আপনার পড়ার পছন্দের তালিকায় যেসব বিষয়ের নাম আছে খোঁজ নিয়ে দেখুন, এ বিষয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার পর কী কী সুযোগ আছে; বিষয়গুলোতে কী পড়ানো হয়। প্রতিটি বিষয়েরই কোনো না কোনো বিশেষত্ব আছে। এসব বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিন- আপনি কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেবেন।
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সঠিক পড়ার বিষয় নির্বাচন করা। এই সিদ্ধান্ত শুধু আপনার শিক্ষাজীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে না, বরং আপনার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের ভিত্তিও স্থাপন করে। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে বা অন্যের দেখাদেখি বিষয় নির্বাচন করলে পরবর্তীকালে আফসোস হতে পারে। তাই একটু সময় নিয়ে, নিজের আগ্রহ ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সঠিক পথে এগোনো বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন কোন বিষয়টি সঠিক? পড়ার বিষয় নির্বাচনের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো নিজেকে ভালোভাবে জানা। আগ্রহের ক্ষেত্রগুলো কী কী? কোন বিষয় পড়তে বা জানতে আপনার ভালো লাগে? কোন ধরনের কাজ করতে আনন্দ পান? যে বিষয়ে সত্যিকারের আগ্রহ আছে, সেই বিষয়েই দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ দিতে পারলে সফল হওয়া যায়। একটু সময় বের করে নিজের পছন্দের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। সেখানে প্রিয় বিষয়, শখ এবং যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে সেগুলো লিখে ফেলুন। সাহিত্যের প্রতি সবারই একটা অন্যরকম টান থাকে। কারও হয়তো ছবি আঁকতে ভালো লাগে, আবার কেউ হয়তো প্রযুক্তির দুনিয়ায় ডুবে থাকতে পছন্দ করেন। এই তালিকা একটা প্রাথমিক ধারণা দেবে কোন ক্ষেত্রগুলোর দিকে আপনি ঝুঁকতে পারেন। পাশাপাশি, নিজের শক্তিশালী দিকগুলোও বিবেচনা করতে হবে। কোন বিষয়ে অপনি অন্যদের চেয়ে ভালো? আপনার কি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বেশি, নাকি সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে ভালো লাগে? নিজের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো জানলে আপনি এমন এক বিষয় নির্বাচন করতে পারবেন যা আপনার স্বাভাবিক প্রবণতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় কোন বিষয়ে পড়বেন– এ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এই ‘যুদ্ধের’ অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেকের মধ্যেই জন্ম নেয় হতাশা। শিক্ষার্থীর পছন্দ আর অভিভাবকের পছন্দ প্রায়ই এক হয় না। পছন্দের বিষয়ে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রায়ই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিজেদের মেধার অপচয় করেন। পছন্দের বিষয়ে পড়তে না পারাটাই কি জীবনের সমাপ্তি? মোটেই নয়; বরং একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জীবনটাকে নতুন করে শুরু করা দরকার। পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পারার সুযোগ না পেলে তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। বরং যে বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানো জরুরি। ইন্টারনেটে সেই নতুন বিষয় নিয়ে ভালো করে খোঁজ করলে নানা সুযোগ সামনে আসবে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কেও সম্যক ধারণা হবে। একই সঙ্গে তা নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ চোখের সামনে খুলে যাবে। আপনি যদি তথ্য বিশ্লেষণে ভালো হন, তাহলে এই সংক্রান্ত বিষয়গুলো পড়তে চেষ্টা করুন। যেমন অর্থনীতি, গণিত, পরিসংখ্যান বা ফাইন্যান্স ইত্যাদি। যদি উদ্ভাবন বা গবেষণায় আপনার ঝোঁক থাকে, তাহলে যেসব বিষয়ে সুযোগ আছে, যেমন ডেটা সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, ফার্মাসি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন– এই বিষয়গুলো বেছে নিন। আবার তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ থাকলে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, রোবটিকসের মতো বিষয়গুলো পড়তে পারেন। এ ছাড়া স্নাতক স্তরে কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ না পেলে পরেও যে সেটা নিয়ে চর্চা করা যাবে না, তা কিন্তু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়-পরবর্তী পড়াশোনার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, সেখানকার পড়াশোনার ধরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধরা যাক, কোনো শিক্ষার্থী একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে অপছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। এতে পড়াশোনার গুণেই তার অপছন্দের বিষয়টির ওপর ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। আবার ঠিক উল্টো সমস্যাও হতে পারে। যেমন– অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মনের মতো হলো না। সেটিও কিন্তু একটি বড় সমস্যা। আবার রেজাল্ট এবং ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়ার সমস্যাটা কিন্তু শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা সমানভাবে চিন্তায় ফেলে মা-বাবাকেও। দ্বিতীয় ধাপ: সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করা। একবার যখন নিজের আগ্রহ এবং শক্তিশালী দিকগুলো সম্পর্কে অবগত হবেন, তখন সেই অনুযায়ী সম্ভাব্য পড়ার বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলা বা ইন্টারনেট ঘেঁটে সেই বিষয়গুলোর পাঠ্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানা যাবে। অনেকের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আছে। এর মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত বা কম্পিউটার বিজ্ঞান– এমন অনেক শাখা রয়েছে। প্রতিটি শাখার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং কর্মক্ষেত্র রয়েছে। যদি জীববিজ্ঞান ভালোবাসা যায়, তবে সে ক্ষেত্রে উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি বা জেনেটিক্সের মতো বিষয়গুলো উপযুক্ত হতে পারে। আবার যদি কারও প্রোগ্রামিং বা টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে কম্পিউটার বিজ্ঞান বা তথ্যপ্রযুক্তি হতে পারে তার পছন্দের ক্ষেত্র। বিভিন্ন বিষয়ের আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় দুটি ভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে নতুন এবং আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। যেমন, বায়োইনফরমেটিক্স জীববিজ্ঞান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি সমন্বিত ক্ষেত্র। বিষয় নির্বাচনের সময় ভবিষ্যতের কর্মজীবনের কথা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে আমরা কোন ধরনের কাজ করতে চাই? সেই কাজের জন্য কোন ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন? বর্তমান বাজারে কোন বিষয়গুলোর চাহিদা বেশি? তবে শুধু বাজারের চাহিদা দেখেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত নয়। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের চাহিদা পরিবর্তিত হতে পারে। তাই এমন একটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে যা আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। v
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষয়গ ল র পছন দ জ বন র আপন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
জাদুঘরে নির্মোহভাবে ভালো-মন্দ সবকিছু তুলে ধরা উচিত: উপদেষ্টা ফারুকী
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, আমাদের জাদুঘরটা নির্মোহ। এখানে কোনো দলমতের পক্ষ নেই। নির্মোহভাবে আমাদের ভালোমন্দ সবকিছু তুলে ধরা উচিত এবং এটা করাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
এর আগে সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। দিবসটি ঘিরে এই আয়োজনে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ‘ফেয়ার ওয়াটার’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনী।
ফারুকী বলেন, আমি বিশ্বাস করি সবাই যদি কমিটেড হন, তাহলে আমরা যাওয়ার আগে পরিবর্তনের সূচনা করতে পারব। প্রতিটি জাদুঘরের নিজস্ব চরিত্র থাকে। আমাদের জাতীয় জাদুঘরে ‘আমরা কারা’, এ বিষয়টি আমি মনে করি না সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখন পর্যন্ত।
তিনি বলেন, জাদুঘরের সঠিকভাবে কিউরেশন করা প্রয়োজন। এখানে শুধু পেশাদার কিউরেশন করলেই হবে না, এখানে সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরতে হবে। আমি আশা করব, স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমদের নেতৃত্বে বোর্ড যখন একটি সম্পূর্ণ দল পাবে, তখন তারা সঠিক লোকদের নিয়োগ দেবেন, যেন এই কাজগুলো ঠিকঠাক মতো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আজকের এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য জাদুঘরগুলোকে অবশ্যই বিকশিত হতে হবে। সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে প্রযুক্তির বিকাশ এবং মানুষের প্রত্যাশা পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে জাদুঘরকেও আধুনিক সমাজের চাহিদা পূরণের জন্য খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এ জন্য জাদুঘরকে সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া অত্যাবশ্যক। জাদুঘরের ভবিষ্যৎ শুধু অতীত সংরক্ষণের মধ্যেই নয়, বরং একটি উন্নত-জ্ঞাত এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের মধ্যেও নিহিত।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফরহাদ সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ সভাপতি মেরিনা তাবাসসুম। আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ সদস্য ড. সৈয়দ মোহম্মদ কামরুল আহছান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কিপার আসমা ফেরদৌসি।