কোথাও পানি সংকট। কোথাও পানি আসে ঘোলা, সঙ্গে ময়লা ও পোকা। সিটি করপোরেশনের নালা নির্মাণ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সমস্যা সমাধানে নতুন নেওয়া প্রকল্পগুলো শেষ হতে অন্তত দেড় বছর লাগবে। 

পানি নিয়ে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। তাই নগরবাসীর অভিযোগ জানানোর জায়গাও নেই। অভিযোগ পেলেও লোকবল সংকট, অর্থ সংকটে কাজ করতে পারছে না সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ। ৬৫ ভাগ গ্রাহকই পানির বিল দেন না। অন্যদিকে ওয়াসা আমলের দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট জটিলতা চেপেছে সিটি কর্পোরেশনের ঘাড়ে। 

নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডের বাসিন্দা আশিকুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বললেন, ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা খাওয়া যায় না। ফুটালেও দুর্গন্ধ থাকে। অনেক সময় গোসল করাও যায় না। সিটি করপোরেশন রাস্তায় কাজ শুরুর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ। মনে হয় নালার পানি ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে বাসায় আসে। প্রায়ই পানি আসে খুব ঘোলা। সঙ্গে সঙ্গে ময়লা, পোকা। 

নগরীর নয়ামাটি এলাকার বাসিন্দা সনি দে ও খানপুরের বাসিন্দা মিতু আহমেদ জানান, এসব এলাকায় নিয়মিত ওয়াসার পানি আসে না। এলেও তাতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকে। 
১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় ওয়াসা। কিন্তু ওয়াসার বিরুদ্ধে নগরবাসীর অভিযোগের ফলে ২০১৯ সালে আবারও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় সিটি কর্পোরেশন। দায়িত্ব ফিরে পেলেও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। 

সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের জানান, তাদের একজনও উপসহকারী প্রকৌশলী নেই। প্লাম্বার বা পানির লাইন মিস্ত্রি নেই। মাঠপর্যায়ে যেতে হলে প্রকৌশল পরামর্শক বা তাঁকে বা অন্য বিভাগের লোককে পাঠাতে হয়। 

সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলেছে দুটি বড় নালা নির্মাণ। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ও পূর্ব দিক দিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার নালা প্রশস্তের কাজ চলছে। এসব নালার নিচ দিয়েই পানির লাইন, বিদ্যুত লাইন, টিএন্ডটির লাইন, ইন্টারনেটের ফাইবার ক্যাবল গিয়েছে। কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই ওয়াসার পাইপ কেটে ফেলছে শ্রমিকরা। ফলে নালার পানি ওয়াসার লাইনে ঢুকে যাচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে তারা অন্তত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই দশমিক দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ করবেন বলে আশা করছেন।

ঈদের আগে নালার কাজ শেষ হলেও দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর। সিটি এলাকায় ১৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও তাদের সক্ষমতা ১১ কোটি লিটার। ত্রিশ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ জোন তাদের মেশিনপত্র আধুনিকায়ন না করায় প্রায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি পাম্প নষ্ট থাকছে। ফলে সংকট থেকেই যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিশটি নতুন পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম দশটি এক মাসের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছে সিটি কর্পোরেশন। পরের দশটি আরও তিন মাস পরে চালু হতে পারে। তবে ১৪৯ বছরের পুরোনো লাইন না বদলালে ভালো পানির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এটির জন্য ১৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, যা বাস্তবায়নে অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের। 

পানি সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন কাজ করতে না পারার আরেকটি কারণ নিজস্ব তহবিল সংকট। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মাত্র ৩৫ ভাগ গ্রাহক পানির বিল দেন। প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি বিক্রি করে সিটি করপোরেশনের মাসে ৫ কোটি টাকা আসার কথা থাকলেও আসে মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ পানির পাম্পের বিদ্যুৎ বিলই আসে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর বাইরে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন, মেরামত খরচ প্রভৃতি। তবে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে তদারকির অভাব।

কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। মেয়র থাকলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আনতেন। প্রশাসক বলেই হয়তো সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে দুই দিন গেলে তাঁর অফিস সহকারী জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠালেও সাড়া মেলেনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স ট সরবর হ র র ল ইন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ের কাইকারটেক হাটে নির্বাচনী প্রচারণায় মামুন মাহমুদ 

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের কাইকারটেক রোববার (২ নভেম্বর) সাপ্তাহিক হাটে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এই হাট শত বছরের পুরনো এবং হাটের দিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
প্রচারণার সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুল, ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিন, ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন,  ৯ নং ওয়ার্ড গাজী নুরুজ মিয়া, সাধারন সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন, কৃষক দলের সোনারগাঁ উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক কাজী সিরাজুল ইসলাম, কৃষক দল নেতা দুলাল, কাজী এনামুল হক রবিন, নারায়ণগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক কাজী তারেক আহমেদ লিওন, সোনারগাঁ কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, প্রভাষক রোমানা জাহান বন্যা, রোজিনা আক্তার, ফরিদা আক্তার, মহসিন সরকার প্রমূখ।


দুপুর আড়াইটায় জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ হাবিবুর রহমান হাবিব এর দলদার গ্রামের বাসভবনে গিয়ে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কুশল বিনিময় এবং পরিবারের খোঁজ খবর নেন। এসময়ে জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুল ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এর সঙ্গে ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • সোনারগাঁয়ের কাইকারটেক হাটে নির্বাচনী প্রচারণায় মামুন মাহমুদ 
  • পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • সবজির দাম কমতির দিকে, আটার দাম কেজিতে বাড়ল ৫ টাকা