গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল আদালতের কাছে দাবি করেছেন, যে নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী। তিনি ধর্ষণ করেননি।  

ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও আদালতে কাবিননামা জমা দিতে পারেননি নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন।

ওই নারীকে সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে নোবেলের বিরুদ্ধে। নোবেলকে গ্রেপ্তারের পর আজ বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত)  মো.

মুরাদ হোসেন আজ মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কণ্ঠশিল্পী নোবেল ওই নারীকে বিয়ে করেছেন, এমন কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে জমা দিতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ীর কোনো একটি বাসায় ওই নারীর সঙ্গে নোবেলের মৌখিকভাবে বিয়ে পড়ানোর একটি ঘটনা রয়েছে; কিন্তু বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি কাবিননামা নেই।’

ডেমরা থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, সাত বছর আগ (২০১৮) ফেসবুকে নোবেলের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। তিনি মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসায় থেকে রাজধানীর একটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়তেন। তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর ডেমরায় নোবেলের স্টুডিও দেখানোর জন্য ওই নারীকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আটটার দিকে তিনি (নারী) বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেন নোবেল। পরে মুঠোফোনটি ভেঙে ফেলেন। এরপর তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের সেই ভিডিও ধারণ করেন নোবেল। পরে ভয় দেখিয়ে সাত মাস ধরে ওই বাসায় তাঁকে আটকে রাখা হয়।
পুলিশ আদালতকে আরও জানায়, ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর (নারী) বাবা-মা ঢাকায় আসেন। পরে ওই নারীকে নোবেলের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি আছেন।

নোবেল কাঠগড়ায়

বেলা তিনটার দিকে আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয় নোবেলকে। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো নোবেলের ডান হাতে ছিল হাতকড়া। পরনে সাদা রঙের টি-শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট। পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। কাঠগড়ার পাশেই ছিলেন ১০ জন পুলিশ সদস্য।

বেলা তিনটার পর কিছুক্ষণ পর এজলাসে আসেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মাঈনুল আহসান নোবেলের নাম ধরে ডাকেন।

তখন নোবেল হাত উঁচু করেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে।’

তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘কণ্ঠশিল্পী নোবেলের বিরুদ্ধে একজন ভুক্তভোগী ধর্ষণের মামলা করেছেন। ওই ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে। পরে ওই নারীকে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ডেমরা একটি বাসায় ডেকে নেন নোবেল। পরে ওই নারীকে তিনি ধর্ষণ করেন।’

আরও পড়ুন৭ মাস ধরে বাসায় আটকে ধর্ষণের অভিযোগ নোবেলের বিরুদ্ধে, ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে নারীকে উদ্ধার: পুলিশ৮ ঘণ্টা আগে

ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন নোবেলের আইনজীবী মো. জসীম উদ্দিন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমার মক্কেল নোবেল একজন জনপ্রিয় শিল্পী। আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে যিনি মামলা করেছেন, তিনি নোবেলের স্ত্রী। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি।’

নোবেলের আইনজীবীর কাছ থেকে এই কথা শোনার পর আদালত ওই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, আপনারা যে বলছেন, মামলার বাদী নোবেলের স্ত্রী। কিন্তু এর প্রমাণ কী। কাবিননামা এনেছেন?

এ সময় পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, মামলার বাদী যদি নোবেলের স্ত্রী হন, তাহলে কাবিননামা কোথায়? কাবিননামাই তো বিয়ের একমাত্র প্রমাণ। কাবিননামা জমা না দিয়ে মামলার বাদীকে স্ত্রী দাবি করা ঠিক নয়। মূলত নোবেল ওই নারীকে ব্ল্যাকমেল করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন।

আরও পড়ুনধর্ষণের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ, নোবেলের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ৩ ঘণ্টা আগে

তখন আইনজীবী জসীমউদ্দীন আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, নোবেলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর পারিবারিক মনোমালিন্য হয়েছিল। পরে পুলিশ তাঁকে ডাকলে নিজেই তিনি থানায় যান। থানা-পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে। যে কারণে বিয়ের কাবিননামাসহ অন্যান্য কাগজপত্র তাৎক্ষণিকভাবে জোগাড় করতে পারেননি।

গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেলকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ২০ মে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ওই ন র ক ক ব নন ম আইনজ ব ন ব লক কর ছ ন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জামিন নামঞ্জুর

প্রহসনের নির্বাচন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন নূরুল হুদার জামিন আবেদন করে তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে নূরুল হুদার আইনজীবী সজিব বলেন, আমরা আজ নূরুল হুদার জামিন চেয়ে আবেদন করি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। কী গ্রাউন্ডে তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেই আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

এর আগে মঙ্গলবার এ মামলায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নূরুল হুদা। দুই দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে ওইদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি স্বেচ্ছায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে তদন্ত কর্মকর্তা তা রেকর্ড করার আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলা করে বিএনপি। মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ২২ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জ্যাকুলিন
  • রংপুরে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে মানসিক-যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতের মামলা
  • যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর ওপর আক্রমণের অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ গ্রেপ্তার
  • বরিশালে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
  • নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে রুল শুনানি মুলতবি
  • চানখাঁরপুলের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ১৪ জুলাই
  • ‘সাংবাদিক নির্যাতন-বাকস্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা জানালেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক-অধিকারকর্মী
  • ‘সাংবাদিক নির্যাতন-বাকস্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা জানাল ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক-অধিকারকর্মী
  • বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ: আপিলের শর্তে জামিন পেলেন আইনজীবী
  • সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জামিন নামঞ্জুর