কোথাও পানিতে ময়লা-পোকা কোথাও পানি নেই
Published: 23rd, May 2025 GMT
কোথাও পানি সংকট। কোথাও পানি আসে ঘোলা, সঙ্গে ময়লা ও পোকা। সিটি করপোরেশনের নালা নির্মাণ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সমস্যা সমাধানে নতুন নেওয়া প্রকল্পগুলো শেষ হতে অন্তত দেড় বছর লাগবে।
পানি নিয়ে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। তাই নগরবাসীর অভিযোগ জানানোর জায়গাও নেই। অভিযোগ পেলেও লোকবল সংকট, অর্থ সংকটে কাজ করতে পারছে না সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ। ৬৫ ভাগ গ্রাহকই পানির বিল দেন না। অন্যদিকে ওয়াসা আমলের দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট জটিলতা চেপেছে সিটি কর্পোরেশনের ঘাড়ে।
নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডের বাসিন্দা আশিকুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বললেন, ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা খাওয়া যায় না। ফুটালেও দুর্গন্ধ থাকে। অনেক সময় গোসল করাও যায় না। সিটি করপোরেশন রাস্তায় কাজ শুরুর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ। মনে হয় নালার পানি ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে বাসায় আসে। প্রায়ই পানি আসে খুব ঘোলা। সঙ্গে সঙ্গে ময়লা, পোকা।
নগরীর নয়ামাটি এলাকার বাসিন্দা সনি দে ও খানপুরের বাসিন্দা মিতু আহমেদ জানান, এসব এলাকায় নিয়মিত ওয়াসার পানি আসে না। এলেও তাতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকে।
১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় ওয়াসা। কিন্তু ওয়াসার বিরুদ্ধে নগরবাসীর অভিযোগের ফলে ২০১৯ সালে আবারও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় সিটি কর্পোরেশন। দায়িত্ব ফিরে পেলেও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে।
সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের জানান, তাদের একজনও উপসহকারী প্রকৌশলী নেই। প্লাম্বার বা পানির লাইন মিস্ত্রি নেই। মাঠপর্যায়ে যেতে হলে প্রকৌশল পরামর্শক বা তাঁকে বা অন্য বিভাগের লোককে পাঠাতে হয়।
সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলেছে দুটি বড় নালা নির্মাণ। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ও পূর্ব দিক দিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার নালা প্রশস্তের কাজ চলছে। এসব নালার নিচ দিয়েই পানির লাইন, বিদ্যুত লাইন, টিএন্ডটির লাইন, ইন্টারনেটের ফাইবার ক্যাবল গিয়েছে। কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই ওয়াসার পাইপ কেটে ফেলছে শ্রমিকরা। ফলে নালার পানি ওয়াসার লাইনে ঢুকে যাচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে তারা অন্তত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই দশমিক দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ করবেন বলে আশা করছেন।
ঈদের আগে নালার কাজ শেষ হলেও দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর। সিটি এলাকায় ১৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও তাদের সক্ষমতা ১১ কোটি লিটার। ত্রিশ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ জোন তাদের মেশিনপত্র আধুনিকায়ন না করায় প্রায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি পাম্প নষ্ট থাকছে। ফলে সংকট থেকেই যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিশটি নতুন পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম দশটি এক মাসের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছে সিটি কর্পোরেশন। পরের দশটি আরও তিন মাস পরে চালু হতে পারে। তবে ১৪৯ বছরের পুরোনো লাইন না বদলালে ভালো পানির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এটির জন্য ১৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, যা বাস্তবায়নে অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের।
পানি সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন কাজ করতে না পারার আরেকটি কারণ নিজস্ব তহবিল সংকট। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মাত্র ৩৫ ভাগ গ্রাহক পানির বিল দেন। প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি বিক্রি করে সিটি করপোরেশনের মাসে ৫ কোটি টাকা আসার কথা থাকলেও আসে মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ পানির পাম্পের বিদ্যুৎ বিলই আসে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর বাইরে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন, মেরামত খরচ প্রভৃতি। তবে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে তদারকির অভাব।
কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। মেয়র থাকলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আনতেন। প্রশাসক বলেই হয়তো সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে দুই দিন গেলে তাঁর অফিস সহকারী জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ট সরবর হ র র ল ইন সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪