৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু ২৩ মে
Published: 18th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ২৩ থেকে ২৬ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই বইমেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশক, লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের আগমন ঘটবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বইমেলার প্রস্তুতি, কর্মসূচি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ১৬ মে (শুক্রবার) নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বইমেলার আহ্বায়ক এবং ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার। বর্তমানে তিনি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে মেলার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিইও বিশ্বজিত সাহা।
অনুষ্ঠানে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কো-চেয়ারপারসন নজরুল ইসলাম ও সউদ চৌধুরী, উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া এবং সিনিয়র সদস্য ওবায়েদুল্লাহ মামুন বক্তব্য দেন।
এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে (১৫৩-১০ জ্যামাইকা এভিনিউ, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক ১১৪৩২)। ২৩ মে সন্ধ্যা ৬টায় বইমেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নন্দিত ও জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন এবারের বইমেলার উদ্বোধন করবেন।
বইমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন বন্ধু ফিলিস টেইলর। ১৯৭১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা করে, তখন ফিলিস টেইলরের প্রয়াত স্বামী রিচার্ড টেইলর এবং তাঁর সহযোগীরা ফিলাডেলফিয়া ও বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরোধ করেছিলেন। বইমেলায় এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া মেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি নতুন গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন ফিল্ড হাসপাতালের নেতৃত্বদানকারী বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকেরা জানান, এ বছর বইমেলায় ২৫টির বেশি স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করবে এবং ইতিমধ্যে লেখক ও প্রকাশকেরা নিউইয়র্কে এসে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও বইমেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য লেখক-পাঠক-মুখোমুখি আলোচনা, নতুন বই নিয়ে আলোচনা, স্বরচিত কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিভিন্ন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, একুশে চেতনা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র-এর সৌজন্যে ‘অমর একুশ। ভাষা আন্দোলনের সচিত্র ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৫৬)’ শীর্ষক একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকেরা আরও বলেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই বইমেলা শুধু বইয়ের প্রদর্শনী নয়, এটি বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক শক্তিশালী ধারক ও বাহক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বক্তারা উল্লেখ করেন যে ১৯৯২ সালে ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ও ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’-এর যৌথ উদ্যোগে এই বইমেলার সূচনা হয়েছিল। পরে মুক্তধারা নিউইয়র্ক এবং তার পর থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এককভাবে এই বইমেলার দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, লেখক এবং তরুণ প্রজন্মের সাহসী প্রতিনিধিরা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।