জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অংশী পক্ষগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভক্তি ও মতভেদ দেশে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগ’ করবেন কি না, সে প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দেশের বর্তমান বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়িত্বশীল, বাস্তবসম্মত ও দূরদর্শী পদক্ষেপই দেশকে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ছাত্রদের নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণ গত বছরের ৫ আগস্ট যেভাবে দেশের ওপর চেপে বসা স্বৈরশাসনকে বিদায় করেছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষের মনে অনেক স্বপ্ন ও আশার জন্ম দিয়েছিল। নতুন কোনো স্বৈরতন্ত্র চেপে বসার ঝুঁকি থেকে চিরতরে মুক্তি ও উন্নত গণতন্ত্রের পথে যাত্রার মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, গত প্রায় ১০ মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা আশার বদলে হতাশা তৈরি করেছে। একদিকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের অংশী পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধের মাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ও অসহযোগিতামূলক আচরণ, মবতন্ত্র, প্রায় প্রতিদিনই রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক কোনো না কোনো পক্ষের সড়ক অবরোধ, অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা দুর্বলতা পরিস্থিতিকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগই কি বর্তমান সমস্যার সমাধান? আমরা মনে করি, এ সময় এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বর্তমান সংকটকালীন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বরং এই আত্মানুসন্ধান জরুরি যে কেন এবং কী কী কারণে এত স্বতঃস্ফূর্ত একটি গণ-অভ্যুত্থানের ১০ মাসের মাথায় এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?

আমরা মনে করি, গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূর করার দ্রুত ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া। গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া সহস্রাধিক শহীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনার বাইরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম কিছু ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে নিজ নিজ অবস্থানে অটল না থেকে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতামূলক অবস্থান নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে এ ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখা গেলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষতার যে প্রশ্ন বা অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার যেসব দিক আলোচিত হচ্ছে, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সামগ্রিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ রদবদল বা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কাউকে কাউকে বাদ দেওয়া, নতুন সদস্য যোগ করার বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতার ঘাটতি দূর করতে ও গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। এটা স্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই সময়সীমা নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন। এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারি—এই সময়সীমার মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট মাস নির্ধারণ ও সেই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নির্ধারণ করে দিলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় অনেকটাই কেটে যাবে।

দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে সরকার, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতৃত্ব ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি এবং সশস্ত্র বাহিনী—এসব পক্ষের মধ্যে কাজের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কোনো পক্ষের ভুল অবস্থান বা হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। আমরা আশা করব, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর স থ ত উপদ ষ ট সরক র র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয় 

রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারী করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস (কার্যপরিধি নির্ধারণ) এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এগুলো  সময়সাপেক্ষ। এ কাজ সম্পাদন না করে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১২ মে জারি করা রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৫ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়।   

সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উপদেষ্টারা ধৈর্য্য ধরে তাদের কথা শোনেন এবং তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দেন, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনা করে জারী করা অধাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে। 

ফলপ্রসু আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশটি জারী করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি শেষ করতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ।  

এ ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য এলোকেশন অফ বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এ সকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ। যেহেতু এই কাজগুলো শেষ না করে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনি বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সদস্যের মধ্যস্ততায় সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে: 

১. যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি সময়সাপেক্ষ, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সকল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।

২, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

৩. বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।

৪. কাস্টমস ও কর ক্যাডার সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। 

রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু এবং করাদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আম-লিচুতে ভরেছে রাজশাহীর বাজার, অনিশ্চিত ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’
  • অর্থ ছাড় ও বিল দাখিলের সময় বেঁধে দেওয়া হলো
  • এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয় 
  • সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ৭ দিনের সময়সীমা তাজকিনের
  • অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে: অর্থ মন্ত্রণালয়
  • নওগাঁয় আম পাড়া উৎসব শুরু, এখনো জমেনি আমের হাট
  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার নতুন তারিখ প্রকাশ
  • শাবিপ্রবিতে অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন