স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে (বাংলাদেশের রপ্তানি) ভারত সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে অন্তবর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে চলমান রপ্তানি ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধটি স্থগিত করতেও অনুরোধ করেন তিনি। সংগঠনটির একাধিক নেতা বাণিজ্যসচিবকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ১৭ মে ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

বিকেএমইএর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উদ্যোগে ১৮ মে এবং বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে ২০ মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদার ঐকমত্যে পৌঁছান, সেটা হলো বাংলাদেশ সরকারকে সচিব পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থলবন্দরগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ করে, যার মধ্যে বড় একটি অংশ তৈরি পোশাক। গত ১০ মাসে স্থল বন্দরগুলো দিয়ে ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে গত ৮ মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে রপ্তানি পণ্য সীমান্তে আটকে গেছে, অনেক পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে এবং এলসির মাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সুনাম দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মোহাম্মদ হাতেম সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানিকারকেরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করতে হবে, যেন তারা অন্তত তিন মাসের সময় দেয় এবং বর্তমানে প্রক্রিয়ারত রপ্তানি আদেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখে।’

১৭ মে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্কস্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশ বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।
বিকেএমইএর চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প শ ক আমদ ন ব ক এমইএর প রক র য় অন র ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এক্সপোর্ট পারমিট জটিলতায় আগরতলায় মাছ রপ্তানি বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় মাছ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) জটিলতার কারণে বুধবার সকাল থেকে এ রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন মৎস্য রপ্তানিকারকরা।

বাংলাদেশ মৎস্য রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া জানান, “আমরা ইএসপি সমস্যার কারণে আজ আগরতলায় মাছ পাঠাতে পারিনি। তবে আশা করছি, আগামীকাল থেকে আবার রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।”

এদিকে হঠাৎ করে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ছয়টি পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আখাউড়া বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে হিমায়িত মাছসহ প্লাস্টিক সামগ্রী, পিভিসি পণ্য, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ৪২৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, আর চলতি অর্থবছরে গেলো এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও এর প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই ভারত আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।

স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, আজ সকালে বন্দরে মাছবাহী কোনো গাড়ি আসেনি। তবে সিমেন্ট ও ভোজ্য তেল নিয়ে ১১টি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে।

উল্লেখ্য, আখাউড়া স্থলবন্দর দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্দর। এখান থেকে ত্রিপুরা ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পারমিট জটিলতা কাটিয়ে আখাউড়া দিয়ে মাছ রপ্তানি শুরু
  • ভারতের বিধিনিষেধে আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কমেছে ৪০%
  • রপ্তানি অনুমতির জটিলতা কাটিয়ে আগরতলায় মাছ রপ্তানি শুরু
  • ‘২৪ ঘণ্টা বন্দর চালু না রাখলে বেতন-ভাতার দায়িত্ব নেবে না মালিকরা’
  • এক্সপোর্ট পারমিট জটিলতায় আগরতলায় মাছ রপ্তানি বন্ধ
  • পাল্টা পদক্ষেপ নয়, ভারতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাইবে ঢাকা
  • আলোচনায় সমাধান সম্ভব