শাহরিয়ার আলম সাম্য স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সাম্য ভাস্কর্যের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
Published: 20th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর স্মৃতি ধরে রাখতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সাম্য ভাস্কর্য’–এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে এই ভাস্কর্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
শাহরিয়ার হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে শাহরিয়ারের প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার ও হত্যার বিচারের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস সিদ্দিক সায়মন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন, যেমন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সমন্বয়ে সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে এই প্ল্যাটফর্মটি গঠিত হয়েছে। তবে এর কোনো কমিটি নেই।’ এই প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে শাহরিয়ারের স্মৃতি ধরে রাখতে ভাস্কর্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
ফ্যাসিবাদবিরোধী সাম্য ভাস্কর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীরা। ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা সাম্য তাঁর অর্জিত বাংলাদেশেই নিরাপত্তা পাননি। পরবর্তী প্রজন্ম এই ভাস্কর্য থেকেই জানবে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে একজন অগ্রসৈনিক তার ত্যাগের ন্যূনতম মূল্যায়নটুকু পাননি।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়ে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরও প্রশাসনের উদাসীনতা ও দায় এড়ানোর প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।’
শাহরিয়ার জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের বহু আগে থেকে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে রাজপথে থেকে সংগ্রাম করে আসছিলেন। তাঁর সেই লড়াই, আত্মত্যাগ ও স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে, তাঁর আদর্শকে ধারণ করে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাম্য ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে এবং সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, আজ ফ্যাসিবাদবিরোধী সাম্য ভাস্কর্যের ভিত্তি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর শাহরিয়ার আলম সাম্যর পরিবার ও বন্ধুদের অনুমতিক্রমে এখানে তাঁর প্রতিকৃতি অথবা অন্য কোনো প্রতীকী ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম য ভ স কর য ভ স কর য র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও পুরুষতান্ত্রিক নানা বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হচ্ছে, এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী–পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিকভাবে খারাপ সময় পার করছি। একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে একমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারে।”
কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, “ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মাজার, দরগা, শিল্পী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতা। এই আক্রমণ জাতিসত্তার উপর আক্রমণ, আমাদের শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তির উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ওরফে পান্না বেগম বলেন, “আজ আমি খুব আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। আমি একজন সফল নারী বলে নিজেকে সম্মান করি। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করি। কারোর মুখাপেক্ষী হইনি। একটি পত্রিকা কারোর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিত প্রকাশ করা এতোটা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, “সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আমার একটি চিন্তা ছিল। পত্রিকাটির নাম পঙ্ক্তি কেন? খুব চিন্তা করে এর দুইটি কারণ খুঁজে পেলাম। একটি হলো-এই পত্রিকাটির সম্পাদক একজন কবি ও সাংবাদিক। উনার কবিসত্তার চিন্তাধারা থেকে এই নামটি নির্ধারণ করেছেন। কারণ পঙ্ক্তি শব্দের অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আর দ্বিতীয়টি হলো- সম্পাদকের একমাত্র কন্যার নাম পঙ্ক্তি। সন্তানের প্রতি একজন মায়ের যে অসাধারণ ভালোবাসা, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান, কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ, বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন প্রমুখ।
ঢাকা/এসবি