সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কাটছাঁট রোধে সংবিধান সংশোধনে গণভোট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের যেকোনো সংশোধনীর প্রস্তাব উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলে তা গণভোটের জন্য উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তথা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেলে সংশোধনী প্রস্তাব পাস হবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন সুপারিশ করেছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের নাম হবে জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ হবে সিনেট। জাতীয় সংসদের আসন হবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০ জন নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হবেন। বাকি ৩০০ জন বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ১০ শতাংশ প্রার্থী হতে হবে তরুণ। নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ট দলই সরকার গঠন করবে। সরকার গঠনের উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা প্রভাব ফেলবে না।
রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে ১০০ জন নির্বাচিত হবেন। পাঁচজন মনোনীত হবেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর।
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকারের একটি পদ বিরোধী দল পাবে। নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা, আবারও বড় আকারে রাশিয়ার বিমান হামলা শুরু
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যকার তিন দিনের আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে বড় বিমান হামলাগুলোর একটি এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা গতকাল শনিবার শেষ হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপ ছিল ‘গঠনমূলক’। যদিও দুপক্ষই স্বীকার করেছে, কোনো ধরনের গঠনমূলক অগ্রগতির বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে মস্কো সত্যিকারের শান্তির পথে এগোতে রাজি কি না, তার ওপর।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া হামলায় রাশিয়া মোট ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো হামলার নিশানা করা হয়েছে।আলোচনার ক্ষেত্রে এ অচলাবস্থা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আর যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান আছে। কারণ, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী টানা অগ্রসর হচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া হামলায় রাশিয়া মোট ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো হামলার নিশানা করা হয়েছে।
এসব হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। হামলায় ২৯টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমেনকো নিশ্চিত করেছেন। হামলায় সাময়িকভাবে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে পারমাণবিক চুল্লিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনযুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের ‘গঠনমূলক’ আলোচনা১৫ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলেছে, মস্কোর অভিযানের শুরু থেকেই রুশ দখলে থাকা এ স্থাপনায় ছয়টি বন্ধ চুল্লিকে ঠান্ডা রাখতে এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ঠেকাতে অবিরাম বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘জ্বালানি স্থাপনাগুলোই ছিল (হামলার) প্রধান নিশানা।’ তিনি আরও বলেন, ড্রোন হামলায় রাজধানী কিয়েভের কাছে ফাস্তিভ শহরের একটি রেলস্টেশন ধ্বংস হয়েছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর তথ্যমতে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ৫৮৫টি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রের সাম্প্রতিক বাস্তবতা এখন রাশিয়ার অনুকূলে। এ অবস্থায় জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।
দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহরের খুব কাছে পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী। পাশের শহর মিরনোহরাদকেও প্রায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তারা।
রাশিয়া এখন কার্যত পুরো লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খেরসন পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকার বড় অংশও তাদের দখলে। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থা থাকলেও রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।শুধু নভেম্বর মাসেই রুশ সেনারা প্রায় ৫০৫ বর্গকিলোমিটার (১৯৫ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছেন, যা অক্টোবর মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
রাশিয়া এখন কার্যত পুরো লুহানস্ক অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খেরসন পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকার বড় অংশও তাদের দখলে। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থা থাকলেও রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সোমবার লন্ডনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসও সেখানে থাকবেন।
মাখোঁ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার ওপর আমাদের চাপ বজায় রাখতেই হবে।’
মায়ামির আলোচনার আগে গত মঙ্গলবার মস্কোতে উইটকফ ও কুশনারের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হয়। সেখানেও কোনো সমঝোতা হয়নি।
গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বীকার করা হয়েছে, যেকোনো চুক্তিতে বাস্তব অগ্রগতির বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে রাশিয়া কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে, তার ওপর।
আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি শুক্রবার বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শান্তি আলোচনার কারণে স্থগিত হয়ে যাবে না।
কৌঁসুলি নাজহাত শমীম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ পরোয়ানা সাময়িকভাবে স্থগিত করার একমাত্র উপায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি করাটা অবশ্যই প্রয়োজন।
এদিকে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানার দাবি থেকে সরে আসবেন না। শীতকালজুড়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।