Samakal:
2025-12-08@09:15:22 GMT

সংবিধান সংশোধনে লাগবে গণভোট 

Published: 15th, January 2025 GMT

সংবিধান সংশোধনে লাগবে গণভোট 

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কাটছাঁট রোধে সংবিধান সংশোধনে গণভোট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের যেকোনো সংশোধনীর প্রস্তাব উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হলে তা গণভোটের জন্য উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তথা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেলে সংশোধনী প্রস্তাব পাস হবে।’ 

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিশন সুপারিশ করেছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের নাম হবে জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ হবে সিনেট। জাতীয় সংসদের আসন হবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০ জন নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হবেন। বাকি ৩০০ জন বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ১০ শতাংশ প্রার্থী হতে হবে তরুণ। নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ট দলই সরকার গঠন করবে। সরকার গঠনের উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা প্রভাব ফেলবে না।

রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে ১০০ জন নির্বাচিত হবেন। পাঁচজন মনোনীত হবেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। 

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকারের একটি পদ বিরোধী দল পাবে। নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয়ের পরদিনও চলে শিরোমণির ট্যাংকযুদ্ধ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরে মানুষ যখন বিজয় উল্লাসে ব্যস্ত, তখনো খুলনায় যুদ্ধ চলছিল। 

খুলনার জাহানাবাদ সেনানিবাস এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমর স্মৃতিস্তম্ভের শিলালিপিতে লেখা আছে, ‘যৌথ বাহিনীকে খুলনার দিকে অগ্রসরে বাধা দেওয়ার জন্য পাকিস্তান বাহিনী শিরোমণি এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয়। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বরের পর যৌথ বাহিনী আবার ত্রিমুখী আক্রমণ করলে পাকিস্তান সেনাদের মনোবল ভেঙে যায়। ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী শিরোমনিতে চর্তুমুখী আক্রমণের মুখে পড়ে। সকাল ১০টা-বেলা ১১টার দিকে ব্রিগেডিয়ার হায়াতের নেতৃত্বে ৩ হাজার ৭০০ সেনা যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।’ এটি ‘শিরোমনি যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।  

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (সপ্তম খণ্ড) বইয়ে বলা হয়েছে, শিরোমণি যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুমানিক ২০০ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়। যৌথ বাহিনীর ২৫০-৩০০ জন শহীদ এবং ৩০০ জন আহত হন।

শিরোমণির যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন খুলনার বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরের নভেম্বরে তাঁরা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর নিয়মিত গেরিলা আক্রমণ চালাতেন। ডিসেম্বরের শুরুতে মিত্রবাহিনী যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। মেজর মহেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে একটি দল কলারোয়া থেকে তাঁদের চারজনকে সঙ্গে নেয় পথ দেখানোর জন্য। ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় মহেন্দ্র সিংহ তাঁর প্রশিক্ষক ছিলেন।

আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একাত্তরের বিজয়গাথা বইয়ে ‘খুলনা’ শিরোনামে মানিক সাহার লেখায় বলা হয়েছে, যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পাকিস্তানি বাহিনী খুলনায় চলে আসে। আশপাশের আরও কিছু এলাকা থেকে এসে কৌশলগত দিক বিবেচনা করে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে শিরোমণি এলাকায় শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে তারা। আর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী তখন খুলনার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর শিরোমণির অদূরে ফুলতলার ১৪ মাইল এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে মিত্রবাহিনী। 

১০ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর গোলাগুলি হয়। তবে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয় ১১ ডিসেম্বর সকাল থেকে। এই তথ্য জানিয়ে খুলনার বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান বলেন, ১৩ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত চলে লড়াই। ওই দিন বিকেলের পর সারা রাত শিরোমণি থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির আওয়াজ না পেয়ে তারা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়েছে বলে ধরে নেয় মিত্রবাহিনী। ১৪ ডিসেম্বর সকালে খুলনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে মিত্রবাহিনী। মিত্র বাহিনীর বহরটি শিরোমণি বাদামতলা এলাকায় আসামাত্র পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাংক হামলার মুখে পড়ে। 

মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম. রেজওয়ান বলেন, ওই ঘটনার পর ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ মঞ্জুর ও মিত্রবাহিনীর রাজপুত ব্যাটালিয়নের প্রধান মেজর দলবীর সিংহের নেতৃত্বে আফিল গেট থেকে শুরু করে ফুলবাড়ি গেট, বিলডাকাতিয়ার শলুয়া, রংপুর, আড়ংঘাটা এবং ভৈরব নদের ওপারে ধুলগ্রাম, সিদ্দিপাশা, বারাকপুর, লাখোহাটি পর্যন্ত চারদিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর শুরু হয় আক্রমণ। পাশাপাশি আকাশপথে আক্রমণও চলে।

১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে বাইসাইকেল নিয়ে যুদ্ধের এলাকা ঘুরতে বের হয়েছিলেন আনোয়ারুল কাদির। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত মরদেহ পড়ে ছিল, যা চোখে দেখা যায় না। পুরো এলাকা ছিল লন্ডভন্ড। রাস্তায় একটু পরপর ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে রাখার কারণে মিত্রবাহিনীর ট্যাংকগুলো রাস্তার পাশের নালাসদৃশ নিচু জায়গা দিয়ে অগ্রসর হয়েছিল, সেই দাগ তখনো স্পষ্ট ছিল। আত্মসমর্পণের সময় শিরোমণির দিক থেকে খুলনার দিকে আসছিলেন মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। আর পাকিস্তানি সেনারা ওই সময় শিরোমণির দিকে যাচ্ছিল। শীতের ওই সময় এলাকাবাসী মিত্রবাহিনীর দিকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। আর পাকিস্তানি সেনাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ