কখন, কীভাবে হাত ধুতে হবে, জানেন না আমেরিকানরা!
Published: 5th, May 2025 GMT
কখন হাত ধোয়া প্রয়োজন এবং কীভাবে ধুলে হাত পরিষ্কার হবে, এ ব্যাপারে এখনো জানেন না অনেক আমেরিকান নাগরিক, এক জরিপের বরাতে জানিয়েছে সিএনএন।
জরিপটিতে দেখা গেছে, কাঁচাবাজার করার পর, রেস্টুরেন্ট বা কফি শপে খাওয়াদাওয়ার সময়ে, এবং ডাক্তার বা হাসপাতাল থেকে ফিরে যে হাত ধোয়া দরকার, এটা প্রায় অর্ধেক আমেরিকানই জানেন না বা মানেন না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইনফেকশাস ডিজিজেজ এর এই জরিপে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর পর মানুষ আগের তুলনায় হাত ধোয়ার প্রতি একটু বেশি মনোযোগী হয়েছেন।
বিশ্ব হাত স্বাস্থ্যবিধি দিবস উপলক্ষ্যে ৫ মে এই জরিপটি প্রকাশ হয়। গত ডিসেম্বর এবং মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৩,৬০০ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের মাঝে চালানো এই জরিপে দেখা গেছে বয়স এবং লিঙ্গভেদে মানুষের হাত ধোয়ার অভ্যাসে রয়েছে পার্থক্য।
হাত জীবাণুমুক্ত করতে হলে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে সাবান ও পানি দিয়ে- এমনটা মেনে চলেন জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ আমেরিকান। এদিকে ১৩ শতাংশ মনে করেন এর থেকে কম সময় ধরে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। আবার ২৪ শতাংশ মনে করেন, ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে হাত ধোয়া ভালো।
শৌচাগার ব্যবহারের পর, রান্নাঘরের কাজের পর, এবং মানব বা পশু বর্জ্য ব্যবহারের পর হাত ধুতে হবে, এমনটা মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু হাঁচি বা কাশির পর যে হাত ধুতে হয়, এটা কিন্তু বেশিরভাগ আমেরিকানই মনে করেন না। এ কারণে বায়ুবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দরকারের সময়ে অনেকেই হাত ধুতে ভুলে যান। আবার আলসেমি করেও হাত না ধুয়েই চলে যান অনেকে। এমনকি হাত ধোয়ার পর হাত শুকাতে দেরি হবে তা ভেবেও অনেকে হাত ধোয়া বাদ দেন।
জরিপে দেখা গেছে, হাত ধোয়ার ব্যাপারে নারীরা বেশি মনোযোগী। পুরুষরা হাত ধুতে অবহেলা করেন, হাত ধুতে দরকারের চেয়ে কম সময় ব্যয় করেন।
বয়সের দিক দিয়েও হাত ধোয়ার অভ্যাসে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মাঝে শৌচাগার ব্যবহার বা খাওয়ার পর হাত ধোয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।রিপোর্টে বলা হয়, অনেক বছর ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস থাকার কারণে বা বার্ধক্যে রোগের ভয় থেকে হাত ধোয়ার প্রবণতা তাদের মাঝে বেশি দেখা যায়।
অবাক ব্যপার হলো, ঋতুর সাথেও হাত ধোয়ার সম্পর্ক আছে। শীত বা বসন্তে আমেরিকানরা বেশি বেশি হাত ধোয়, কারণ সে সময়ে তাদের সর্দিকাশি বেশি হয়ে থাকে।
রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায় হাত ময়লা থাকার কারণে। মাত্র ২০ সেকেন্ড হাত ধুলেই করোনাভাইরাসের মত রোগ এড়ানো সম্ভয় হয়। এছাড়া এমোরি ইউনিভার্সিটির রলিন্স স্কুল অব পাব্লিক হেলথের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ড ভিনসেন্ট হিল বলেন, হাত ধোয়ার অভ্যাসে প্রতি তিন জনের এক জনে ডায়ারিয়া হওয়া রোধ করা যায়, আর প্রতি পাঁচ জনের এক জনে শ্বাসযন্ত্রের রোগ রোধ করা যায়।
নেহায়েতই হাত ধুতে না পারলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা হাত ধোয়ার মত কার্যকর নয় এটাও মনে রাখতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আম র ক ন ব যবহ র র র পর
এছাড়াও পড়ুন:
লিপস্টিক ইফেক্ট: মন্দায় প্রসাধনীর চাহিদা কেন বাড়ে?
চলতি অর্থবছরে আমদানি করা প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজের ওপর কাস্টমস শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে এবং তা কার্যকরের পথে। সরকারি নীতিনির্ধারকেরা হয়তো ভাবছেন এতে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বাজারপ্রবণতা বলছে, বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও প্রসাধনসামগ্রীর চাহিদা কমে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়ে। এ ঘটনাকে অর্থনীতিবিদেরা ‘লিপস্টিক ইফেক্ট’ নামে অভিহিত করেছেন।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব, যা ব্যাখ্যা করে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় মানুষ কেন কম দামি বিলাসবহুল পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
২০০১ সালে এস্তে লডারের চেয়ারম্যান লিওনার্ড লডার ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তিনি লক্ষ করেন, মন্দার সময়েও লিপস্টিকের বিক্রি বেড়েছে। জেপি মরগান প্রাইভেট ব্যাংকের আচরণগত বিজ্ঞানের প্রধান জেফ ক্রিসলার বলেন, ‘মানুষ ১০ ডলারের ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি সহ্য করতে পারে, কিন্তু বাড়ির ক্ষেত্রে তা অসম্ভব।’
২০০৮-১০ সালের বিশ্বমন্দার সময় ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায়, ১৮-৪০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রসাধনীর ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এই প্রবণতা বিবাহিত ও অবিবাহিত—সব নারীর মধ্যেই দেখা গেছে।
বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত পরিচর্যা বাজার দ্রুত বাড়ছে।
২০২৩ সালে এর বাজার ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৭ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। আধুনিক যুগে বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। ২০২৪ সালে ওরভেওন ব্র্যান্ডগুলোর ডিজিটাল বিক্রি ২০২২ সালের ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইউটিউব ও টিকটকের নতুন ইনফ্লুয়েন্সাররা কোম্পানিগুলোর ২০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রয় চালাচ্ছেন।
গবেষণায় লিপস্টিক ইফেক্টের তিনটি প্রধান তত্ত্ব পাওয়া গেছে। সবচেয়ে শক্তিশালী হলো মনোবৈজ্ঞানিক প্রতিস্থাপন তত্ত্ব, যেখানে মানুষ ব্যয় সংকোচন করে দামি পোশাক বা অলংকার না কিনে কম খরচে ‘নিজেকে ভালো রাখার’ উপায় খোঁজে।
বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারে উৎসবে নতুন পোশাকের পরিবর্তে প্রসাধনী কেনার প্রবণতা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, আর্থিক অনিশ্চয়তায় নারীরা নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনসঙ্গী খোঁজার সম্ভাবনা বাড়াতে চান। বাংলাদেশের সমাজেও এ প্রবণতা দেখা যায়। তবে গবেষণা বলছে, বিবাহিত নারীরাও একই কারণে প্রসাধনী কেনেন।
আরও পড়ুনপ্রসাধনীতে উচ্চ ভ্যাট বসালে আসলেই কি রাজস্ব বাড়বে০৩ জুন ২০২৫তৃতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার জন্য বা রক্ষার লক্ষ্যে প্রসাধনীর ব্যবহার বাড়ে। তবে এ বিষয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী ও বেকার উভয় নারীর প্রসাধনী ব্যয়ে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি।
সরকার যদি প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধি বাস্তবায়ন করে, তাহলে কয়েকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, অবৈধ আমদানি বাড়বে, সরকার রাজস্ব হারাবে এবং সাধারণ ভোক্তা নিম্নমানের পণ্যের ঝুঁকিতে পড়বে। অনেক অনলাইন উদ্যোক্তা আমদানি করা প্রসাধনী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই শুল্কবৃদ্ধি তাঁদের জন্য ক্ষতিকর হবে।
উচ্চ শুল্ক দেশীয় উৎপাদকদের প্রতিযোগিতাহীন একটি স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ তৈরি করবে, যা মানোন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই পটভূমিতে কিছু বাস্তবসম্মত বিকল্প ভাবা জরুরি। যেমন দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি এবং কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস। পাশাপাশি হালাল সার্টিফিকেশন অর্জনের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোয় রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনকর ফাঁকি না ধরে ভ্যাট বাড়ানোর সহজ রাস্তা কেন? ০৫ জানুয়ারি ২০২৫প্রসাধনীকে সাধারণভাবে একটি ‘নরমাল গুড’ ধরা হয়। আয় বাড়লে এর চাহিদা বাড়ে। কিন্তু মন্দার সময়ও এর চাহিদা কমে না। জেপি মরগানের দীপ্তি নাগুলাপল্লি বলেন, ‘যখন বড় কিছু আপনার নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন আপনি ছোট কিছুতে সান্ত্বনা খুঁজে নেন।’
আন্তর্জাতিক বাজারে এর বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের পারফিউম ও প্রসাধনী বিভাগের মুনাফা ৩ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে চার মাসেই বিউটি স্টোরে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশের বাজারেও প্রসাধনী খাতে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ দেশীয় কোম্পানির হাতে। তাদের বার্ষিক কারবার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন টাকা এবং এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তবে এই খাতে কাঁচামালের ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর, প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম এবং ব্র্যান্ডিং দুর্বল।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, যা বাংলাদেশেও প্রযোজ্য। মন্দার সময় মানুষ প্রসাধনী কেনার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ের একধরনের প্রতীক খোঁজে। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—তিন পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্য প্রসাধনী ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভার্চ্যুয়াল মেকআপ ট্রাই-অন অ্যাপ, ইউটিউব-ইনস্টাগ্রাম রিভিউ, রেটিং ও ‘সোশ্যাল শপিং’ এখন ক্রয়ের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে।
অর্থনৈতিক চাপে থাকা মার্কিনরা ৩০ ডলারের ডিওর লিপ প্লাম্পার কিনলেও বাড়ি বা গাড়ি কেনার কথা ভাবেন না। এই ক্ষুদ্র বিলাসিতা মানসিক চাপ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এবারের বাজেটে প্রসাধনী আমদানিকারকেরা এক গুরুতর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এনবিআর আমদানি করা কসমেটিকসে নতুন মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণের মাধ্যমে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে, যেখানে আগেই এই পণ্যে মোট করভার (টিটিআই) ছিল ১৫৮ থেকে ১৮৩ শতাংশ। অথচ রোলস-রয়েসের (ইলেকট্রিক) ওপর টিটিআই মাত্র ৮৯ শতাংশ।
এমনকি স্যামন, টুনা মাছ, কাপড় ও জুতার ওপর কর হ্রাস করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এসব তথ্যই প্রমাণ করে, আমদানি করা কসমেটিকস ব্যবসায়ীরা জাতীয় বাজেটে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
লিপস্টিক ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, যা বাংলাদেশেও প্রযোজ্য। মন্দার সময় মানুষ প্রসাধনী কেনার মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ের একধরনের প্রতীক খোঁজে। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা—তিন পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রতিযোগিতা উৎকর্ষের জন্ম দেয়। প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি মানে গুণগত উন্নয়নের অনুপস্থিতি। তাই সরকারের উচিত সুরক্ষাবাদী নীতির পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, যা সত্যিকার অর্থেই দেশীয় শিল্পের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে।
নির্মল রায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ