পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ভারতীয় অধ্যাপক গ্রেপ্তার
Published: 19th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ায় ভারতের একটি অভিজাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম আলি খান মাহমুদাবাদ। তিনি হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপাতে অবস্থিত আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। গতকাল রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর আগে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ঘিরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়েছিল পারমাণবিক শক্তিধর এ দুই প্রতিবেশী দেশ।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কার্যকলাপ, সশস্ত্র বিদ্রোহ বা রাষ্ট্রদ্রোহে উসকানি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে প্রযোজ্য ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ৪২ বছর বয়সী মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল স্ক্রল ডট ইন-এর এক প্রতিবেদনে মাহমুদাবাদের আইনজীবীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, গত শনিবার হরিয়ানার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব শাখার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাতেরির অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে মাহমুদাবাদের মন্তব্যের কারণে হরিয়ানা রাজ্য নারী কমিশন তাঁকে তলব করে। এর কয়েক দিন পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৬ মে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুরের’ বিষয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং নিয়মিত ব্রিফিং করেছিলেন।
৮ মে এক ফেসবুক পোস্টে মাহমুদাবাদ লিখেছিলেন, ‘অনেক ডানপন্থী বিশ্লেষক কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন দেখে আমি খুব খুশি। কিন্তু একইভাবে তাঁরা গণপিটুনির শিকার, নির্বিচার ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং বিজেপির ঘৃণার রাজনীতির শিকার মানুষদেরও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে রক্ষার জোর দাবি তুলতে পারতেন।’
মাহমুদাবাদ আরও লিখেছেন, ‘দুই নারী সেনা কর্মকর্তার তথ্য উপস্থাপনের চিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই চিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকা উচিত। তা না হলে সেটি নিছক ভণ্ডামি।’
পোস্টটিতে মুসলিম ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশি, মুসলিমদের ওপর হামলা, গণপিটুনি এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাড়িঘর ভেঙে ফেলার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুনপশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানের পতাকা ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ পুলিশকে১০ ঘণ্টা আগেভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, আজ সোমবার হরিয়ানা নারী কমিশন জানায়, অধ্যাপকের ওই বক্তব্য ‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের অবমাননা করেছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দিয়েছে’। তাই তাঁকে তলব করা হয়েছে।
মাহমুদাবাদ তাঁর মন্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, তাঁকে ভুল বোঝা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মন্তব্যগুলো ছিল সাধারণ নাগরিক ও সৈনিকদের জীবন রক্ষার বিষয়ে। আমার কথায় নারীবিরোধিতার কোনো ইঙ্গিত নেই যে এটিকে নারীবিদ্বেষী বলা যাবে।’
ভারতের অধ্যাপক ও সমাজকর্মীরা মাহমুদাবাদের প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে সাবেক সেনাদের মোতায়েন করবে ভারত১৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।