স্ত্রীসহ বিজিবির সাবেক ডিজির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
Published: 19th, May 2025 GMT
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী সোমা ইসলামের নামে আট ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার এবং তার স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনের নামে থাকা অস্থাবর সম্পদসমূহ (বিও অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার) অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন গালিব দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
সাফিনুল ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। তাদের নামে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। অনুসন্ধানকালে দুদক বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে, তাদের নামীয় ব্যাংক স্থিতি নগদায়ন করে অন্যত্র হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন। এসব হিসাবের অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ছিদ্দিকুর রহমানের অস্থাবর সম্পদসমূহ অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন সংস্থার পরিচালক আবুল হাসনাত। আবেদনে বলা হয়, ছিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে পাওয়া রেকর্ডপত্র মোতাবেক জানা যায়, ছিদ্দিকুর রহমান ও রেবেকা রওশনের নামীয় সর্বমোট ১৩টি বিও অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রে বিপুল পরিমাণ অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাদের নামীয় অস্থাবর সম্পদসমূহ হতে টাকা উত্তোলন করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন মর্মে গোপন সূত্রে জানা গেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের অস্থাবর সম্পদসমূহ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
ঢাকা/এম//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ দ দ ক র রহম ন অবর দ ধ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীন আদমজী এম.ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদমজীনগর মার্চেন্ট ওয়ার্কার্স (এম.ডব্লিউ) উচ্চ বিদ্যালয় গত পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীনভাবে চলছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অচল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাঠামো, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিপর্যস্ত।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভায় বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার একের পর এক হাইকোর্ট রিট দায়ের এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তথ্য মতে, ২০২১ সালে নন-এমপিভুক্ত কেজি শাখার টিউশন ফি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি অভিযোগে প্রদান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কিন্তু তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। উল্টো প্রমাণ পাওয়া গেছে, তিনি ৭,৭৭,১৯৪ টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। এরপর শিক্ষা অধিদপ্তর ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং স্বৈরাচারী ঘরানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার রিট দায়ের করা, এই দুইয়ের চাপে গাজী নাজমুল হুদা এখনও বিদ্যালয়ে ফিরতে পারেননি।
সর্বশেষ হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের রিটের মেয়াদ ১৭ মে শেষ হয়েছে। চতুর্থ বারের মত তার যোগদান ঠেকাতে আবারও রিট দায়ের করা হচ্ছে বলে জানান গাজী নাজমুল হুদা।
এদিকে, বিদ্যালয়ে গত ৯ মাস ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি নিয়মিত কমিটি না থাকায় কাগুজে দায়িত্ব পালন করলেও কার্যত প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল অবস্থায় রয়েছে।
গাজী নাজমুল হুদা বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। বেতন না থাকায় স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছি। বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারলেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”
অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগও ক্রমাগত বাড়ছে। রওশন আরার বিরুদ্ধে অডিটের নামে ১০ লক্ষাধিক টাকার অপচয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অর্থ কেটে নেওয়া, এবং অডিট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠেছে।
এক শিক্ষক বলেন, “রওশন আরা আমাদের জানিয়েছেন, অডিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হলে টাকা লাগবে। এজন্য বেতন থেকে অংশ কেটে নিচ্ছেন।”
অভিভাবকদের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে একাধিকবার ‘মানববন্ধনের নাটক’ সাজানো হয়েছে।
এক অভিভাবক বলেন,“আমার সন্তানন জানেই না কেন তাকে মানববন্ধনে দাঁড় করানো হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে ওদের নামিয়ে আনে।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুরাইয়া আশরাফী বলেন,“ বোর্ডেও নির্দেশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে স্বপদে পুনর্বহাল করা আইনগত এবং মানবিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা দ্রুত সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, এবং যোগ্য প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।