বাংলাদেশের রপ্তানি ১৫৭ কোটি ডলারের, আমদানি ৯০০ কোটি ডলার
Published: 18th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বরাবরই ভারত এগিয়ে। তার মানে, ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় রপ্তানি খুবই নগণ্য। সর্বশেষ গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা দেয়। যদিও সেটা তেমন কাজে লাগাতে পারছিল না বাংলাদেশ। তবে ধীরে ধীরে দেশটিতে রপ্তানি বাড়তে থাকে। গত ২০১৮–১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
অবশ্য ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আবার হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, গতকাল শনিবার নতুন করে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত সরকার। এর মধ্যে স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করা যাবে না বলে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এ–সংক্রান্ত আদেশ জারির পর আজ রোববার দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধের আওতায় থাকা পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে বলে স্থলবন্দর–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলাপ–আলোচনার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনার কথা ভাবছে। এর আগে গত এপ্রিলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থাও প্রত্যাহার করে ভারত। গত মাসে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) এ সুবিধা বাতিলে আদেশ জারি করে। ২০২০ সালের ২৯ জুন এ–সংক্রান্ত এক আদেশে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। ভারত স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করায় এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।
এ ছাড়া ভারতের নতুন বিধিনিষেধের কারণে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বলছেন খাতটির রপ্তানিকারকেরা। গত অর্থবছর ভারতে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট ও ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়। স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য বেশি রপ্তানি হতো। এখন স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে ভারত। ফলে এসব পণ্যের রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে খাত–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে জনপ্রিয় ইউটিউবার গ্রেপ্তার
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতে জ্যোতি মালহোত্রা নামে এক জনপ্রিয় ইউটিউবারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেপ্তার জ্যোতি ২০২৩ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন।
গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতীয় ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। হরিয়ানার বাসিন্দা জ্যোতির ইউটিউবে একটি চ্যানেল রয়েছে, নাম— ‘ট্রাভেল উইথ জো’। সেখানে মূলত ভ্রমণের ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি। তার সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাকিস্তানের গুপ্তচরদের কাছে তথ্য পাচার করার একটি চক্র ভারতে তৈরি হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এই চক্র মূলত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় সক্রিয় ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ জ্যোতিসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তদন্তে ওঠে এসেছে, জ্যোতি ২০২৩ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। ওই সময়েই নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তা এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত অভিযোগে চলতি সপ্তাহেই পাকিস্তানি কর্মকর্তা দানিশকে ভারতে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, দানিশের মাধ্যমেই পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জ্যোতির।
ভারতীয় তদন্তকারীদের সন্দেহ, ভারতের বিভিন্ন স্থানের সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানিদের কাছে পাচার করতেন জ্যোতি মালহোত্রা। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে তিনি পাকিস্তানি গুপ্তচরেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের পরিচয় গোপন রাখতে মোবাইলে অন্য নামে সেই নম্বরগুলো সেভ করতেন জ্যোতি। তার মধ্যে ‘জাট রানধাওয়া’ নামে একটি নম্বর সেভ করা ছিল। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই নম্বরটি আসলে পাকিস্তানি গুপ্তচর শাকির ওরফে রানা শাহবাজের।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুসারে, এক পাকিস্তানি গুপ্তচরের সঙ্গে তার ‘ঘনিষ্ঠতা’ তৈরি হয়েছিল বলেও তদন্তকারী দল সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। জ্যোতি যখন বালি এবং ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে তার সঙ্গে এক পাকিস্তানি গুপ্তচর ছিলেন বলেও সন্দেহ তদন্তকারীদের।
ভারতশাসিত কাশ্মিরের পেহলেগামে সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে ভারতীয়দের যোগাযোগের বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে এসেছে। গত কয়েক দিনে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ওই অভিযুক্তদের সঙ্গে ইউটিউবার জ্যোতির কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।