বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বরাবরই ভারত এগিয়ে। তার মানে, ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় রপ্তানি খুবই নগণ্য। সর্বশেষ গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা দেয়। যদিও সেটা তেমন কাজে লাগাতে পারছিল না বাংলাদেশ। তবে ধীরে ধীরে দেশটিতে রপ্তানি বাড়তে থাকে। গত ২০১৮–১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।

অবশ্য ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আবার হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, গতকাল শনিবার নতুন করে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত সরকার। এর মধ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করা যাবে না বলে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এ–সংক্রান্ত আদেশ জারির পর আজ রোববার দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধের আওতায় থাকা পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে বলে স্থলবন্দর–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলাপ–আলোচনার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনার কথা ভাবছে। এর আগে গত এপ্রিলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থাও প্রত্যাহার করে ভারত। গত মাসে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) এ সুবিধা বাতিলে আদেশ জারি করে। ২০২০ সালের ২৯ জুন এ–সংক্রান্ত এক আদেশে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। ভারত স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করায় এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।

এ ছাড়া ভারতের নতুন বিধিনিষেধের কারণে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বলছেন খাতটির রপ্তানিকারকেরা। গত অর্থবছর ভারতে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট ও ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়। স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য বেশি রপ্তানি হতো। এখন স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে ভারত। ফলে এসব পণ্যের রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে খাত–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, একই বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের শ্রেণিকক্ষে দরজা বন্ধ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

গত বুধবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মার্কেটিং বিভাগের ক্লাস শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগী অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী জানান, প্রথম দিনের ক্লাস শেষে ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্লাসরুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় নির্যাতন ও হয়রানি। একই সঙ্গে নবীন শিক্ষার্থীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শ্রেণিকক্ষের টুলের ওপর। এ সময় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড়ও মারা হয়। শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন—এ কথা বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তাঁর হাতের ক্যানুলা খুলে যায়।

লিখিত অভিযোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এক ভুক্তভোগী বলেন, প্রথমে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র এসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে প্রশাসন এরই মধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নিয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। কোনো র‍্যাগিং হয়নি। ডায়ালাইসিসের সমস্যাযুক্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের ধাক্কা লাগে, এরপর ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয়।’

মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক আফজাল হোসাইন বলেন, ‘এক শিক্ষার্থী ও তাঁর ভাই বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসে গিয়ে কথা বলি এবং অভিযুক্তদের নাম দিতে বলি। পরে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল হাকিম বলেন, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত ছাত্রদের ক্লাস ও পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে র‍্যাগিংয়ের নামে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেনাপোল বন্দরে সার্বিয়ার ভিসাযুক্ত বাংলাদেশের ২০টি পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
  • টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম ২ মাস ধরে বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, তদন্ত কমিটি গঠন
  • কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না
  • গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
  • হিলি বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতে জুস রপ্তানি 
  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়
  • শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
  • আগের পাঁচ মাসের চেয়ে জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
  • প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে সুবাতাস