এডিবির বার্ষিক সভার পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা
Published: 5th, May 2025 GMT
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করছে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রবিবার (৪ মে) ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভার পাশাপাশি ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) সভাপতি নাদিয়া কালভিনোর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইআইবির চলমান সহায়তা সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইআইবি ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তির অধীনে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ইআইবি প্রায় ৬৩৫ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ, পরিবহন এবং যোগাযোগ খাতে মোট ৬টি চলমান প্রকল্পে।
যদিও ইআইবির মূল কার্যক্রম ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে কেন্দ্রীভূত, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ইইউর উন্নয়ন সহযোগিতা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো হলো— জলবায়ু, পরিবেশ, অবকাঠামো, এসএমই, উদ্ভাবন এবং দক্ষতা উন্নয়ন।
ইআইবি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো ফ্রেমওয়ার্ক ঋণ অনুমোদন করেছে। এ ঋণের সঙ্গে ইইউ অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দেবে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে— পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস এবং অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করা।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অবকাঠামোতে অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যাতে এলডিসি উত্তরণ এবং মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। তিনি ইইউ ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৌশলগত খাতে আরো অনুদানভিত্তিক (ওডিএ) বা সুদ-সুবিধাযুক্ত ঋণ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
অর্থ উপদেষ্টা জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। জেবিআইসি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে প্রকল্প অর্থায়ন, কৌশলগত অংশীদারত্ব এবং বিনিয়োগ সহযোগিতার মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্য অর্থায়নের মধ্যে আছে ডিএপি-২ সার কারখানা (৭১৫.
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া) ইংমিং, ওপেক ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দি এগ্রিকালচার ইনোভেশন মেকানিজম ফর স্কেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাইকেল ক্রিমারের সঙ্গেও বৈঠক করে। সভাগুলোতে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়।
এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলো বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে বৈশ্বিক আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরো গভীর করবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
ইয়াও ওয়েন আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।’
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভের ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বদা ‘ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে’। তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, থিংকট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞসহ ছয় শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিকস ও ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সংগীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।