ম্যানচেস্টার সিটি ১ : ০ ক্রিস্টাল প্যালেস

ম্যাচে তখন শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা। গ্যালারিতে ম্যানচেস্টার সিটির জার্সি পরে কাঁদছে এক শিশু। বোঝাই যাচ্ছিল, দলের ব্যর্থতার ভার নিতে না পেরে হতাশায় ভেঙে পড়েছে শিশুটি। ছোট এই শিশুর কান্নাই যেন সিটির পুরো মৌসুমের প্রতিচ্ছবি। শূন্য হাতে হতাশা আর কান্নায় শেষ হলো ভুলে যাওয়ার মতো মৌসুমটা।

ওয়েম্বলিতে আজ এফএ কাপ ফাইনালে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে জিতলে অন্তত একটা ট্রফি জিততে পারত সিটি। কিন্তু সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারল না পেপ গার্দিওলার দল। ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ১–০ গোলে হারায় শূন্য হাতেই মৌসুমটা শেষ করতে হবে ইতিহাদের ক্লাবটিকে। ম্যাচে একের পর এক চেষ্টা করে সিটি গোল না পেলেও প্যালেসকে একমাত্র গোলে শিরোপা এনে দিয়েছেন এবেরেচি এজে।  

ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল রেখে গোল আদায়ের চেষ্টা করে ম্যানচেস্টার সিটি। কয়েকবার কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিল তারা। যদিও পায়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। কোনোরকমে গোল খাওয়া ঠেকিয়ে রাখলেও বেশ চাপেই ছিল প্যালেস। কিন্তু ম্যাচের ১৬ মিনিটে এক ধাক্কায় সব চাপ নামিয়ে ফেলে তারা। স্রোতের বিপরীতে অসাধারণ এক গোল আদায় করে ম্যাচে এগিয়ে যায় প্যালেস।

প্রতি–আক্রমণে দানিয়েল মুনোজের ক্রস থেকে গোল করে ক্রিস্টালকে এগিয়ে দেন এজে। এই গোলের আগ পর্যন্ত কেবল একবার নিজেদের অর্ধ পেরিয়ে সিটির অর্ধে যেতে পেরেছিল প্যালেস। তবে আক্রমণ বিবেচনা করলে সেটিই ছিল প্যালেসের প্রথম আক্রমণ ও শট। একটু পর অবশ্য ব্যবধান ২–০ করার সুযোগ পেয়েছিল প্যালেসের। যদিও শেষ পর্যন্ত গোলটি পায়নি তারা।

ধাক্কা সামলে অবশ্য দ্রুত ম্যাচে ফিরে আসে সিটি। যথারীতি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রেখে একের পর আক্রমণ চালিয়ে যায় তারা। একবার হলান্ডের শট কোনো রকমে ফিরিয়ে দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচান প্যালেস গোলরক্ষক ডিন হেন্ডারসন। মাঠের খেলায় কাছাকাছি গিয়ে না পারলেও পেনাল্টি থেকে সিটির সামনে সুযোগ এসেছিল সমতা ফেরানোর। কিন্তু ৩৬ মিনিটে সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি সিটি। ওমর মারমুশের পেনাল্টি অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দিয়ে প্যালেসকে বাঁচিয়ে দেন হেন্ডারসন।

এরপর ৪৩ মিনিটে আরও একবার সিটির প্রচেষ্টার সামনে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে যান হেন্ডারসন। এবার নিরাশ করেন জেরেমি ডকুকে। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় সিটিকে। প্যালেসের এগিয়ে থাকার বেশির ভাগ কৃতিত্বই অবশ্য গোলরক্ষক হেন্ডারসনের। প্রথমার্ধেই তিনি সেভ করেন ৪টি শট।

বিরতির পরও দেখা মিলছিল একই দৃশ্যের। সিটির একের পর আক্রমণ কোনো রকমে ঠেকিয়ে লিড ধরে রাখছিল প্যালেস। কিন্তু প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও স্রোতের বিপরীতে গোল করে বসে প্যালেস। যদিও সৌভাগ্যবশত এ যাত্রায় বেঁচে যায় সিটি।

প্যালেসের গোলটি বাতিল হয় অফসাইডের কারণে।  গোলের খোঁজে থাকা গার্দিওলা ৭৬ মিনিটে মাঠে নামান অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা আর্জেন্টাইন তরুণ ক্লদিও এচেভেরিকে। ৮৩ মিনিটে গোল করে ম্যাচের নায়ক হওয়ার সুযোগও এসেছিল তাঁর সামনে। কিন্তু এচেভেরির শট ঠেকিয়ে দেন অবিশ্বাস্য ছন্দে থাকা হেন্ডারসন। ম্যাচের বাকি সময়ে চেষ্টা করেও আর সমতা ফেরাতে পারেনি সিটি। শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো বড় কোনো শিরোপা জিতে উল্লাসে মাতে প্যালেস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ন ড রসন

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিহাস গড়লো ক্রিস্টাল, ম্যানসিটিকে জিতলো প্রথম বড় শিরোপা

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো বড় কোনো শিরোপা জিতে নিল ক্রিস্টাল প্যালেস। শনিবার (১৭ মে) রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিত এফএ কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় কোনো ট্রফি জয়ের আনন্দে মাতল দক্ষিণ লন্ডনের ক্লাবটি।

ম্যাচের জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন ইবেরেচি এজে। ম্যাচের ১৬ মিনিটে অসাধারণ এক ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড। এরপর পুরো ম্যাচজুড়ে সিটির একের পর এক আক্রমণ সামলে দুর্দান্ত গোলকিপিং করেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডিন হেন্ডারসন।

ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচে একাধিক সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। পেনাল্টিও পেয়েছিল তারা। কিন্তু ওমর মারমুশের নেয়া দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন।

ম্যাচ শেষে গোলদাতা এজে বলেন, ‘‘এটা আমাদের স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত। কেউই বিশ্বাস করেনি আমরা পারব। কিন্তু আমরা ইতিহাস গড়েছি।’’ উল্লেখ্য, ক্যারিয়ারের শুরুতে আর্সেনালসহ অনেক ক্লাব এজেকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো এফএ কাপের ফাইনালে হেরে হতাশার মৌসুমে শেষ করল ম্যানচেস্টার সিটি। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর এই প্রথমবার তারা কোনো ঘরোয়া শিরোপা ছাড়াই মৌসুম শেষ করল।

এর আগে ১৯৯০ ও ২০১৬ সালের ফাইনালে হেরে গিয়েছিল প্যালেস। তবে তৃতীয় চেষ্টায় সফল হলো তারা। আর দলের অস্ট্রিয়ান কোচ অলিভার গ্লাসনার হয়ে গেলেন ইতিহাসে প্রথম অস্ট্রিয়ান কোচ যিনি এফএ কাপ জিতলেন।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য সিটি আক্রমণে ঝড় তোলে। কেভিন ডি ব্রুইনার শেষ ওয়েম্বলি ম্যাচে দারুণ একটি পাস থেকে হালান্ডের শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন। এরপর গভার্দিওলের হেডও ঠেকিয়ে দেন তিনি।

তবে ১৫ মিনিটের মাথায় একমাত্র আক্রমণেই গোল আদায় করে নেয় প্যালেস। মাতেতার পাসে মুনোজের ক্রস থেকে দারুণ এক ভলিতে গোল করেন এজে। এরপর সিটির চাপ আরও বাড়লেও হেন্ডারসনের নেতৃত্বে রক্ষণভাগ ছিল দুর্ভেদ্য।

একবার মনে হয়েছিল, হেন্ডারসন হয়তো বল হাতে নিয়ে গোলবারের বাইরে চলে গিয়েছেন, তবে ভিএআরের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, লাল কার্ডের প্রয়োজন নেই। পেনাল্টিতে সিটি ভরসা রাখে মারমুশের ওপর। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন হেন্ডারসন।

ম্যাচ শেষে হেন্ডারসন বলেন, ‘‘আমরা আগেই বুঝেছিলাম, আজ আমাদের দিন। আমরা এই জয়ের যোগ্য। আমি জানতাম ও কোন দিকে শট নেবে। আর আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমি তা ঠেকাতে পারব।’’

শেষদিকে একাধিকবার গোলের কাছাকাছি গেলেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় সিটি। ১০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়েও গোল হয়নি তাদের। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে প্যালেস সমর্থকেরা। স্টেডিয়ামে তখন গর্জে ওঠে ক্লাবের অ্যান্থেম ‘গ্ল্যাড অল ওভার’। এক ঐতিহাসিক দিনে আনন্দে ভাসে ক্রিস্টাল প্যালেস ও তাদের সমর্থকেরা।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ