নানা আলোচনার মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলছে, এই কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা দরকার।

একই সঙ্গে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি বলে এনসিপি মনে করে।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে এনসিপি। দলের পক্ষ থেকে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এনসিপির অবস্থান’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করে। এর মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল তাদের প্রস্তাব পেশ করে। এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আওতাভুক্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঐকমত্য কমিশনের আওতায় ছিল না। ফলে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পূর্ব আলোচনা বা মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়নি। দেখা যাচ্ছে, নারীবিষয়ক এই কমিশনের প্রস্তাবকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন মাত্রার আলোচনা ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানিয়ে এবং সব নাগরিকের বিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নীতি প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নারীবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারী মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।’

নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবের সমালোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ থেকে নারীদের প্রতি প্রকাশ্যে যে শ্লেষাত্মক ও অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, বিশেষত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের ফলে ১৫ বছরের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদ থেকে জাতির মুক্তি ঘটেছে। এই ইতিহাসকে আমরা ভুলব না। এনসিপি নারীদের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সামাজিক সংগ্রামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নারীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এনসিপি ঐক্যবদ্ধ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন দিন: গোলাম পরওয়ার

জুলাই সন‌দের ভি‌ত্তি‌তে নির্বাচন আয়োজনের জন‌্য ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হি‌সে‌বে প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তি‌নি বলেন,“এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সবচাইতে উপযুক্ত সরকার। যেহেতু আপনি (ড. ইউনূস) ঐকমত্য কমিশনের প্রধান। কোনো সংকট তৈরি না করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আপনি নির্বাচন ‌দিন।”

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত

একবার হ‌লেও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়া‌ত

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে দ‌লের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর কর্তৃক পাঁচ গণদাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

গোলাম পরওয়ার বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বরাবরই চেয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাব খাটানোর ফলে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না।”

“আমরা দাবি করেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। ৫ আগস্ট ড. ইউনূস জুলাই ঘোষণা পেশ করেছিলেন। সেই ড্রাফটটা একটা বিশেষ মহলের প্ররোচণায় পড়ে জনআকাঙ্ক্ষাবিরোধী অনেক কিছু উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা সেটা সংশোধন করতে বলেছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন করা না হয়, তবে দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি কথা দিয়েছিলেন যে আমরা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সবটাই সংস্কার করব। কিন্তু যারা এখনই বলতে পারে যে আমরা আগামী সরকারে এসে সেটা মুছে দেব, আমরা জানি না কে আসবে, কিন্তু এই কথার মধ্যে দুরভিসন্ধি কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেকেই আমাদের বলছেন আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও কেন আপনারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। তার কারণ আলোচনা করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোনো কিছুর চাপের মুখে সরকার এক শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। জরিপে ৭০ শতাংশ জনগণ বলেছে, তারা পিআরের পক্ষে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, গণভোট দিন। জনগণ যদি পিআর মানে, আপনাদেরও মানতে হবে। না মানলে জনগণ যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তা মেনে নেব।”

সমা‌বে‌শে বক্তব‌্য রা‌খেন সমা‌বেশ শে‌ষে বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল বের ক‌রেন দল‌টির নেতাকর্মীরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এ সময় দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে
  • জামায়াতসহ সাতটি দলের আন্দোলনে এনসিপি কেন নেই, জানালেন নাহিদ
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা
  • আমরা আশাবাদী একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব: বদিউল আলম মজুমদার
  • ঐকমত্যের জন্য আর কতকাল অপেক্ষা
  • জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন দিন: গোলাম পরওয়ার