদা কে চৌধূরী এ কথাগুলো বলেন। ‘অপরাজিত ২৪ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ফাউন্ডেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বিদেশে থাকায় গণ-অভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নিতে পারেননি রাশেদা কে চৌধূরী। তাই আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার কষ্ট হয়েছে, তখন (আন্দোলন চলাকালে) আমি দেশের বাইরে ছিলাম। কারণ, ওই সময় আমি ছুটিতে যাই, বার্ষিক ছুটি। (বিদেশে) আমার ছেলে, মেয়ে, নাতি আছে, তাদের কাছে যাই, আসতে পারছিলাম না, কারফিউ দেওয়া ছিল।’

আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি, সেই হিসেবে নিজের চোখে দেখলাম সমস্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দরজা খুলে দিয়েছিল, যাতে শিক্ষার্থীরা আসতে পারেন, তাঁদের চিকিৎসা চলছিল। আমাদের সমস্যাটা ছিল, [ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে] আমাদের মেডিকেল সেন্টারটি ছোট।’

আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, তাঁরা সবাই অসুবিধায় আছেন, কষ্টে আছেন। কিন্তু তাঁরা লেখাপড়া শেষ করতে চান। তাঁদের প্রধান চিন্তা এরপর তাঁদের কী হবে। তাঁদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, সেটাই তাঁদের প্রথম এবং প্রধান দাবি।

অপরাজিত ২৪ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট পারভীন রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধারা যেন একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন, নিজেদের মধ্যে জানাশোনা বাড়াতে পারেন এবং তাঁদের পুনর্বাসনের জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ। আহত যোদ্ধারা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য জীবনবাজি রেখেছেন। তাঁদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কোনো করুণা নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।’

পারভীন রহমান জানান, অপরাজিত ২৪ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অলাভজনক এবং অরাজনৈতিক এই সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সহায়তা করা এই সংগঠনের বিশেষ উদ্দেশ্য। ফাউন্ডেশনটি তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা, মানসিক সহায়তা, আইনি সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহের মতো দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কর্নেল (অব.

) এম এ সালাম, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নবনিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান, অপরাজিত ২৪ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দাবাড়ু রানী হামিদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান, বীর উত্তম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক, মনোচিকিৎসক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, সমাজকর্মী এবং জুলাইয়ের আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন আম দ র সহ য ত রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫

টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।

আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।

এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।

রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি পুনর্বহাল
  • সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫
  • ক্রিকেট ম্যাচের দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা, আহত ২৭ নারী পুলিশ সদস্য
  • ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫