ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সবার শিশির ভেজা ঘাসে যিনি পা রাখেন, তিনি শুধু একজন কর্মচারী নন। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলার অংশের এক অনন্য চরিত্র। তিনি সবার প্রিয় আনসার আলী। শিক্ষার্থীদের কাছে ‘আনসার ভাই’ নামে পরিচিত।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে খেলার মাঠকে ঘিরে নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন। তৈরি করেছেন একটি দৃষ্টান্ত, গড়ে তুলেছেন ভালোবাসার এক নিগূঢ় বন্ধন।

১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আসেন তিনি, একটি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার জন্য। এরপর ১৯৯৭ সালের মে মাসে তিনি স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হিসেবে। শুরু হয় নতুন অধ্যায়, মাঠই হয়ে ওঠে তার দায়িত্ব ও আত্ম-পরিচয়ের অংশ।

আরো পড়ুন:

খুবি শিক্ষকের ওপর হামলা: অভিযুক্ত ছাত্রের সনদ স্থগিত

খুবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে রমিন-মিরাজ

আনসার ভাইয়ের প্রতিদিনের রুটিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের অনেক আগেই। মাঠ পরিষ্কার, ঘাস কাটা, দাগ টানা থেকে শুরু করে খেলার সময় মাঠের সার্বিক পরিচর্যা তার একার হাতেই। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস যে খেলারই আয়োজন হোক না কেন, তার উপস্থিতি যেন অনিবার্য। তবে এই উপস্থিতি কখনও সাড়ম্বরে নয়, বরং নীরবে, নিষ্ঠায় ভরা।

তিন দশকের কর্মজীবনে অসংখ্য আয়োজনের সাক্ষী তিনি। তবে ব্যতিক্রম ছিল ২০১৮ সাল, যখন এক দুর্ঘটনার কারণে তিনি মাঠের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সেই সময় ঠিক একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট সেমিফাইনালের আগেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু যা ঘটেছিল, তা আনসার ভাইয়ের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন অধ্যায় হয়ে উঠেছিল।

তিনি বলেন, “মাঠই আমার পরিচয়, এই জায়গাটা আমার গর্ব। এটা শুধু দায়িত্ব নয়, ভালোবাসা। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমাকে সবাই দেখতে গেছিল। ডাক্তার অবাক হয়ে বলেছিল, ‘এতো লোক এসেছে, এই রোগী কি কোনো ভিআইপি?”

ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, একজন কর্মচারীও হতে পারেন প্রিয়, সম্মানিত এবং প্রয়োজনীয়। এমন অনেক শিক্ষক আছেন, যারা একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, এখন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তাদের সঙ্গেও আনসার ভাইয়ের সম্পর্ক রয়ে গেছে আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ।

আনসার ভাই অত্যন্ত গর্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল ও ক্রিকেট দল নিয়ে। যদিও দল কখনো জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। তবুও তার চোখে তারা সবসময়ই বিজয়ী।

চাকরির শেষ হতে আর ১ বছর ১১ মাস বাকি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতাও বেড়েছে। বিশেষ করে দুইবার দুর্ঘটনার পর শরীর আগের মতো সাড়া দেয় না তার। তবুও প্রতিদিন মাঠে দায়িত্ব নয়, ভালোবাসার টানেই আসেন আনসার।

আনসার আলী গর্বের সঙ্গে বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাকে এখনো বড় ভাইয়ের মতো দেখে। তারা এতদিনে কখনো মারামারিতে জড়ায়নি। ভদ্রভাবে খেলেছে, এটাই তো বড় জয়।”

তিনি বলেন, “এই মাঠ থেকেই আমার রুজি আসে। রুজির মালিক আল্লাহ, এই মাঠ তার উসিলা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, মাঠের উন্নয়নের জন্য যেন একটি রোলার দেওয়া হয়।”

বেতন নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি হেসে বলেন, “আমার পরিবার আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। যতটুকু আয় হয়, তাতেই ওরা খুশি। ভালোবাসা আর সম্মানই আমাদের মূলধন।”

কর্মজীবনের অন্তিম সময়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া এ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রেখে যেতে চান একটাই অনুরোধ, “আমি বড় ভাই ছিলাম, তেমনিই যেন থেকে যেতে পারি। এই ভালোবাসাটুকু যেন সবাই বাঁচিয়ে রাখে।”

আনসার ভাই কেবল একজন মাঠকর্মী নন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক নীরব সাক্ষী এবং এক অমূল্য অংশ। তার কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষের আসল পরিচয় তার পদবিতে নয়; কাজে।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আনস র ভ ই

এছাড়াও পড়ুন:

অস্কার পাচ্ছেন টম ক্রুজ

সম্মানসূচক অস্কার পাচ্ছেন অভিনেতা ও প্রযোজক টম ক্রুজ; কোরিওগ্রাফার ও অভিনেত্রী ডেবি অ্যালেন এবং প্রোডাকশন ডিজাইনার উইন থমাস। এ ছাড়া সংগীতশিল্পী ও মানবাধিকারকর্মী ডলি পার্টন পাচ্ছেন জিন হারশল্ট মানবিকতা পুরস্কার। ১৬তম গভর্নরস অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ১৬ নভেম্বর, লস অ্যাঞ্জেলেসে।

‘চলতি বছরের গভর্নরস অ্যাওয়ার্ডসে চার কিংবদন্তি শিল্পীকে সম্মান জানানো হবে, চলচ্চিত্রে যাঁরা গভীর ছাপ রেখেছেন’—এক বিবৃতিতে বলেন একাডেমি প্রেসিডেন্ট জ্যানেট ইয়াং। তিনি আরও বলেন, ‘ডেবি অ্যালেন এমন একজন কোরিওগ্রাফার ও অভিনেত্রী, যাঁর কাজ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। টম ক্রুজ আমাদের সিনেমাশিল্প, প্রেক্ষাগৃহ এবং স্টান্টশিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছেন। মানবিক কাজে ডলি পার্টনের নিবেদন তাঁকে জিন হারশল্ট মানবিকতা পুরস্কারের যোগ্য করে তুলেছে। আর উইন থমাস তাঁর শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কারিগরি দক্ষতার মাধ্যমে বহু সিনেমাকে স্মরণীয় করে তুলেছেন।’

টম ক্রুজ: প্রেক্ষাগৃহের জাদুকর
টম ক্রুজ হলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল তারকাদের একজন। প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার গুরুত্ব নিয়ে বরাবরই তিনি সরব। কোভিডের সময় প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফেরাতে তাঁর টপ গান: ম্যাভেরিক বড় ভূমিকা রাখে; প্রযোজক হিসেবে সিনেমাটির জন্য সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার মনোনয়নও পান তিনি।

সম্মানসূচক অস্কার পাচ্ছেন এই তারকারা। ছবি: একাডেমির ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • করোনায় যশোরে আরেকজনের মৃত্যু, সারাদেশে ২৮ জন শনাক্ত
  • সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম কারাগারে 
  • নগদের কোটি টাকা লুটের ঘটনায় সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্য জড়িত
  • চাকরিচ্যুত পুলিশ ও সেনা সদস্যের নেতৃত্বে উত্তরায় লুট হয় কোটি টাকা
  • যশোরে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, কিটের ঘাটতিতে পরীক্ষা বন্ধ
  • হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়
  • বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিনা শুল্কে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ-টিভিসহ ১৯টি পণ্য আনতে পারবেন
  • ইরানিরা নিজের বাড়ির ছবি শেয়ার করছেন
  • ডি ব্রুইনা চলে যাওয়ায় ম্যানচেস্টার সিটির নতুন অধিনায়ক কে হলেন
  • অস্কার পাচ্ছেন টম ক্রুজ