রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময় দুই মাস বাড়ল
Published: 20th, April 2025 GMT
নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ২২ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রবিবার (২০ এপ্রিল) আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘‘২২ জুন পর্যন্ত দলগুলোর আবেদন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’’
এর আগে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সময় বাড়ানোসহ একগুচ্ছ দাবি জানায়।
আরো পড়ুন:
আইসিসি ঘোষিত সেরা একাদশে বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার
ওয়ানডেতে দুই বলের খেলার শর্ত পরিবর্তনের কথা ভাবছে আইসিসি
এদিকে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ জানান, ২০টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। সাতটি দল ইসি নির্ধারিত ফরমে এবং তিনটি দল দলীয় প্যাডে আবেদন করেছে।
জানা গেছে, নতুন বাংলা, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট, আমজনতার দল, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, লেবার পার্টি বাংলাদেশ, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ গ্রিন ইনভারমেন্ট পার্টি, আমার দেশ আমার অধিকার পার্টি (এনডিএপি), বাংলাদেশ গণ মুক্তি পার্টি, বাংলাদেশ একুশে পার্টি, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি (ডিসিপি), বাংলাদেশ সমতা পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ আ-আমজনতা পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল (বিসিপি), জনতা কংগ্রেস পার্টি, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টি (বিএমএলপি), বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি ও বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা) নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।