দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান
Published: 24th, May 2025 GMT
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট আবার ঘনীভূত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি পদক্ষেপ– নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় বিলম্ব, মানবিক করিডোর নিয়ে অস্পষ্টতা এবং সমুদ্রবন্দর বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার উদ্যোগ সাম্প্রতিক সংকট সৃষ্টি ও ঘনীভূত করেছে।
প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সেই ক্ষেত্র প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় সংস্কার। এটি করার জন্য সরকারপ্রধান ড.
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গোলমেলে অবস্থান এনসিপির। দলটিতে নানা ধরনের শক্তি সমবেত হয়েছে। তবে সাধারণভাবে তারা সরকারকে নির্বাচনের আগে আরও সময় দিতে চায় অথবা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে চায়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করা।
জামায়াতের আমির কিছুদিন আগে লন্ডন সফরে গিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এসে বলেছিলেন, রমজানের আগে তথা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন ভালো হবে। সুতরাং দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াতের অবস্থানও স্পষ্ট নয়।
বামপন্থিরা অবশ্য মনে করেন, দেশে অনির্বাচিত সরকার দিয়ে না হবে মৌলিক সংস্কার, না আসবে স্থিতিশীলতা। কারণ দিন যত যাবে অনির্বাচিত সরকার আধাখেচড়া সংস্কারের জালে ততই আটকা পড়ে যাবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি ছাড়া শুধু স্বতঃস্ফূর্ত তরুণদের আন্দোলনের ওপর নির্ভর করে সংস্কারসিদ্ধ রাষ্ট্র পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই কারণে যে, তাদের মধ্যে মতাদর্শগত ভিন্নতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল নানা উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতার অভাব।
সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি; অনেকের আশঙ্কা, সংস্কার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা ক্ষমতা প্রলম্বিত করার অজুহাত কিনা। বাস্তবতা হলো– বাঘের পিঠে ওঠা সহজ, নামা কঠিন। বাঘকে বধ করে নামতে না পারলে বাঘের খাদ্য হওয়াটা তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এখন সেই আশঙ্কা অস্বাভাবিক নয়। এর মধ্যেই বিদেশ থেকে ‘পরামর্শক’ ডেকে এনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন বাণী দিয়ে সমস্যা বাড়িয়ে তুলছেন।
যেমন– সর্বশেষ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ‘মানবিক করিডোর’। আমরা জানি, রাখাইন ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একাধিক খেলোয়াড় এ অঞ্চলে খেলছেন। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ভারত, চীন চায় রাখাইন যেন মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের অবস্থান মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে; রাখাইনে মানবিক সংকট সমাধানে তারা তৎপর। এদের ভূমিকা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির অনুকূলে। এ রকম একটি জটিল অবস্থায় হঠাৎ কার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ মানবিক করিডোরের পক্ষে এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের কথা বললেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এর ফলে সরকার, রাজনৈতিক শক্তি, এমনকি সেনাবাহিনীকেও কথা বলতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, মানবিক করিডোরের সামরিক ঝুঁকি রয়েছে ষোল আনা।
তৃতীয় সংকটটি হচ্ছে সমুদ্রবন্দরের মতো একটি স্ট্র্যাটেজিক খাতের ব্যবস্থাপনা এমন এক বৈশ্বিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ, যার কিনা রেকর্ড রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে বিশেষ সহযোগিতার। ফলে স্বভাবতই অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে নানা সন্দেহের তীর ছোড়া শুরু হয়েছে। এই ধরনের কৌশলগত চুক্তির ম্যান্ডেট অনির্বাচিত সরকারের নেই। বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও বিএনপিও বলছে যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়া উচিত।
স্পষ্টতই তিন ধরনের ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত করে তুলেছে। এ থেকে মুক্তির সম্ভাব্য পথ হচ্ছে নিজেদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত এবং ‘থ্রি এম’ (মানি, মাসল, ম্যানিপুলেশন) মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; যেখানে স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে এবং প্রকৃতই গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত হবে। এ জন্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার বিকল্প নেই।
অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন বিচারে সাব্যস্ত ফ্যাসিস্ট বা সন্ত্রাসী কোনো দল বা বিভিন্ন আমলে গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন। সেটি করতে গিয়ে তাদের সাধারণ সমর্থক ভোটার বা তলের অসংখ্য সাধারণ রাজনৈতিক সমর্থকের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হরণ বা তাদের বিনা অপরাধে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। তাহলে সেই নির্বাচন প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজনীন এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতিসংঘের ওএইচসিআর রিপোর্টে ইতোমধ্যে তা বলে দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া উচিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজের মূল মনোযোগ বিন্দু। সেই পথে তারা নিজেরাও মুক্ত হতে এবং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের হাত থেকে আপাতত রক্ষা করতে পারবেন। দেশকেও সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে নিঃশ্বাস ফেলার পরিসর উপহার দিতে পারবেন। এটুকু করাই হবে জনমুখী সরকারসুলভ কর্তব্য। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের স্লোগান হোক– ‘ফিউয়ার বাট বেটার’ তথা বরং কম কিন্তু ভালো।
এম এম আকাশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ ন র ব চ ত সরক র র জন ত ক স সরক র র র র জন ন র আগ কর ড র ক ষমত ধরন র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুর ভোট আজ, ৭২ বছরে নির্বাচন ১৬ বার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। এটি হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৭২ বছরে রাকসুর ১৭তম নির্বাচন।
১৯৯০ সালের পর দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।
সাড়ে তিন দশক পর রাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভোট গ্রহণের জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭ কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে। ক্যাম্পাস ও আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটাদাগে প্রার্থী, তাঁদের সমর্থকেরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। কাল (বৃহস্পতিবার) এবং পরের দিনটায় (শুক্রবার) যদি তাঁরা এ রকম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যদি এটাকে আমানত হিসেবে দেখেন, তাহলে কাজটা স্বচ্ছ থাকবে।’
ধর্মঘট থেকে প্রথম নির্বাচনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও অফিস কার্যক্রম শুরু ১৯৬৪ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রথমে যে ছাত্র সংসদ গঠিত হয়, তার নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’। ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
‘রাকসু: অতীত ও বর্তমান’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ আছে রাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. আব্দুর রহমানের। তাতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের’ নির্বাচন আদায় করতে তখনকার শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট পর্যন্ত পালন করতে হয়েছিল। পরে প্রশাসন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০০৩ সালে একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করা হয়। সেখানে রাকসু নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে। স্মারকপত্র সূত্রে জানা যায়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন’ এবং রাকসু মিলিয়ে ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছে মোট ১৬ বার। এর মধ্যে ১০ বার নির্বাচন হয়েছে দেশের স্বাধীনতার আগে। স্বাধীনতার পর হয়েছে ছয়বার—১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪, ১৯৭৪-৭৫, ১৯৮০-৮১, ১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৮৯-৯০ সময়ে।
স্বাধীনতার পর রাকসুর নির্বাচনগুলোয় সহসভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রলীগ দুবার, ছাত্র মৈত্রী দুবার, ছাত্র ইউনিয়ন একবার এবং ছাত্রদল একবার জয়ী হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জাসদ ছাত্রলীগ তিনবার, ছাত্রলীগ দুবার ও ছাত্র ইউনিয়ন একবার জয়ী হয়েছে। ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষে শেষবার নির্বাচন হয়। ওই বছর ভিপি হন ছাত্রদলের রুহুল কবির রিজভী এবং জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস। এরপর আর রাকসু নির্বাচন হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, পঞ্চাশের দশকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে দেখা হতো না। এটা ছিল সামাজিক নেতৃত্ব তৈরির জায়গা। কিন্তু ষাটের দশকে ছাত্ররাজনীতি পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেখা গেল, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাঁরা বড় পদ পেতেন, তাঁরা ক্ষমতাসীনদের বিপরীত মতাদর্শের।
আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, ছাত্র সংসদ থেকে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করায় দেশের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ত। এতে সরকারও ভয়ে থাকত। শাসকগোষ্ঠীর ভয়ের কারণ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।
রাকসু ভোট-২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ হবে রাকসুর ভোট।
রাকসুতে পদ ২৫টি। এর মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়া বাকি ২৩টি পদে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকেন। এসব পদে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া প্রতিটি হল সংসদে ১৭টি পদ রয়েছে। সেখানেও সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ ছাড়া বাকি ১৫টি পদে নির্বাচন হয়। এ ছাড়া সিনেটের ৫টি পদে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন রাকসুর সঙ্গেই অনুষ্ঠিত হবে।
রাকসুর ২৩টি পদে ২৪৭ জন, ১৭টি হলে ১৫টি করে পদে ৫৯৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন ভোটার ৪৩টি পদে ভোট দিতে পারবেন। সময় পাবেন ১০ মিনিট।
রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে ১৬ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন ও ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।
রাকসু নির্বাচনে ১০টি প্যানেল লড়ছে। এগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল আছে মাত্র দুটি-ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ এবং ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এই দুই প্যানেলের পাশাপাশি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট–সমর্থিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়কের নেতৃত্বাধীন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ এবং নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খানের নেতৃত্বাধীন ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্রতিযোগিতায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে গত ২৮ জুলাই রাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ নানা কারণে ভোট গ্রহণের তারিখ তিনবার পিছিয়ে যায়। প্রার্থীরা পক্ষপাত, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। তবে ভোট বর্জনের ঘটনা ঘটেনি।
‘নিয়মিত রাকসু নির্বাচন হোক’গঠনতন্ত্রে রাকসুর কাজ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অনুষ্ঠান আয়োজন, বছরে অন্তত একবার সাময়িকী প্রকাশ, মানবহিতৈষী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও বক্তৃতার আয়োজন, প্রতিবছর অন্তত একবার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা ও পরিবেশগত সম্মেলনে প্রতিনিধিদের পাঠানো ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে ক্রীড়া, বিতর্ক, সাহিত্য—সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কাজ করতেন। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দিকপালেরা ক্যাম্পাসে আসতেন। এতে নেতৃত্ব বিকাশ হতো। নির্বাচনের আগে সব প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থীরা অনুষ্ঠানে তাঁদের ইশতেহার তুলে ধরতেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। খুব সুশৃঙ্খলভাবে এসব অনুষ্ঠান হতো। নির্বাচনের পর সবাই একসঙ্গে মিলে আবার কাজ শুরু করতেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন হতে থাকে।
সাবেক রাকসু নেতা ও শিক্ষকেরা বলছেন, ছাত্র সংসদের মূল কাজ হলো শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবি তুলে ধরা এবং তাঁদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা। রাকসু না থাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ছিল না। এ কারণে যখনই শিক্ষার্থীরা অধিকার আন্দোলনের দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের রোষানলে পড়তে হয়েছে। আবাসনসহ বিভিন্ন সংকটের সমাধান হয়নি। বরং ক্যাম্পাসে খুন, সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রাকসু নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাহানি বন্ধ হবে এবং দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রভাব কমবে বলে আশা করা যায়। এতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। তিনি চান, নিয়মিত রাকসু নির্বাচন হোক।