ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ‘দখলের’ বিষয়টিও। আজ সোমবার দেশটির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এরই মধ্যে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাসদস্যকে তলব করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অনুমোদন পাওয়া পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা দখল, সেখান দখল করা এলাকাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া।

ইসরায়েলের কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, পরিকল্পনায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ বিষয়টিও রয়েছে। তবে হামলার প্রকৃতি কেমন হবে, তা বলা হয়নি। এ ছাড়া গাজায় নতুন কাঠামোর আওতায় ত্রাণ সরবরাহ চালু করার বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। ওই কাঠামো আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ ওই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর গাজায় আকাশপথে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজারে।

এর আগে গতকাল রোববার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, গাজায় তাঁদের অভিযানের পরিসর বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলব করা হয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল সফরের কথা রয়েছে। এর আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না।

আরও পড়ুনগাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা জাহাজে বোমা হামলা০২ মে ২০২৫

‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’

গাজায় ত্রাণসহায়তা চালু নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় আলোচনার আগে শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সিওস নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, গাজায় ত্রাণসহায়তা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও নতুন একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তা সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য হামাসের কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছাড়াই যেন এ ত্রাণ গাজাবাসীর কাছে সরবরাহ করা যায়।

যুদ্ধবিরতি চলাকালে ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এতে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এ অবরোধের ভয়াবহ পরিণতি গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে ভোগ করতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার ভাষ্য, গাজায় ‘এখনো যথেষ্ট খাবার আছে’।

আজ হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েল যে কাঠামো তৈরি করেছে, তা ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের’ মতো। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা।

আরও পড়ুন২৬ বার ছুরিকাঘাতে ফিলিস্তিনি-মার্কিন শিশুকে হত্যা করা ব্যক্তির ৫৩ বছরের কারাদণ্ড০৩ মে ২০২৫

খাবার ‘লুটেরাদের’ মৃত্যুদণ্ড

গাজায় খাবারের এ সংকটের মধ্যে লুটেরাদের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উপত্যকাটির বিভিন্ন খাদ্যের দোকান ও দাতব্য রান্নাঘরে লুটপাট চালিয়েছে সশস্ত্র কয়েকটি চক্র। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে হামাস। সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

হামাসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই লুটেরাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল–তাওয়াবতা বলেন, কিছু লুটেরা এক গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অন্যরা সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল সরকার।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৮ মাসে দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত০৩ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর মকর ত অন ম দ

এছাড়াও পড়ুন:

বোরো ধানে নামছে চালের দর উত্তাপ সবজির বাজারে

বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে এ জাতের চাল আসতে শুরু করায় সরু বা মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৪ টাকা। গ্রীষ্ম মৌসুমে সরবরাহ কম থাকায় বেশির ভাগ সবজির দর তুলনামূলক বেশি। ফলে দীর্ঘ সময় পর নিত্যপণ্যের বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতাকে ভোগাচ্ছে সবজি। 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা ও নাখালপাড়ার সমিতি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে বোরো ধানের। সরবরাহ বাড়ায় নতুন সরু বা মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৮২ টাকায়। এ মানের পুরোনো চালের কেজি এখনও ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা। মোটা চালের দর কেজিতে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। 

মাঝারি চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬৫ টাকায়। এ মানের চালের কেজিতেও এক-দুই টাকা কমেছে। 
বেশ কয়েক মাস স্থির থাকার পর চালের দর কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. শাওন সমকালকে বলেন, নতুন চালের দাম প্রতি বস্তায় (২৫ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমছে। সরবরাহ বাড়লে আরও কমতে পারে দাম। তবে পুরোনো মিনিকেটের দাম এখনও কিছুটা বেশি। 
সবজি কিনতে গেলে ক্রেতাকে হতাশ হতে হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে অন্তত ৬০ টাকা। কোনোটির দর শতক পার হয়েছে। মাসখানেক ধরে সবজির বাজার চড়া।
বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। গ্রীষ্মের সবজি আসা শুরু হয়েছে। এসব সবজির দর এ সময় কিছুটা বেশি থাকে। 

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। উচ্ছে ও বেগুনের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বরবটি ও কাঁকরোলের মতো গ্রীষ্মকালীন সবজি কিনতে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি খরচ করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া টমেটো ৩০ থেকে ৪০, শসা ৬০ থেকে ৭০ ও গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। কাঁচামরিচের দরও কিছুটা বেড়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। আলুর দর কমেছে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৭ থেকে ২০ টাকায়। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। সেই হিসাবে কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা।

গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের বাজারে কিছুটা চড়াভাব দেখা যায়। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।

মাসখানেক ধরে পেঁয়াজের বাজারও চড়া। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
ডিম-মুরগির দামে অনেকটা স্বস্তি আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দর দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা কম।
প্রায় দুই মাস ধরে ডিমের বাজার ঠান্ডা। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ভ্যানে করে কিছুটা ছোট আকারের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরবরাহ ঠিক করতে সুবিধা বাড়াতে হবে, দাবি ব্যবসায়ীদের
  • সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • এবার কোরবানিযোগ্য প্রাণী ১ কোটি ২৪ লাখ, থাকবে উদ্বৃত্ত: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
  • ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারে দাম কমেছে ১৯ টাকা
  • নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পরিত্যক্ত মালামালে আগুন, বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • বিপুল ব্যয়ের প্রকল্প, তবু পানি মিলছে না
  • গাজায় এখন একবেলার খাবার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব
  • স্বাদে অতুলনীয় ‌‘বর্নির ধুছনির দই’
  • বোরো ধানে নামছে চালের দর উত্তাপ সবজির বাজারে