কখন হাত ধোয়া প্রয়োজন এবং কীভাবে ধুলে হাত পরিষ্কার হবে, এ ব্যাপারে এখনো জানেন না অনেক আমেরিকান নাগরিক, এক জরিপের বরাতে জানিয়েছে সিএনএন। 
জরিপটিতে দেখা গেছে, কাঁচাবাজার করার পর, রেস্টুরেন্ট বা কফি শপে খাওয়াদাওয়ার সময়ে, এবং ডাক্তার বা হাসপাতাল থেকে ফিরে যে হাত ধোয়া দরকার, এটা প্রায় অর্ধেক আমেরিকানই জানেন না বা মানেন না।  

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইনফেকশাস ডিজিজেজ এর এই জরিপে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর পর মানুষ আগের তুলনায় হাত ধোয়ার প্রতি একটু বেশি মনোযোগী হয়েছেন। 

বিশ্ব হাত স্বাস্থ্যবিধি দিবস উপলক্ষ্যে ৫ মে এই জরিপটি প্রকাশ হয়। গত ডিসেম্বর এবং মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৩,৬০০ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের মাঝে চালানো এই জরিপে দেখা গেছে বয়স এবং লিঙ্গভেদে মানুষের হাত ধোয়ার অভ্যাসে রয়েছে পার্থক্য। 

হাত জীবাণুমুক্ত করতে হলে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে সাবান ও পানি দিয়ে- এমনটা মেনে চলেন জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ আমেরিকান। এদিকে ১৩ শতাংশ মনে করেন এর থেকে কম সময় ধরে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। আবার ২৪ শতাংশ মনে করেন, ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে হাত ধোয়া ভালো। 

শৌচাগার ব্যবহারের পর, রান্নাঘরের কাজের পর, এবং মানব বা পশু বর্জ্য ব্যবহারের পর হাত ধুতে হবে, এমনটা মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু হাঁচি বা কাশির পর যে হাত ধুতে হয়, এটা কিন্তু বেশিরভাগ আমেরিকানই মনে করেন না। এ কারণে বায়ুবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দরকারের সময়ে অনেকেই হাত ধুতে ভুলে যান। আবার আলসেমি করেও হাত না ধুয়েই চলে যান অনেকে। এমনকি হাত ধোয়ার পর হাত শুকাতে দেরি হবে তা ভেবেও অনেকে হাত ধোয়া বাদ দেন। 

জরিপে দেখা গেছে, হাত ধোয়ার ব্যাপারে নারীরা বেশি মনোযোগী। পুরুষরা হাত ধুতে অবহেলা করেন, হাত ধুতে দরকারের চেয়ে কম সময় ব্যয় করেন। 

বয়সের দিক দিয়েও হাত ধোয়ার অভ্যাসে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মাঝে শৌচাগার ব্যবহার বা খাওয়ার পর হাত ধোয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।রিপোর্টে বলা হয়, অনেক বছর ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস থাকার কারণে বা বার্ধক্যে রোগের ভয় থেকে হাত ধোয়ার প্রবণতা তাদের মাঝে বেশি দেখা যায়। 

অবাক ব্যপার হলো, ঋতুর সাথেও হাত ধোয়ার সম্পর্ক আছে। শীত বা বসন্তে আমেরিকানরা বেশি বেশি হাত ধোয়, কারণ সে সময়ে তাদের সর্দিকাশি বেশি হয়ে থাকে। 

রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায় হাত ময়লা থাকার কারণে। মাত্র ২০ সেকেন্ড হাত ধুলেই করোনাভাইরাসের মত রোগ এড়ানো সম্ভয় হয়। এছাড়া এমোরি ইউনিভার্সিটির রলিন্স স্কুল অব পাব্লিক হেলথের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ড ভিনসেন্ট হিল বলেন, হাত ধোয়ার অভ্যাসে প্রতি তিন জনের এক জনে ডায়ারিয়া হওয়া রোধ করা যায়, আর প্রতি পাঁচ জনের এক জনে শ্বাসযন্ত্রের রোগ রোধ করা যায়। 

নেহায়েতই হাত ধুতে না পারলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা হাত ধোয়ার মত কার্যকর নয় এটাও মনে রাখতে হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আম র ক ন ব যবহ র র র পর

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এত দিন ধরে ইরানের অর্থনীতি কীভাবে টিকে আছে

ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে বিশ্ববাসীর কৌতূহল, ইরান ঠিক কীভাবে এ রকম জবাব দিচ্ছে? ইরানের ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য বেশি হচ্ছে, কিন্তু যেভাবে ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম ভেদ করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে, তাতে ইরানের সক্ষমতা মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিকভাবেই–বা তারা কীভাবে এই যুদ্ধের সংস্থান করছে?

বিষয়টি হলো, ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর থেকেই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। বিশেষত তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে ইরানের বিপ্লবীদের হামলার পর পরিস্থিতির ঘোরতর অবনতি হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে দেশটির ওপর।

মাঝে বারাক ওবামা এসব নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করলেও ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম জমানায় আবারও নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। ফলে পশ্চিমা জনমনে ধারণা ছিল, ইরান হয়তো বেশি সময় পাল্টা আক্রমণের ধার বজায় রাখতে পারবে না। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে এখন পর্যন্ত ইরান পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছে। খবর আল-জাজিরা ও বিবিসির।

ইরানের অর্থনীতির ভিত যতটা না নীতিনির্ভর, তার চেয়ে বেশি নির্ভরশীল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। বিশ্বে সবচেয়ে বড় গ্যাস ও তেলের মজুদদারদের মধ্যে অন্যতম দেশটি হচ্ছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বলছে, ২০২১ সালেও গ্যাস মজুতের দিক দিয়ে ইরান ছিল দ্বিতীয় আর তেলে তৃতীয় বৃহত্তম।

এই বিপুল সম্পদের একাংশের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ ইরানের হাতে। এই দেশটি ঘেঁষেই রয়েছে হরমুজ প্রণালি—বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ। এই জলপথ দিয়েই প্রতিদিন বিশ্বে ব্যবহৃত তেলের ২১ শতাংশ সরবরাহ হয়।

তেল ও গ্যাস খাতে ইরানের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও কিছু সময় ইরান থেকে তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনেছে। এক দশক নিষেধাজ্ঞার পর ২০২০ সাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এমন কিছু ক্রয় তথ্য আমেরিকান কর্তৃপক্ষই প্রকাশ করেছে।

শুধু জ্বালানি নয়, কৃষিপণ্যেও শক্তিশালী ইরান। ইরান শুধু জ্বালানি বা খনিজ রপ্তানি করেই নয়, খাদ্যপণ্য ও কৃষিপণ্যের বাজারেও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়। দেশটি গম, যব, আপেল, কমলা, আখ, আলু, সবজি, মুরগির মাংসসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উল্লেখযোগ্য রপ্তানিকারক।

এর পাশাপাশি সিমেন্ট, সার, রাসায়নিক পদার্থ, নির্মাণসামগ্রী, লৌহ-ধাতব পণ্য, টেক্সটাইল ও অস্ত্র রপ্তানিতেও আছে ইরানের সক্রিয় উপস্থিতি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এসব খাতে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে—বলছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। বাংলাদেশের বাজারেও ইরানি আতর, রত্নপাথর কিংবা বিখ্যাত জাফরান নিয়মিতভাবে পাওয়া যায়।

পারস্য সাম্রাজ্যের দীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাদের পণ্যের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ও ওয়াশিংটনের অনেক কার্পেটের দোকানে ইরানের কার্পেট বিক্রি হয়। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এসব পণ্য সংস্কৃতির প্রতিনিধি হয়ে দূর দেশের বাজারে পৌঁছে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এ ছাড়া বিকল্প পথে বাঁচার চেষ্টাও করছে ইরান। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময় প্রথা, হুন্ডি বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অঘোষিত বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়ার মতো দেশ তাদের আঞ্চলিক বাণিজ্যবন্ধু। এই পদ্ধতিগুলো আইনিভাবে স্বীকৃত না হলেও নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা ইরানের জন্য এগুলো বিকল্প আর্থিক রসদ হিসেবে কার্যকর হয়ে উঠেছে।

ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানও তাদের শক্তির অন্যতম উৎস। দেশটি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে তারা চাইলেই পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সদর সিটিতে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

সম্পর্কিত নিবন্ধ