এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করছে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রবিবার (৪ মে) ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভার পাশাপাশি ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) সভাপতি নাদিয়া কালভিনোর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইআইবির চলমান সহায়তা সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইআইবি ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তির অধীনে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ইআইবি প্রায় ৬৩৫ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ, পরিবহন এবং যোগাযোগ খাতে মোট ৬টি চলমান প্রকল্পে। 

যদিও ইআইবির মূল কার্যক্রম ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে কেন্দ্রীভূত, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ইইউর উন্নয়ন সহযোগিতা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো হলো— জলবায়ু, পরিবেশ, অবকাঠামো, এসএমই, উদ্ভাবন এবং দক্ষতা উন্নয়ন।

ইআইবি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো ফ্রেমওয়ার্ক ঋণ অনুমোদন করেছে। এ ঋণের সঙ্গে ইইউ অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দেবে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে— পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস এবং অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করা।

বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অবকাঠামোতে অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যাতে এলডিসি উত্তরণ এবং মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। তিনি ইইউ ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৌশলগত খাতে আরো অনুদানভিত্তিক (ওডিএ) বা সুদ-সুবিধাযুক্ত ঋণ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

অর্থ উপদেষ্টা জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। জেবিআইসি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে প্রকল্প অর্থায়ন, কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং বিনিয়োগ সহযোগিতার মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্য অর্থায়নের মধ্যে আছে ডিএপি-২ সার কারখানা (৭১৫.

৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সম্পূর্ণ পরিশোধিত), ঘোড়াশাল সার কারখানার যন্ত্রপাতি (মিতসুবিশির সরবরাহকৃত) এবং মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ প্রকল্প (২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এডিবির সঙ্গে যৌথ অর্থায়ন)।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া) ইংমিং, ওপেক ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দি এগ্রিকালচার ইনোভেশন মেকানিজম ফর স্কেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাইকেল ক্রিমারের সঙ্গেও বৈঠক করে। সভাগুলোতে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। 

এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলো বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে বৈশ্বিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরো গভীর করবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ