চার বছর আগে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে পরিবার ছাড়েন তানিয়া আক্তার। তখন ছোট বোন তানজিলার বয়স ছিল কয়েক মাস। এরপর মাত্র একবার তাদের দেখা হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর আগে ছোট তানজিলার কাছে বড় বোন তানিয়াই ছিল সব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বড় বোন তানিয়ার হাত ছাড়েনি সে। যন্ত্রণায় ছটফট করেছে আর কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করেছে শিশুটি। গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর আফতাবনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হয় শিশু তানজিলা। গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সাততলায় ৭০২ নম্বর কক্ষের সামনে তানিয়াকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের সামনে তাঁর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্বামী রিপন ইসলাম ও মামা সমিরুল ইসলাম। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানিয়া সমকালকে বলেন, ‘ওকে (তানজিলা) বাঁচানোর জন্য কত চেষ্টা করলাম! কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলাম না। দুইটা দিন ওর কাছে রয়েছি, আমাকে চোখের সামনে থেকে সরতে দেয়নি। একটু পর পর শুধু পানি চেয়েছে।’ 
শুক্রবার রাতে আফতাবনগরের দক্ষিণ আনন্দনগরের আনসার ক্যাম্পের পাশে একটি বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে পরিবারের নারী ও শিশুসহ পাঁচ সদস্য দগ্ধ হন। দিনমজুর তোফাজ্জল মিয়ার (৪৫) শরীরের ৮০ শতাংশ, তাঁর স্ত্রী মঞ্জুরা বেগমের (৩৫) ৬৭ শতাংশ এবং তাদের ছোট মেয়ে তানজিলার (৪) ৬৬ শতাংশ, সেজো মেয়ে মিথিলার (৭) ৬০ শতাংশ ও মেজো মেয়ে তানিশার (১১) ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়। 

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা.

শাওন বিন রহমান বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিশু তানিশা আইসিইউতে রয়েছে। 
তানিয়া আক্তার বলেন, তানজিলার পাশের বেডে মা মঞ্জুরা, তাঁর পাশে মিথিলা চিকিৎসাধীন। শরীরের এত বেশি পুড়েছে যে দেখার মতো না। দীর্ঘদিন পর মায়ের সামনে যাওয়ার পর শুধু বলেছে, ‘আমার মাফ করে দিস। আমি হয়তো বাঁচব না। তোর ছোট বোনদের দেখে রাখিস’ বলেই হাউমাউ কান্না শুরু করেন। এখনও মাকে বলতে পারিনি তানজিলা বেঁচে নেই। 
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানিয়া বলেন, পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার কারণে পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায়। দেড় বছর আগে ছেলে ইয়াসিনকে নিয়ে বাবার বাসায় আসি। মনে করেছিলাম নাতিকে দেখলে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু হয়নি। বাবা আমার সঙ্গে কথাই বলত না। আজ যখন কথা বলল, তখন জড়িয়ে ধরতে পারলাম না। এই দুঃখ কীভাবে সইব জানি না। বাবা শুধু বলছে, ‘যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না।’ আল্লাহ আমাকে এত বড় পরীক্ষার মধ্যে কেনো ফেলল। সারারাত ছটফট করেছে। চোখের সামনে তার এই অবস্থা দেখে মেনে নিতে পারছি না। 
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাসার মালিক শহীদুল্লাহকে বাসায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানায় বাবা তোফাজ্জল। তিনি জানান, সকালে গ্যাসের লোক নিয়ে এসে দেখবেন বিষয়টা। তার আগেই আমার সব শেষ করে দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আমার মাকে (মঞ্জুরা) নাকি বাঁচানো সম্ভব হবে না। 

তানিয়ার স্বামী রিপন ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে খবর পেয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসি। তারপর থেকে নিচ থেকে সাততলা ছুটে চলেছি। শ্বশুর-শাশুড়ির এই অবস্থা দেখে স্ত্রী তানিয়া খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ওকে নিয়ে এখন বেশি চিন্তায় রয়েছি। এদিকে বাসায় মায়ের কাছে দেড় বছর বয়সী শিশুসন্তানকে রেখে এসেছি। সে মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে। 
অগ্নিদগ্ধ মঞ্জুরার বড় ভাই সমিরুল ইসলাম বলেন, ওরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় থাকে। বাড্ডার দক্ষিণ আনন্দনগর আনসার ক্যাম্প বাজারের পাশে তৃতীয় তলা ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকত। তোফাজ্জল একটি সিমেন্টের ফ্যাক্টরির কর্মী হিসেবে কাজ করত। আর মঞ্জুরা মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করত। ঘটনার দিন রাতে মশার কয়েল জ্বালানোর সময় ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণ হয়। এতে পুরো পরিবার অগ্নিদগ্ধ হয়। 
বাসার মালিক শহীদুল্লাহ দাবি করেন, ওই বাসায় গ্যাস নাকি ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হয়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহতদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরে এ নিয়ে কাজ করব। তোফাজ্জলের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হচ্ছে। তারা আগে সুস্থ হোক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ফ জ জল পর ব র র স মন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বস্তায় যুবকের লাশ, প্রেমিকার মা–বাবা ও ভাবি গ্রেপ্তার

রাজশাহীর তানোরে নিখোঁজের ২০ দিন পর এক যুবকের বস্তাবন্দী গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে উপজেলার হাবিবনগর এলাকায় শিব নদে কচুরিপানার ভেতর থেকে বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া যায়। পরনে থাকা লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে তাঁর লাশ শনাক্ত করেছে পরিবার। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত যুবকের নাম চিত্তরঞ্জন পাল (২৬)। হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম মনোরঞ্জন পাল। একমাত্র ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তিনি তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। প্রেমঘটিত কারণে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন একই গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল (৫৮), তাঁর স্ত্রী ছবি রানী (৫০) ও কাজলী রানী পাল (৩০)। মামলার অন্য তিন আসামি স্বপনের ছেলে সুবোদ পাল (৩০), মেয়ে কামনা পাল (২৩) ও জেলার মোহনপুর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মো. রাজু (৪৫)। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার কাজলী রানী পাল আসামি কামনা পালের চাচাতো ভাবি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কলেজছাত্রী কামনা পালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে মনোরঞ্জন তাঁর ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্বপন চন্দ্র পালের বাড়িতে যান। তাঁরা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন। কামনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক চলতেই থাকে। কামনা নিয়মিত চিঠিও লিখতেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতের খাবার খেয়ে মনোরঞ্জনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত চারটার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে কেউ নেই। তার পর থেকে চিত্তরঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল থেকে কামনা ও তাঁর ভাই সুবোদকেও এলাকায় দেখা যায়নি। চিত্তরঞ্জন ছেলের ব্যাপারে স্বপন চন্দ্র পালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন তাঁকে এলোমেলো জবাব দেন এবং ধমক দেন। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মনোরঞ্জন তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, মামলার আসামিরা চিত্তরঞ্জনকে কৌশলে তাঁদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে শিব নদে ফেলে দেন। আজ সকালে শিব নদে বস্তাবন্দী গলিত এই লাশ পাওয়া যায়। পরনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মনোরঞ্জন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, প্রেমঘটিত কারণে চিত্তরঞ্জনকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে নদে ফেলে দেওয়া হয়। উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আখখেতে পোকায় ধরা লাশ

এদিকে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর থানাধীন ভড়ুয়াপাড়া এলাকার একটি আখখেত থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মরদেহে পোকা ধরে গেছে। মরদেহটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মরদেহটি দেখতে যান। মরদেহের এমন অবস্থা, যা চেনার উপায় নেই। মরদেহের শরীরে পোকা ধরে গেছে। শনাক্ত করতে সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা মরদেহটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাবেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র প্রকল্প বাতিল
  • রাজশাহীতে বস্তায় যুবকের লাশ, প্রেমিকার মা–বাবা ও ভাবি গ্রেপ্তার
  • চিত্তরঞ্জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, প্রেমিকার বাবা-মা ও ভাবি গ্রেপ্তার
  • তানোরে যুবকের বস্তাবন্দী হাড়গোড় উদ্ধার
  • খাঁচায় বন্দী মেছো বিড়াল