মহাসড়কে তিন চাকার অটোরিকশা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে উল্টো পথে দাপটের সহিত চলছে ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা বা  ইজিবাইক।

এতে একদিকে সড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এই গাড়িগুলো চলাচল করছে। গত ছয় মাসে মহাসড়কে অটোরিকশা দূর্ঘটনায় অর্ধ্বশতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছেনা হাইওয়ে পুলিশের।

সবশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে উল্টো পথে আসা ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-ছেলে সহ তিনজন নিহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন- গাইবান্ধার সুনামগঞ্জ থানার আশরাফুল আলমের স্ত্রী কাকলি (৩৫), ছেলে আরিয়ান আহম্মেদ রাফি (৫) ও রংপুরের পীরগাছা থানার আব্দুল ওহাবের ছেলে অটোরিকশা চালক আনিসুর রহমান (২৩)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছিল, মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে দ্রুতগতিতে হিমালয় পরিবহনের একটি বাস আসছিল। একই সময় উল্টো পথে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যাচ্ছিল। এ সময় মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশা চালকসহ অটোরিকশায় থাকা মা- ছেলের মৃত্যু হয়।

এদিকে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে দায়ী করছেন পথচারীরা। অনেকেই বলছেন পুলিশের রহস্যজনক উদাসিনতা ও জনসচেতনার অভাবে মহাসড়কে অটোরিকশার দৌরাত্ব্য বেড়েছে। 

সোমবার (৫ মে) সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, সানাড়পাড়, মৌচাক, চিটাগাং রোড শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুর সেতুর উভয়পাশে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়ক জুড়ে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে। বেশির ভাগই আবার চলছে উল্টো পথে।

অটো চালকরা ঝুঁকিপুর্ণভাবে যাত্রীদের পরিবহন করছে এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও নারী-পুরুষ-শিশু যাত্রীরা নিরুপায়। 

ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী একটি বাসের চালক জয়নাল বলেন, সরকার ও উচ্চ আদালত মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করলেও এই এলাকায় কোনো প্রশাসন আছে বলে মনে হয় না। এসব ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার কারণে আমাদের ধীরগতিতে চলতে হয়। 

মহাসড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য এই অটোরিকশাকে দায়ী করে হানিফ পরিবহনের চালক লিটন বলেন, মহাসড়কে বড় বড় যানবাহন চলাচল করে কিন্তু এই অটোরিকশা হঠাৎ হঠাৎ বড় যানবাহনের সামনে এসে পড়লে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। 

গার্মেন্ট শ্রমিক রেদোয়ান বলেন, আমি একদিন কাজ থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে পেছন থেকে একটি অটোরিকশা আমার গায়ের উপরে উঠে যায় যার ফলে আমার হাত ভেঙে যায় এবং আমি প্রায় তিন মাস চিকিৎসা দিন ছিলাম। 

সানাড়পাড় এলাকার বাসিন্দা জুনায়েদ বলেন, মহাসড়কে ছোট ছোট এসব যানবাহনের কারণে আমরা সব সময় সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকি। থানা ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সখ্য করেই গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে এগুলো চলাচল করছে।

রমজান মিয়া নামের একজন অটোরিকশাচালক বলেন, মাঝে মধ্যে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। কিছু কিছু রিকশা ডাম্পিং করে। পরে পুলিশকে ম্যানেজ করে আবার রিকশা চালাই।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মহাসড়কে উল্টো পথে ব্যাটারি চালিত অটো রিকসার চলাচল বন্ধ না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনো সময়। এতে প্রাণহানী ঘটনার আশংকা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সহিত সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা উচিৎ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ টিআই নাইম বলেন, কোনো অনিয়মের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ জড়িত নেই। প্রতিদিনই এসব অযান্ত্রিক যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। ১০/১৫ টি আটক করে জরিমানা ও রেকারিং করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মহাসড়কে এদের চলাচল অনেক কমে আসছে। আশা করি মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ দ র ঘটন র হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ বছর পর দেশে আসছেন ডা. জোবাইদা 

দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি লন্ডন থেকে রওনা হন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণের কথা রয়েছে।

জোবাইদা রহমান দেশের মাটিতে পা রাখার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি থাকায় জোবাইদাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। তবে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান।

 গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ এবং ধানমন্ডিতে জোবাইদা রহমানের বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবন’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর আগে লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে হিথরো বিমানবন্দরে যান। একই গাড়িতে দাদির পেছনে বসা ছিলেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। সেখানে আগে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে ঢাকায় বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে স্বাগত জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

প্রস্তুত ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’
দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন ডা. জোবাইদা রহমান। দেশে ফিরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাবার বাসা মাহবুব ভবনে উঠবেন। সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় কারাবন্দি থাকা অবস্থায় নির্যাতনে তারেক রহমান গুরুতর আহত হন। পরে নানা মহলের চাপে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। সঙ্গে যান স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমান। এরপর থেকে লন্ডনে নির্বাসিত তারা। 

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, ডা. জোবাইদার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির চারপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকবেন সিএসএফ সদস্য, সঙ্গে থাকবেন পুলিশ সদস্যরাও। 

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার গত ৩০ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই চিঠিতে গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় আর্চওয়ে ও পুলিশ পাহারার দাবি জানানো হয়। এর পরপরই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা মাহবুব ভবন পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেন। এখন ওই ভবনে বাস করছেন জোবাইদার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, বড় বোন শাহীনা জামান ও তাঁর পরিবার। 

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডন যান। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ দিন চিকিৎসার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে ২৫ জানুয়ারি তাঁকে তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ