মাস্টারকার্ডের তিন ধরনের কার্ড নিয়ে এল মার্কেন্টাইল ব্যাংক
Published: 17th, May 2025 GMT
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যেতে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যেই আমরা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সামনে এখন এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’
রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে আজ শনিবার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাস্টারকার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন তিন ধরনের কার্ডসেবা চালু উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য মাস্টারকার্ডের নতুন তিন ধরনের কার্ডসেবার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের নগদ লেনদেন সেবায় নিরুৎসাহিত করতে। এ জন্য গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের কার্ড ব্যবহারে আরও কীভাবে উৎসাহিত করা যায়, তা নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।’ তিনি বলেন, কার্ডে লেনদেন করলে প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করা যায়। এ ধরনের লেনদেনে স্বচ্ছতা এবং ব্যাংক–গ্রাহকের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যায়।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো.
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির ভাইস চেয়্যারম্যান আকরাম হোসেন, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ খান বেলাল, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, পরিচালক মোশাররফ হোসেন, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের পরিচালক জাকিয়া সুলতানাসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন খাতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থিক কর্মকাণ্ড প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। তাই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এ ধরনের সেবা চালু করাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ডিজিটাল লেনদেনে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য সুরক্ষা ও গ্রাহকের অধিকার রক্ষার দায়িত্বও সমানভাবে পালন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।’
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান বলেন, মানুষের লেনদেন এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত ও নিরাপদ হয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবাসী আয়ের লেনদেনে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক দেড় হাজার মাস্টারকার্ড ইস্যু করেছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ৫ হাজার মাস্টারকার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড মিলিয়ে মাস্টারকার্ডের তিন ধরনের নতুন কার্ডসেবা চালু করছে। এসব কার্ডে সংযুক্ত রয়েছে ‘কন্ট্যাক্টলেস প্রযুক্তি’, ‘ডুয়াল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রা’ সুবিধা ও ‘দ্বিস্তরবিশিষ্ট’ নিরাপত্তাব্যবস্থা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মাস্টারকার্ড ব্যবহার করবেন তাঁরা ভ্রমণ, লাইফস্টাইল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাবেন। এ ছাড়া মাস্টারকার্ড ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৯ হাজারের বেশি পার্টনার মার্চেন্ট আউটলেটে পাওয়া যাবে বিশেষ ছাড়। এসব কার্ডে দেশ ও বিদেশের মাস্টারকার্ডের এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার সুবিধাও পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ডের এদেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, দেশের প্রবাসী আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখন মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আসে। মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার আরও বাড়াবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ট রক র ড র ন ধরন র ক র ড ত ন ধরন র গ র হকদ র অন ষ ঠ ন ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ