‘ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের প্রাণ, আমাদের ব্রহ্মপুত্রকে বাঁচাতে হবে’
Published: 17th, May 2025 GMT
‘পরিকল্পনা করে নদী ব্যবস্থাপনা না করায় বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ–নদী এখন মৃতপ্রায়। ভারতের সঙ্গে আন্তসীমান্ত নদীগুলোতে ভারত নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে বাঁধ দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এসব নদ-নদীর পানি যথেষ্ট পরিমাণে পাচ্ছে না। ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে এখন পর্যন্ত ভারতের কোনো বাঁধ নেই। এই ব্রহ্মপুত্র নদ ৬৭ শতাংশ পানি বহন করে নিয়ে আসে। ফলে এই মুহূর্তে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমাদের ব্রহ্মপুত্রকে বাঁচাতে হবে।’
শনিবার বিকেলে আন্তনদী সংযোগের নামে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ভারতের একতরফা পানি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ‘ব্রহ্মপুত্র কনভেনশনে’ আলোচনায় অংশ নিয়ে নদী গবেষক ও রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন এসব কথা বলেন।
শেখ রোকন আরও বলেন, ‘নদী তার আপন গতিতে প্রবাহিত হয়। আমরা আজও নদীর গতি বুঝতে পারিনি। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বছরের পর বছর নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অপরিকল্পিতভাবে নদীশাসন করতে গিয়ে নদীকে মেরে ফেলে। ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে এই নদীর পাড়ে যেমন ভাঙন দেখা দেবে, তেমনি নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে ব্রহ্মপুত্র মরে যাবে। তাই সঠিক পরিকল্পনা করে প্রয়োজনে ব্রহ্মপুত্র নদের উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে যৌথভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ বাঁচানোর পরিকল্পনা করতে হবে।’
‘ব্রহ্মপুত্র আমাদের বাঁচায়, আসুন, আমরা ব্রহ্মপুত্রকে বাঁচাই’ এ স্লোগানে জেলা আইনজীবী সমিতির ‘এ টি এম এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ’ মিলনায়তনে ব্রহ্মপুত্র কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বাসদের জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড ফুলবর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান, আলোচক হিসেবে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক কমরেড আবদুল কুদ্দুস বক্তব্য দেন।
কমরেড রাজেকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নদীকে শুধু শাসন করতে চাই। আর এই শাসন করতেই নদীকে আমরা মেরে ফেলেছি। নদীকে শাসন না করে, সঠিক ব্যবস্থাপনা করে নদীর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সেখানে (নদীপাড়ে) বসবাস করতে হবে। ব্রহ্মপুত্র নদ এ অঞ্চলের কারও শত্রু নয়। মানুষকে বাঁচানোর জন্য ব্রহ্মপুত্র নদকে বাঁচাতে হবে।’
ব্রহ্মপুত্র কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে জেলা কমিটির সদস্য দুলাল বোস, সাংবাদিক সফি খান বক্তব্য দেন। এতে জেলার নদীপাড়ের বাসিন্দা ও বাসদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে হাসপাতালের বারান্দায় ২ নারীর সন্তান প্রসব
সিলেট ওসমানী হাসপাতালের বারান্দায় ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুই নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে।
স্বজনদের অভিযোগ, প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও লেবার ওয়ার্ডের কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানারও পরও সেবা দিতে এগিয়ে আসেনি প্রসূতিদের। পরে হাসপাতালের বারান্দায় নিজেদের পরনের কাপড় দিয়ে আড়াল করে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করেন অন্যান্য রোগীর স্বজনরা।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। দুই প্রসূতির একজন এসেছিলেন গোলাপগঞ্জের বাউসি গ্রাম থেকে। তিনি ওই গ্রামের রতন দাসের স্ত্রী মিতালী দাস (২৫)। তিনি একটি পূত্র সন্তান প্রসব করেছেন।
অন্যজন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামের মো. শাহিনের স্ত্রী সুমি বেগম (১৯)। তিনিও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দুই প্রসূতির স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, এদিন বিকেল ৪টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২য় তলার ১৫নং ওয়ার্ডে সামনে পৌঁছান দুই প্রসূতি ও তাদের স্বজনরা। স্বজনরা কর্তব্যরত নার্সের কাছে গেলেও তারা তাদের কথা শোনেনি বরং সিরিয়াল ধরার নির্দেশ দিয়ে দুই নার্স নিজেদের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। রোগীর অবস্থা জরুরি বলার পরেও তারা জানিয়ে দেন তাদের করার কিছু নেই।
এ অবস্থায় বসে থাকা একজন প্রসূতির চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বসা অবস্থাতেই তিনি একটি পূত্র সন্তানের জন্ম দেন। তখন উপস্থিত স্বজন ও অন্যান্যরা দ্রুত আড়াল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এই আড়াল দিতে গিয়েও তারা নার্সদের কাছ থেকে কোনো সহযোগীতা পাননি। পর্দা করার জন্য একটা চাদর চাইলেও তারা সাড়া দেননি। পরে সেখানে উপস্থিত নারীরা নিজেদের পরনের কাপড় দিয়ে পর্দার ব্যবস্থা করেন। প্রথমজনের ১০ মিনিট পরে অপর প্রসূতিও একইভাবে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “যে ওয়ার্ডটিতে সন্তান প্রসব করেছেন সেটা পুরোটাই লেবার ওয়ার্ড। এখানে প্রতিদিন দেড় থেকে ২০০ নারী আসেন। যারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে রেফার্ড হয়ে আসেন। দেখা যায় তারা অন্তিম মুহূর্তে আসেন তখন সিরিয়াল থাকে না। এছাড়া একটি বাচ্চা চার মাস আগে ডেড ছিল। সেটি মৃত অবস্থায় জন্ম নিয়েছে। অপর মায়ের ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।”
তিনি জানান, কোন এক রোগীর স্বজন লেবার ওয়ার্ডের ছবি তুলে বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে ডাক্তার বা নার্সদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিল না। সবাই ওভার লোডেড হয়ে কাজ করছে। তার জন্য চাইলেও আমরা শতভাগ সার্ভিস দিতে পরি না। সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
ঢাকা/নূর/এস