রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সমন্বিত পদোন্নতি নীতিমালা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে—সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)। এসব ব্যাংকের জন্য অভিন্ন নীতিমালাটি তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংকগুলোর অফিসার বা সমমানের পদ থেকে শুরু করে সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও উপমহাব্যবস্থাপকদের (ডিজিএম) জন্য প্রযোজ্য হবে প্রস্তাবিত এই নীতিমালা।

জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এরই মধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। এই বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে আজ সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে এ নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) অংশ নেবেন।

প্রস্তাবিত নীতিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়নের সুযোগ রাখা হয়নি। এমনকি তাঁদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে চাকরির বয়সকালও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে জ্যেষ্ঠদের ডিঙিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের বেশি পদোন্নতি পাওয়া সম্ভাবনা থাকবে। এতে পুরো ব্যাংকের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সবার মতামত নেওয়ার জন্যই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। তবে আজকের বৈঠকেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে না।

এদিকে পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা বাতিল হয়ে যাবে। যদিও বাতিল হওয়া নীতিমালার অধীনে যেসব ব্যবস্থা চলমান রয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি হবে বাতিল হওয়া নীতিমালার বিধান অনুযায়ীই। নতুন নীতিমালার কিছু বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে, তার ব্যাখ্যা দেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

পদোন্নতির জন্য মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮ নম্বর থাকবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৪। বাকি ৯২ নম্বরের মধ্যে পদোন্নতিপ্রত্যাশী প্রার্থীকে কমপক্ষে ৭৫ পেতে হবে। উভয় নম্বর যোগ করে তৈরি করা হবে মেধাতালিকা। দেশের বাইরে থাকা কর্মীদের ভার্চ্যুয়াল বা সশরীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

নীতিমালা প্রণয়নে জড়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি বলেন, ‘নীতিমালার একটা খসড়া দাঁড় করানো হয়েছে। কারও প্রতি বৈষম্য করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। দেখা যাক, বৈঠক থেকে কী পরামর্শ উঠে আসে। আগে পরামর্শ ভালোভাবে না নেওয়ার কারণে কিছু নীতিমালা বাস্তবায়ন করা যায়নি।’

পদোন্নতিতে বাধা যেখানে

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, পদোন্নতি বিবেচনা করা হবে চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। তবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কোনো কর্মচারী তাঁর অধিকার হিসেবে পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করতে পারবেন না। কোনো কর্মচারীর ফিডার পদে সর্বশেষ তিন বছরের যেকোনো বছরের চাকরি সন্তোষজনক না হলে, অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে পরের পদের জন্য বিবেচিত হবেন না।

এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে, বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ও দণ্ডকাল বহাল থাকলে এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে বা দণ্ড পেলে তাঁকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে না।

লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের এক বছর পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য কেউ বিবেচিত হবেন না। গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে তা হবে দুই বছর। এ ছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে বা কেউ গ্রেপ্তার হলে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত পদোন্নতি হবে না। তবে পদোন্নতির প্যানেলে নাম ওঠার পর কেউ অভিযুক্ত হলে এবং শাস্তি ছাড়া অব্যাহতি পেলে তিনি শূন্য পদ সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।

নম্বর বিভাজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মধ্যে এসিআরের পাঁচ বছরের গড় নম্বর ৪৫। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৫, ফিডার পদে চাকরিকাল ১৪, ফিডার পদে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ৪, ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা (ব্যাংকিং ডিপ্লোমা) ১০, আইসিএবি বা আইসিএমএবি থেকে পাওয়া পেশাগত যোগ্যতা ১, দুর্গম এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে ফিডার পদে কাজের অর্জন ২ এবং সাক্ষাৎকার ৮ নম্বর।

ব্যাংকাররা বলছেন, বিদ্যমান নীতিমালায় স্নাতকোত্তর পাসের জন্য নম্বর দেওয়া আছে ১৪। কোন শ্রেণিতে পাস করার জন্য কত নম্বর, তা উল্লেখ করা নেই। প্রস্তাবিত নীতিমালায় ১৫ নম্বর বরাদ্দ করে পাসের শ্রেণিওয়ারি আলাদা নম্বরের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণির জন্য ৪, দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য ৩ ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য ২ নম্বর রাখা হয়েছে। স্নাতক (ডিগ্রি) বা সমমান, উচ্চমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও এভাবে নম্বর ভাগ করা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকাররা মনে করেন, যাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে এসেছেন তাঁদের তুলনায় সিজিপিএ পদ্ধতিতে পাস করে আসা ব্যাংকাররা চার ধাপের ফলাফলে অন্তত ৪ নম্বরে এগিয়ে থাকবেন, যা একটি বৈষম্য। এ ছাড়া শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা ব্যাংকারদের জন্য এত দিন ১ নম্বর বরাদ্দ ছিল। এটি বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২। শাখার সংখ্যা সীমিত থাকার কারণে শাখা ব্যবস্থাপক হতে চাইলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এখানেও বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।

নতুন নীতিমালার বিষয়ে কথা বলার জন্য দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রস ত ব ফ ড র পদ অফ স র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টিতে নেতাদের বিরোধ, ডিগবাজি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনে ৫ আগস্টের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) চাপে পড়ায় পূর্ববর্তী ভূমিকার দায় এড়াতে বিরোধে জড়িয়েছেন দলটির নেতারা। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ আমলের তিন বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হলেও পরিবর্তিত রাজনীতিতে ‘টিকতে’ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সরাতে চাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর তকমামুক্ত হতে জাপায় নতুন নেতৃত্বের চেষ্টা করছেন তারা। এই তৎপরতায় দলের বাইরের ‘ইন্ধন’ও রয়েছে। 

জাপা সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। দলটির ছয় জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের নেতৃত্বে থাকলে জাপা টিকতে পারবে না। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের বিরোধিতার কারণে সরকারের বৈঠক এবং সংস্কারে ডাক না পাওয়া জি এম কাদের যেভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলছেন, তাতে জাপার বিপদ বাড়ছে। তাই তাঁকে ঝেড়ে ফেলতে ডিগবাজি খেয়ে তৎপর হয়েছেন জাপার আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা। 

জি এম কাদের ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করলেও জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, ওই দিন সম্মেলন হবেই। কাদের না এলে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সম্মেলন হবে। নতুন নেতৃত্বও নির্বাচিত হবে সেদিন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের সম্মেলন করা সম্ভব নয়– কারণ দেখিয়ে ১৭ জুন জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান।

যদিও তাঁর বিরোধীদের ভাষ্য, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র না পেলে প্রেসিডিয়ামের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সম্মেলন হবে। তবে এখনও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সম্মেলনের জন্য আগামীকাল রোববারের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যানবিরোধীরা।

এখনও জি এম কাদেরের অনুগত প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। তিনি অনুপস্থিতি থাকলে সেই সম্মেলন অবৈধ হবে। 

জাপা নেতারা জানান, জি এম কাদেরকে সরাতে সামনে আনা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা। এ ধারার ফলে জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যে কোনো পদ দিতে পারেন। এ জন্য তাঁর জবাবদিহিতা নেই।

১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাপা প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই এই ধারা রয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। এর ক্ষমতাবলে এরশাদের পর জি এম কাদেরও অনেক নেতাকে পদ দিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন। সম্মেলনে নির্বাচিত মহাসচিবকে সরিয়েছেন। 

এ ধারা বিলোপে একাট্টা হয়েছেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের বড় অংশ। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগে বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির এমপি ছিলেন।

জাপার চেয়ারম্যান হতে চাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মহাসচিব হতে চাচ্ছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। ২০১৪ সালের নির্বাচন এরশাদ ও জি এম কাদের বর্জন করলেও রওশন এরশাদ ও আনিসুলের নেতৃত্বে জাপা অংশ নেয়। জাপা বিরোধী দলের আসনে বসলেও হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন আনিসুল ইসলাম। ২০১৮ সালেও তিনি এমপি হন। গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছিলেন। 

রুহুল আমিন হাওলাদার ২০১৪ এবং ২০২৪ সালে এমপি হয়েছেন। ২০১৩ সালে ছিলেন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী। মুজিবুল হক চুন্নু তিন নির্বাচনেই এমপি হয়েছেন। ২০১৪ সালে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। জি এম কাদেরের সঙ্গে বিরোধে রওশনের নেতৃত্বে পৃথক জাতীয় পার্টি গড়া কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি হন। তারাও জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন।

বিরোধী দলের আসনে বসেও প্রায় সব ইস্যুতে সরকারের সুরে কথা বলে আওয়ামী লীগের আমলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাপার নেতাদের মধ্যে জি এম কাদের বাদে অন্যরা ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার সমালোচনা করছেন।

কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন জি এম কাদের। তবে তিনি একাধিকবার বলেছেন, যারা শেখ হাসিনার সময়ে সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে জাপাকে যন্ত্রণা দিয়েছে, তারাও আবার তৎপর হয়েছে। তাদের লক্ষ্য নতুন ক্ষমতাধরদের খুশি করে আগামী নির্বাচনে কিছু একটা পাওয়া।

যদিও এসব বক্তব্যকে নাকচ করেছেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চাওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল। তিনি বলেছেন, জি এম কাদের নিজে শেখ হাসিনার মন্ত্রী হয়েছেন। সরকারকে ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় উপনেতা, নেতা হয়েছেন। তাঁর মুখে এসব কথা মানায় না।

চেয়ারম্যানকে ভারতের দোসর আখ্যা দিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, জি এম কাদের একসময় বলেছেন, ভারত অনুমতি না দেওয়ায় তিনি সব কথা বলবেন না। এখন তিনি যেসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থনে, সেগুলো কি ভারতের অনুমোদনে বলছেন? তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অব্যবহার হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে।

এখনও জি এম কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানালেও মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেন, সম্মেলন ২৮ জুন হবে কিনা জানি না। তবে প্রেসিডিয়ামের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওইদিন চীন মৈত্রীতে বা কাকরাইলে সম্মেলন হবে। চীন মৈত্রী না পাওয়ায় কাকরাইলে সম্মেলন করা যেত। কিংবা প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন নিয়ে সম্মেলন স্থগিত করা যেত। চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে সম্মেলন স্থগিত করায় কাজটি সুন্দর হয়নি। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার একটি প্যানেল দিচ্ছেন। জি এম কাদেরের প্যানেল থেকে আমি মহাসচিব প্রার্থী হতে চাই। জি এম কাদের যদি সম্মেলন না করেন, তখন কোথায় যাব?

২০(ক) ধারা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে চুন্নু বলেন, জি এম কাদের গণতন্ত্রের কথা সবচেয়ে বেশি বলেন। তিনি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ২০(ক) ধারাও রাখছেন। এ ধারা বলে তিনি যে কোনো সময়ে মহাসচিবকেও সরাতে পারেন। এত অনিশ্চয়তা নিয়ে রাজনীতি হয় না। তাই ধারাটি শিথিল করে প্রেসিডিয়ামের অনুমোদনে বহিষ্কার এবং পদ দেওয়ার নিয়ম করতে বলেছি।

জি এম কাদেরবিরোধীদের সূত্রের খবর, আনিসুল চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন মহাসচিব হবেন। চুন্নুকে নির্বাহী চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হবেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি এককালে এরশাদকে ছেড়ে জাপা ভেঙে বিএনপির জোটে গিয়েছিলেন। জাপা ভেঙে একই নামে দল করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দলে ফিরিয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনিও শেখ হাসিনার মন্ত্রী ছিলেন। 

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিষয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, তাঁকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। যারা অতীতে জাতীয় পার্টি থেকে চলে গেছেন, পৃথক দল করেছেন– তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। সৌজন্যতার অংশ হিসেবে বিএনপি এবং অন্য দলকে আমন্ত্রণ করা হবে।
সম্মেলনের সঙ্গে সরকার বা সরকারি সংস্থার যোগসূত্র নেই বলেও দাবি করেন আনিসুল ইসলাম। তবে জি এম কাদেরের অনুসারী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যারা সম্মেলন চান তাদের সবাই ‘ডিপ স্টেটের’ নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। তারা নতুন করে কিছু করছেন মানেই, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থনে করছেন। কিংবা ৫ আগস্ট-পরবর্তী মামলা থেকে বাঁচতে করছেন। আবার সবাই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসা রক্ষার স্বার্থেও তৎপর হতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ