বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্মের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডনীয় হবেন—নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সন্নিবেশিত এমন বিধান প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

গত ২৫ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। অধ্যাদেশের ৫ ধারায় বলা হয়, ওই আইনের ধারা ৯ক–এর পর নতুন ধারা ৯খ সন্নিবেশিত হবে। আর ৯খ ধারায় বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম করলে দণ্ডের বিষয়ে বলা রয়েছে।

অধ্যাদেশের ৫ ধারার মাধ্যমে সন্নিবেশিত ৯খ ধারার বৈধতা নিয়ে ‘এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন’–এর পক্ষে সংগঠনের সেক্রেটারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.

রাশিদুল হাসান আবেদনকারী হয়ে গত ৭ এপ্রিল রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।

পরে আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাদেশের ৫ ধারার মাধ্যমে সন্নিবেশিত ৯খ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে হবে।

ওই বিধানের ভাষ্য, যদি কোনো ব্যক্তি দৈহিক বল প্রয়োগ ছাড়া বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম করেন এবং যদি ওই ঘটনার সময় ওই ব্যক্তির সঙ্গে ওই নারীর আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

আরও পড়ুনধর্ষণ মামলার জট কমাতে ‘বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম’ আলাদা ধারা করা হয়েছে২৮ মার্চ ২০২৫

রিট আবেদনকারী পক্ষের ভাষ্য, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে ৯খ ধারায় বলা হয়েছে, যা মূল আইনে ছিল না। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পর, তা না রাখলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাত বছরের দণ্ড হবে বলা হয়েছে। শুধু ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি’ না রাখার কারণে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে তা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নারীর সম্মতির অধিকার লঙ্ঘন করে। প্রতিশ্রুতি না রাখার কারণে শুধু লিঙ্গের ভিত্তিতে একজনকে অপরাধী এবং অপরজনকে অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুসারে আইনের চোখে সবাই সমান। যখন ঘটনা ঘটছে, তখন তা অপরাধ নয়, পরবর্তী সময়ে প্রতিশ্রুতি না রাখলে তা অপরাধ হিসেবে দেখা হয়েছে বিধানটিতে। এমন অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নকর ম অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থীর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ

সাভারের আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থী সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল—এই তিন বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে পারবেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া ভূগোল ও পরিসংখ্যান পরীক্ষা আবারও নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৭ ও ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সমাজকর্ম বিষয়ে ১৮৭ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন। ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ২৬ জুন শুরু হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৮৭ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল পরীক্ষার আয়োজনে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাকির হোসেন মৃধা গত সপ্তাহে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আদেশের পর আইনজীবী মো. বাকির হোসেন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৮৭ শিক্ষার্থী কলেজটির ভুলের কারণে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল পরীক্ষা দিতে পারছিলেন না। কলেজটির এই বিষয়গুলোর অনুমতি ছিল না। যে কারণে নিজে আবেদনকারী হয়ে জনস্বার্থে রিটটি করেন। এই ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর ওই তিন বিষয়ের পরীক্ষা নিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন ১৮৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষাগুলো দিতে পারবেন।

সাভারের আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। গত ১৪ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানায়, আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পাঠদানের কোনো অনুমোদন না থাকায় পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৮৬ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন এবং ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে কলেজের অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিন্ন তিনটি বিষয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পেয়েছে এবং তাতে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পরীক্ষাদানের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও বোর্ডের সঙ্গে তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।

আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৮৭ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া ভূগোল ও পরিসংখ্যান পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৭ ও ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সমাজকর্ম বিষয়ে ১৮৭ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে অনুমতি দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের গত ১৪ জুলাইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আবশ্যিক পাঁচটি পত্রের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে কলেজ কর্তৃপক্ষ (আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়) বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮৬ জন পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করে। ইতিমধ্যে পূর্বনির্ধারিতসংখ্যক প্রশ্নপত্র সব কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়ায় বোর্ডের পক্ষে কিছু করার ছিল না। আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন আরও ৬টি কলেজে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ২২। অন্যদিকে আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮৬ জন। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ শতভাগ দায়ী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুদকের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক কারাগারে
  • শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের একই আইনজীবী নিয়ে বার্গম্যানের প্রশ্ন
  • আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থীর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ
  • নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা ও বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ
  • কুমিল্লার গোমতী নদীর জায়গায় থাকা ৫০৮ অবৈধ দখল-স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ
  • দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না