নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে হবে। তার জন্য আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। আর বিএনপির কোনো নেতাকর্মীরা দ্বারা  জনগণ কষ্ট পায় এমন কিছু করা যাবে না।

 আমাদের ভুলের কারণে যদি আগামী নির্বাচনে দল ক্ষমতা না আসে তাহলে কিন্তু আমাদেরকে সেই একই ভাবে আবারও হামলা মামলা, জেল জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আমরা চাই বিএনপি নেতাকর্মীদের গুণগত পরিবর্তন। 

গত দশ মাসে অনেকে অনেক কিছু করেছেন তার জন্য দলের অনেক বদনাম হয়েছে। সে সকল নেতাকর্মীদেরকে বলে দেবো আজ থেকে শেষ দিন এরপরে আর কোন দলের বদনাম হয় এমন কিছু করা যাবে না। আপনাদের সবাইকে আগে দেশ ও দলের স্বার্থ দেখতে হবে। 

কারণ আমাদের নেতা তারেক রহমান কিন্তু এখনো আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তিনি দিনরাত দেশ ও দেশের জনগণের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উনি যে কষ্ট করে আমাদের জন্য যদি নিজেদের কিছু ভুলের কারণে সেগুলোকে নষ্ট করে ফেলি তাহলে উনার কষ্টের কি মূল্য রইল। 

একটি কত পরিষ্কার করে বলতে চাই আমি চাইনা বিএনপির কোন নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করুক। যদি বিএনপি'র কোন থেকে নেতা গ্রেপ্তার হয় তাহলে সর্বপ্রথম কষ্ট পাবো আমি। যদি বিএনপির কোন থেকে নেতা অন্যায় করে তা হলো আমি সেটাও কষ্ট পাবো। সুতরাং আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আগামী দিনে পথ চলব। 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অন্তর্গত সদর থানা বিএনপির আওতাধীন ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম কার্যক্রম বিতরণ পূর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল শহরের পাইপাড়া জয়গোবিন্দ স্কুল মাঠে ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

তিনি বলেন, গত ১৭টি বছর এই ১৭নং ওয়ার্ডের কি অবস্থা ছিল তা আপনারা জানেন অনেকেই কিন্তু আমাদের কাছে বিচার দিয়েছেন। বিচার দিয়েছেন যে বাবুর লোকজন এই করেছে সেই করেছে হামলা করেছে মামলা দিয়েছে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেছে নির্যাতন করেছে।

যদি আমরা তার মত আচরণ করি তাহলে কি হবে। আমরা চাই আমাদের ভুলের কারণে নারায়ণগঞ্জ মানুষের শত্রু হলো সন্ত্রাসী শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান, আব্দুল করিম বাবুসহ যারা আওয়ামী লীগের দোসর ছিল ।

তারা জনগণের উপর অন্যায় অত্যাচার করেছে। আমরা যদি তাদের মতন করি তাহলে তাদেরকে যেমন মানুষ ঘৃণা করে আমাদেরকে ঠিক একই ভাবে কিনা করবে। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম যারা বিএনপির নেতাকর্ম ও বিএনপিকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে তাদেরকে সদস্য করতে হবে। সরকারি বেসরকারি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রয়েছে তারা যদি সদস্য হতে চায় তাহলে তাদেরকে সদস্য ফরম দিতে হবে।

আর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদেরকেও সদস্য করতে হবে। নিজের মধ্যে গ্রুপিং থাকতে পারে কিন্তু দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গ্রুপিং করে দলের কোনো ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেনো বাদ না পড়ে।

কারন আমরা দল করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। সুতরাং আমাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্তকে মানতে হবে। 

মহানগর ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী জিয়াউল হাসান নাঈমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.

সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান।

এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক এড. কাজী রুবায়েত হোসেন সায়েম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাকিত মোস্তাকিন শিপলু, বিএনপি, ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান মন্টু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ প্রধান, দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান রাব্বি, প্রচার সম্পাদক লিয়াকত আলী লিটন, ক্রীড়া সম্পাদক মো. স্বপন প্রমুখ।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ম ব এনপ র ক ন ব এনপ র স র ব এনপ র ন ত কর ম আম দ র ম দ রক র জন য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ছাড়া কী করে সংস্কার হয়

এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তুলেছিল, সেটা মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। তাদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

কিন্তু তারা এর সঙ্গে আরেকটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তারা এটাকে গ্রহণ করছে ‘এনসিসি’ ইস্যু নিয়ে শর্ত দিয়ে। তারা এক ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মেয়াদবিষয়ক প্রস্তাব মেনে নেবে যদি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) ইস্যু বাদ দেওয়া হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এনসিসির মতো আর কোনো বডি নির্বাহী ক্ষমতার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে বা ইন্টারফেয়ার করে বা এমন ব্যবস্থা থাকলে আমরা সে প্রস্তাবটা গ্রহণ করব না। এনসিসির মতো ব্যবস্থা থাকলে আমরা আগের অবস্থায় থাকব।’ অর্থাৎ কারও প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ১০ বছর মানবেন না।

২.

বর্তমানে ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানাবিধ পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র তর্ক-বিতর্ক, দেনদরবার সমঝোতার প্রচেষ্টা চলছে। এই পুরো প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ সহজ করে তোলা এবং স্বৈরাচারের ফেরত আসাকে রুখে দেওয়া—সে বিষয়ে সবাই একমত। এখন আলাপ চলছে এর প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে।

সমঝোতার জন্য সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে, সত্য। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং টেকসই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য যেসব সংস্কার অবশ্যম্ভাবী, ‘এনসিসি’ তার মধ্যে অন্যতম।

আমরা দেখেছি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতির ‘ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য’ আনার প্রস্তাবনা। বাহাত্তর সালের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া আছে, যেটা আদতে একটা নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়।

সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের মধ্যে নির্দিষ্ট করতে এবং রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দেশে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়।

অথচ কমিশনের প্রস্তাবের পর এমন মতামত পাওয়া যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে দিলে নাকি ‘অকার্যকর প্রধানমন্ত্রী ও নাজুক নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠিত’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে! প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে দিলে নাকি ‘দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়া অথবা সুশাসন আসার সুযোগ’ কমে যাবে! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী (কখনো রাষ্ট্রপতি নামে) যে বিগত ৫৪ বছর নির্বাহী বিভাগের বাইরে গিয়ে সংসদ, আদালত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করে রেখেছিলেন, সে ব্যাপারে তাদের নিশ্চুপ দেখতে পাওয়া যায়।

৩.

বাহাত্তরের সাংবিধানিক বন্দোবস্তে নির্বাচনে বিজয়ী দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি জাতীয় সংসদেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সরকারি দলের সব সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে তাঁর সিদ্ধান্তে শুধু ‘হ্যাঁ-না’ বলার পাপেটে পরিণত হন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, সংসদনেতা হিসেবে তিনি সংসদের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে তিনি নিজ পছন্দে মন্ত্রী নিয়োগ ও অপসারণের পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। নির্বাহী বিভাগের সব উচ্চপদে নিয়োগ, পদায়ন, বদলি—সবটা হয় তাঁর একক ইচ্ছায়।

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব থাকায় সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শ’ অনুযায়ী দুদক, নির্বাচন কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষকসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেন। এমনকি পরামর্শ ছাড়াও সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেন। যদি কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কর্ম না করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সংবিধানের ৫২(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতা তো রইলই প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

এই বন্দোবস্তে রাষ্ট্রপতি ‘পরামর্শ’ না শুনলে কী হয়, তার উদাহরণ খুঁজতে গেলে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিণতি দ্রষ্টব্য। আর সংসদে যদি কোনো প্রধানমন্ত্রীর হাতে দুই-তৃতীয়াংশ মেজোরিটি থাকে, তাহলে তিনি এমনকি বাকশাল, চতুর্দশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিজের পছন্দের লোক বসাতে বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো), পঞ্চদশ সংশোধনী (গণ-আন্দোলনের মুখে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) ইত্যাদিও করে ফেলতে পারেন।

আরও পড়ুনপ্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতাকে সীমায় আনবে কে১৭ মে ২০২৫

সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মূলত নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন মোতাবেক রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মন্ত্রী ও আমলাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। নাগরিকের প্রাত্যহিক সেবাদানের জন্য যেসব মন্ত্রণালয় কাজ করে, সেগুলোর মাধ্যমে নাগরিক সেবা (পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি) নিশ্চিত করবে।

যেমন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগ জনগণকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ওয়াসা বিভাগ পানির ব্যবস্থা করবে, সড়ক মন্ত্রণালয় রাস্তাঘাট ঠিক করবে, রেল বিভাগ রেল যোগাযোগ, নৌপরিবহন বিভাগ নৌপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে, জননিরাপত্তা বিভাগের মাধ্যমে দেশের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। প্রতিরক্ষা বিভাগ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সীমান্ত সুরক্ষা দেবে। অর্থাৎ দেশের মানুষের নিত্যদিন যেসব সেবা প্রয়োজন, সেগুলো আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং দেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) এসব মন্ত্রণালয়ের প্রধান বা মন্ত্রী জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমলাদের তত্ত্বাবধান করবেন।

এর বাইরে রাষ্ট্রের অন্য যে দুটি (আইন তথা সংসদ এবং বিচার তথা আদালত) বিভাগ এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো আইন বিভাগ এমন আইন তৈরি করবে, যাতে জনগণের স্বার্থে নির্বাহী বিভাগ তাদের সেবা নিশ্চিত করতে পারে এবং সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের কাজের তদারকি করতে পারে। নির্বাহী বিভাগ যদি রাষ্ট্রের যেকোনো বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানে অন্যায় খবরদারি করতে যায় তাহলে এবং সংসদ যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন তৈরি করে তাহলে বিচার বিভাগ তাতে বাধা দিতে পারে।

৪.

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্বগুলো নির্বাহী বিভাগের খবরদারি ছাড়া পালন করতে পারা। সে জন্যই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাব রাষ্ট্রের বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে খুবই সময়োপযোগী। প্রস্তাবিত এনসিসির সদস্য সংখ্যা ৯। যাঁদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি বাদে বাকি ৮ জনই প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত।

দুর্ভাগ্যের বিষয় এনসিসি নিয়ে অজ্ঞতাবশত হোক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই হোক, দুই ধরনের ভুল মতামত দেখা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে রাখা গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না এবং সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে পরোক্ষ (ইলেকটোরাল কলেজ) ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির হাতে নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দেওয়া উচিত কি না?

প্রথমত, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এনসিসির একজন বাদে বাকি সবাই (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, দুই কক্ষের স্পিকার, দুই কক্ষের ডেপুটি স্পিকার ও অন্য বিরোধী দলের একজন সদস্য) জনগণের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত। তাই এনসিসি কোনোভাবেই গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

দ্বিতীয়ত, এনসিসির সভাপতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাহী বিভাগের কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার পাচ্ছেন না। কিংবা তাঁর কাছে কোনো নির্বাহী ক্ষমতাও নতুনভাবে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তিনি এনসিসির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কেবল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় এবং বিচার বিভাগে নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবেন। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের অন্তত দুজন সদস্যসহ এনসিসির ক্ষমতা ভাগাভাগি করছেন। তাই ওই অর্থে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শেয়ার করছেন না।

কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে শুধু তাঁর নির্দিষ্ট কর্ম এলাকাতেই (নির্বাহী বিভাগ) আবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাহী কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে জনগণের পক্ষে কাজে নিয়োজিত করতে পারাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করা।

ফরিদুল হক যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ
  • জুলাই আন্দোলন ছিল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা : বাঁধন
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে বাঁধন বললেন, সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না
  • স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা
  • এই বিশাল প্রকল্প কি বৃথাই যাবে
  • গণসংহতি আন্দোলন কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ, বিক্ষোভ মিছিল
  • এখন থেকেই জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে : গিয়াসউদ্দিন
  • ৭ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচির উদ্বোধন
  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ছাড়া কী করে সংস্কার হয়