গাজা ‘দখলসহ’ নতুন যেসব পরিকল্পনা অনুমোদন দিল ইসরায়েল
Published: 5th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ‘দখলের’ বিষয়টিও। আজ সোমবার দেশটির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। এরই মধ্যে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাসদস্যকে তলব করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন। তাঁরা সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেন। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অনুমোদন পাওয়া পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা দখল, সেখান দখল করা এলাকাগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া।
ইসরায়েলের কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, পরিকল্পনায় ‘হামাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলার’ বিষয়টিও রয়েছে। তবে হামলার প্রকৃতি কেমন হবে, তা বলা হয়নি। এ ছাড়া গাজায় নতুন কাঠামোর আওতায় ত্রাণ সরবরাহ চালু করার বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। ওই কাঠামো আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ ওই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর গাজায় আকাশপথে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজারে।
এর আগে গতকাল রোববার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির বলেন, গাজায় তাঁদের অভিযানের পরিসর বাড়ানোর জন্য হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাকে তলব করা হয়েছে। তবে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল সফরের কথা রয়েছে। এর আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে না।
আরও পড়ুনগাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা জাহাজে বোমা হামলা০২ মে ২০২৫‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’
গাজায় ত্রাণসহায়তা চালু নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় আলোচনার আগে শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সিওস নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, গাজায় ত্রাণসহায়তা চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও নতুন একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তা সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য হামাসের কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছাড়াই যেন এ ত্রাণ গাজাবাসীর কাছে সরবরাহ করা যায়।
যুদ্ধবিরতি চলাকালে ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এতে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এ অবরোধের ভয়াবহ পরিণতি গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে ভোগ করতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তবে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার ভাষ্য, গাজায় ‘এখনো যথেষ্ট খাবার আছে’।
আজ হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েল যে কাঠামো তৈরি করেছে, তা ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের’ মতো। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তারা।
আরও পড়ুন২৬ বার ছুরিকাঘাতে ফিলিস্তিনি-মার্কিন শিশুকে হত্যা করা ব্যক্তির ৫৩ বছরের কারাদণ্ড০৩ মে ২০২৫খাবার ‘লুটেরাদের’ মৃত্যুদণ্ড
গাজায় খাবারের এ সংকটের মধ্যে লুটেরাদের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই উপত্যকাটির বিভিন্ন খাদ্যের দোকান ও দাতব্য রান্নাঘরে লুটপাট চালিয়েছে সশস্ত্র কয়েকটি চক্র। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে হামাস। সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই লুটেরাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল–তাওয়াবতা বলেন, কিছু লুটেরা এক গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অন্যরা সংঘবদ্ধ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল সরকার।
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৮ মাসে দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত০৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর মকর ত অন ম দ
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।