সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ
Published: 24th, May 2025 GMT
সড়কে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত কোনো এক পক্ষের কাজ নয়। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমন্বিত কাজের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে আলোচকেরা এসব মত দেন।
‘সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ এবং সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের আয়োজন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সংলাপের শুরুতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয় এতে। সেই সঙ্গে জাতীয় বাজেটে সড়ক পরিবহন–সংশ্লিষ্ট খাতে মোট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যয় করার দাবি জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যেটা দরকার, একটা কানেকশন তৈরি করে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারা। রোড সেফটির সঙ্গে কিন্তু অনেক কিছু ইনভলভ। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এবারের জাতীয় বাজেটে সড়ক পরিবহন খাতের ব্যয়ের ১৩ শতাংশ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যয় করার প্রস্তাব করা হবে জানিয়ে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এই গভর্মেন্টটা তো লিমিটেড টাইমের জন্য এসেছে। উই ক্যান অ্যাকচুয়ালি স্টার্ট দ্য প্রসেস। হোপফুলি নেক্সট গভর্মেন্ট এসে হয়তো জিনিসটা দেখবে। পুরো জিনিসটা আসলে থাকা উচিত আন্ডার ওয়ান আমব্রেলা।’
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক যানবাহন পরিচালনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো.
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় প্রথমে দেখতে হবে, বিজ্ঞানভিত্তিক সড়ক পরিকল্পনা হয়েছে কি না।
আরও পড়ুনরাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ জরুরি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) জ্যেষ্ঠ রোড সেফটি স্পেশালিস্ট মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরা রাজধানীর সব প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেছি। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কাউকে বাদ দিয়ে, কাউকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে হবে না।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, যাঁরা এ খাতের নীতিনির্ধারণী কাজ করেন, তাঁরা গণপরিবহন ব্যবহার করেন না, ফলে তাঁদের উপলব্ধি নেই। প্রয়োজনীয় বাজেট বাড়াতে হবে। লুটপাট বন্ধ করতে হবে। গণপরিবহনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য গণপরিবহন—এমন একটি জনবান্ধব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৯ জন মারা গেছেন: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন০৭ এপ্রিল ২০২৫রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান কামরান উল বাসেত, হাসিনা বেগম ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর, বিআরটিএর সাবেক বোর্ড সদস্য আবদুল হক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রকৌশলী শাহীন সরকার, ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খান প্রমুখ।
আরও পড়ুনসড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন২৭ জানুয়ারি ২০২৪আরও পড়ুনএপ্রিলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারে দুর্ঘটনায় নিহত সবচেয়ে বেশি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনপৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন: রোড সেফটি কোয়ালিশন১৭ অক্টোবর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণপর বহন একসঙ গ ক জ কর ন বল ন শ সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের যে স্থান থেকে একসঙ্গে দেখা যায় পাহাড়-সাগর আর ঝরনা
সাগরের পাশে বিশাল পাহাড়। সেই পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়েছে শীতল পানির ঝরনা। পাহাড়-ঝরনার নাম—হিমছড়ি। তবে পাহাড়টি আগে পরিচিত ছিল ‘হিমপরির পাহাড়’ নামে। স্থানীয় মানুষের কাছে প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, একসময় উঁচু পাহাড়টির চূড়ায় সময় কাটাতেন সাগর থেকে উঠে আসা পরিরা। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফের দিকে ১২ কিলোমিটার এগোলোই দেখা মেলে এই পাহাড়ের। এলাকাটির নামই এখন হিমছড়ি। এলাকায় অবস্থিত সমুদ্রসৈকতও পরিচিত হিমছড়ি সৈকত নামে।
প্রায় ২৮০ ফুট উঁচু হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়ায় বসে দেখা যায় চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য। উপভোগ করা যায় সমুদ্রের গর্জন। ঝরনার শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই।
সড়কপথে হিমছড়ি পৌঁছানোর পরই চোখে পড়ে দুপাশে শতাধিক দোকানপাট। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, জিপ-মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহনের ভিড়। অনেক পর্যটকের কাছে অস্বস্তিকর ঠেকে এই দৃশ্য। তবে হিমছড়িতে পাহাড়-সাগর আর ঝরনার দৃশ্য দেখার আনন্দ যেন এসব ভুলিয়ে দেয়।
দেখা যায় ঝরনার আশপাশে কয়েকটি বিশ্রামাগার। ঝরনায় যাতায়াতের রাস্তাতে বসানো হয়েছে রকমারি পণ্য বেচাবিক্রির ২০ থেকে ২৫টি দোকান। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকেরা বিশ্রামাগারে বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ দোকানে গিয়ে সেরে নিচ্ছেন কেনাকাটা। শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য, ফলমূল, আচার, ডাব, চিনাবাদামসহ নানা খাবারদাবার রয়েছে এসব দোকানে। ঝরনার আশপাশে ১০ থেকে ১২ জন ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীকে ছবি তোলার জন্য পর্যটকদের পিছু নিতে দেখা যায়।গত শুক্রবার সকাল ১০টা। সরেজমিনে দেখা যায় হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে শতাধিক নারী-পুরুষের ভিড়। কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে পর্যটকেরা ভেতরে ঢুকছেন। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৩৫ টাকা। এক টিকিটেই ঝরনা দেখা ও পাহাড়চূড়ায় ওঠার সুযোগ। ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, পর্যটকদের বেশির ভাগ ছুটছেন ঝরনার দিকে। কেউ ঝরনার হিমশীতল পানিতে গা ভাসাচ্ছেন। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তরুণকে হিমছড়ি ঝরনায় পানি কম থাকা নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা যায়।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঝরনা দেখতে এসেছেন শিক্ষক কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী-সন্তানেরা বলে রাখেন, কক্সবাজার পৌঁছে সমুদ্রসৈকতের লোনাপানিতে গোসল সেরে তাঁদের হিমছড়ির ঝরনা দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। তাই ঝরনায় নিয়ে এলাম।’ কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ১১ বছর আগে তিনি প্রথমবার যে হিমছড়ি ঝরনা দেখে গেছেন, এখন যেন তার অনেক কিছুই নেই। পাহাড়ের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে খুবই কম। তাঁর দাবি, অযত্নে-অবহেলায় এই পাহাড়-ঝরনা সৌন্দর্য হারাচ্ছে।
কক্সবাজারের হিমছড়ির ঝরণা। অযত্ন-অবহেলায় ম্লান পানিপ্রবাহ। সম্প্রতি তোলা