সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) সাফিনুল ইসলামের আরও আটটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনের বিদেশি ১৩টি বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী হালিমা সুলতানা, ছেলে সাদ আল জাবির আবদুল্লাহ, মেয়ে লাবিবা আবদুল্লাহ ও হাবিবুন নাহারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ছিলেন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২২ আগস্ট তাঁকে অবসরে পাঠায় সরকার। দুদকের পক্ষ থেকে আজ আদালতে বলা হয়েছে, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, তিনি দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তিনি দেশত্যাগ করলে দুর্নীতির রেকর্ডপত্র ও সম্পদ বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। আদালত শুনানি নিয়ে সিআইডির সাবেক প্রধানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) সাফিনুল ইসলামের আটটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করে দুদক। তাতে বলা হয়, সাফিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। আদালত ওই আট ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনের ১৩টি বিও হিসাব আদালতের কাছে তুলে ধরেছে দুদক। দুদক লিখিতভাবে আদালতকে বলেছে, সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্রসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। আদালত শুনানি নিয়ে তাঁদের ১৩টি বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

এ ছাড়া নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, স্ত্রী হালিমা সুলতানা, ছেলে সাদ আল জাবির আবদুল্লাহ, মেয়ে লাবিবা আবদুল্লাহ ও হাবিবুন নাহারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে দুদক। দুদক আদালতকে লিখিতভাবে বলেছে, নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক হ স ব অবর দ ধ আবদ ল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীন আদমজী এম.ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদমজীনগর মার্চেন্ট ওয়ার্কার্স (এম.ডব্লিউ) উচ্চ বিদ্যালয় গত পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীনভাবে চলছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অচল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাঠামো, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিপর্যস্ত।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভায় বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার একের পর এক হাইকোর্ট রিট দায়ের এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তথ্য মতে, ২০২১ সালে নন-এমপিভুক্ত কেজি শাখার টিউশন ফি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি অভিযোগে প্রদান শিক্ষক গাজী নাজমুল হুদাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কিন্তু তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। উল্টো প্রমাণ পাওয়া গেছে, তিনি ৭,৭৭,১৯৪ টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। এরপর শিক্ষা অধিদপ্তর ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।

তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং স্বৈরাচারী ঘরানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রধান শিক্ষক রওশন আরার রিট দায়ের করা, এই দুইয়ের চাপে গাজী নাজমুল হুদা এখনও বিদ্যালয়ে ফিরতে পারেননি।

সর্বশেষ হাইকোর্টের দেওয়া ৬ মাসের রিটের মেয়াদ ১৭ মে শেষ হয়েছে। চতুর্থ বারের মত তার যোগদান ঠেকাতে আবারও রিট দায়ের করা হচ্ছে বলে জানান গাজী নাজমুল হুদা।

এদিকে, বিদ্যালয়ে গত ৯ মাস ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি নিয়মিত কমিটি না থাকায় কাগুজে দায়িত্ব পালন করলেও কার্যত প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল অবস্থায় রয়েছে।

গাজী নাজমুল হুদা বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। বেতন না থাকায় স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছি। বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারলেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগও ক্রমাগত বাড়ছে। রওশন আরার বিরুদ্ধে অডিটের নামে ১০ লক্ষাধিক টাকার অপচয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অর্থ কেটে নেওয়া, এবং অডিট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠেছে।

এক শিক্ষক বলেন, “রওশন আরা আমাদের জানিয়েছেন, অডিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হলে টাকা লাগবে। এজন্য বেতন থেকে অংশ কেটে নিচ্ছেন।”

অভিভাবকদের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে একাধিকবার ‘মানববন্ধনের নাটক’ সাজানো হয়েছে।

এক অভিভাবক বলেন,“আমার সন্তানন জানেই না কেন তাকে মানববন্ধনে দাঁড় করানো হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাপ দিয়ে ওদের নামিয়ে আনে।”

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুরাইয়া আশরাফী বলেন,“ বোর্ডেও নির্দেশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে স্বপদে পুনর্বহাল করা আইনগত এবং মানবিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অচলাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও এলাকাবাসী শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা দ্রুত সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, এবং যোগ্য প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবিতে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা-বিষয়ক সেমিনার
  • স্ত্রীসহ বিজিবির সাবেক ডিজির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
  • ৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকবিহীন আদমজী এম.ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়
  • রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ