গাজায় ইসরায়েলের তীব্র অভিযানের নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
Published: 18th, May 2025 GMT
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (১৭ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, “গাজায় স্থল অভিযান সম্প্রসারণের জন্য ইসরায়েলের পরিকল্পনা দেখে আমি উদ্বিগ্ন।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে পরাজিত করতে এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তীব্র অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
আরো পড়ুন:
কলম্বিয়ায় নতুন করে ৬৬ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর তাগিদ জাতিসংঘ মহাসচিবের
শনিবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, গত দুই দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাহিনী উত্তর গাজায় ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দিয়েছে।
এক্স পোস্টে গুতেরেস বলেন, “আমি জোর দিয়ে বলছি, জাতিসংঘ এমন কোনো অভিযান সমর্থন করবে না যা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতি- মানবতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা মেনে চলে না।”
জাতিসংঘের মতে, গাজা উপত্যকার প্রায় ৭১ শতাংশ স্থানচ্যুতি আদেশের অধীনে বা ইসরায়েলি সামরিক দখলে রয়েছে।
তিনি গাজাবাসীদের তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘ প্রধান বলেন, “আমি জনসংখ্যার বারবার স্থানচ্যুতি- গাজার বাইরে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির যে কোনো পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করছি।”
গুতেরেস জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউকে)-কে সমর্থন করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের এই সংস্থাটিকে ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছে।
চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে খাদ্য, পানি এবং ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)